অবসরের বয়স নিয়ে আপত্তি শিক্ষা দফতরেই

রাজ্যে শিক্ষকদের অবসরের বয়স বাড়ানোর জন্য মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ইচ্ছা প্রকাশ করলেও এ বিষয়ে আপত্তি জানাতে শুরু করলেন শিক্ষা দফতরের কর্তারা।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০১ নভেম্বর ২০১৬ ০৪:০০
Share:

রাজ্যে শিক্ষকদের অবসরের বয়স বাড়ানোর জন্য মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ইচ্ছা প্রকাশ করলেও এ বিষয়ে আপত্তি জানাতে শুরু করলেন শিক্ষা দফতরের কর্তারা। তাঁদের স্পষ্ট বক্তব্য, মুখ্যমন্ত্রীর এই প্রস্তাব বাস্তবসম্মত নয়। একে তো এতে নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হবে না। তা ছাড়া রাজ্য এ পথে হাঁটতে চাইলে প্রশ্ন তুলতে পারে কেন্দ্রও।

Advertisement

শুধু শিক্ষা দফতরই নয়, মমতার এ হেন প্রস্তাব নিয়ে রাজনৈতিক প্রশ্নও উঠতে শুরু করেছে দলের মধ্যে। যদিও মুখ্যমন্ত্রীকে সরাসরি পরামর্শ দেওয়ার ঝুঁকি তৃণমূলের কেউ এখনও নেননি। তবে দলের এক শীর্ষ নেতার সরস মন্তব্য, ‘‘বাম জমানায় স্কুল-কলেজে এনতার নিজেদের লোক ঢুকিয়েছিল সিপিএম। শিক্ষকদের অবসরের মেয়াদ বাড়ানোর অর্থ সিপিএমের ওই নেতা-সমর্থকদের সুবিধা পাইয়ে দেওয়া।’’

প্রসঙ্গত, রবিবার সন্ধেয় নিজের কালীঘাটের বাড়িতে ঘরোয়া আলোচনায় মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছিলেন, শিক্ষকদের অবসরের বয়স বাড়িয়ে ৭০ করতে চান। কারণ, বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে শিক্ষকদের অভিজ্ঞতাও বাড়ে। ৬০ বছরের পরেও অধিকাংশ শিক্ষক পড়ানোর ক্ষমতা রাখেন। তাঁদের সেই অভিজ্ঞতা বিফলে যাবে কেন? মুখ্যমন্ত্রী যখন এই কথাগুলি বলেন তাঁর পাশেই বসেছিলেন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। যদিও পার্থবাবু পরে দলীয় মহলে জানান, তাঁর সঙ্গে আলোচনা করে মুখ্যমন্ত্রী এই প্রস্তাব দেননি। তবে প্রকাশ্যে এ ব্যাপারে এখনই কোনও মন্তব্য করতে চাননি তিনি।

Advertisement

এই নিয়ে পার্থবাবু এখনই কিছু না বললেও, মমতার এমন প্রস্তাবে আপত্তি জানাতে শুরু করেছেন শিক্ষা দফতরের কর্তারাই। দফতরের এক শীর্ষ কর্তার বক্তব্য, ‘‘রাজ্য সরকারের কোনও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষকদের অবসরের বয়স ৭০ করার সুপারিশ এখনও পর্যন্ত কোনও কেন্দ্র করেনি। অবসরের বসয় বাড়াতে হলে প্রাথমিক ভাবে ৬০ থেকে বাড়িয়ে ৬৫ করা যেতে পারে।’’ একমাত্র কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষেত্রে শিক্ষকদের অবসরের বয়স ৬৫ থেকে আরও পাঁচ বছর বাড়ানোর সংস্থান রয়েছে। কিন্তু স্কুলস্তরে সেই নিয়ম চালু করলে যুব সম্প্রদায়ের কর্মসংস্থানের কী হবে?

দফতরের আর এক কর্তার মতে, ‘‘শিক্ষার বিষয়টি সংবিধানের যৌথ তালিকাভুক্ত। তাই শিক্ষা খাতে খরচের বহর অনেকটা কেন্দ্রও বহন করে। কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকদের ক্ষেত্রে নতুন বেতন কমিশনের বর্ধিত অংশের ৭০ শতাংশেরও বেশি দেয় কেন্দ্র। তাই কত জন শিক্ষক এর আওতায় পড়ছেন, তা কেন্দ্রকে জানাতে হয় রাজ্যকে।’’ সে জন্যই ইচ্ছে মতো রাজ্য যে কোনও সময়ে কর্মীদের চাকরির মেয়াদ বাড়াতে পারে না বলে অভিমত দফতরের অনেকের।

সংশ্লিষ্ট ওই কর্তা এ-ও বলছেন, বাস্তব হল রাজ্যের এখন ভাঁড়ে মা ভবানী অবস্থা! মুখ্যমন্ত্রী দেখছেন, নতুন শিক্ষক নিয়োগ করলে আদতে বেতন-পেনশন বাবদ দেড় জনের মাইনে গুণতে হবে। যিনি অবসর নেবেন, তাঁকে পেনশন দিতে হবে, এবং ওই শূণ্যস্থান পূরণ করলে নব নিযুক্তকে বেতন দিতে হবে। তুলনায় অবসরের মেয়াদ বাড়ালে রাজকোষে ধাক্কা লাগবে কম। কিন্তু এই প্রস্তাব বাস্তবায়ন করা সহজ নয়, বরং বিরোধিতার সম্ভাবনাই বেশি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন