২৫শের সওয়াল নিয়েও গয়ংগচ্ছ কমিশন

গত মঙ্গলবার সুপ্রিম কোর্টে আইনজীবী না-পাঠিয়ে সাত পুরসভার ভোটে স্থগিতাদেশের পথ প্রশস্ত করার অভিযোগ উঠেছিল রাজ্য নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে। আগামী সোমবার শীর্ষ আদালতে সেই মামলার শুনানিকেও যে তারা বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছে না, তা স্পষ্ট হল। কমিশন সূত্রে খবর, আদালত যে হেতু সোমবার কমিশনকে হাজির হয়ে তাদের বক্তব্য জানাতে বলেছে, সে হেতু এক জন আইনজীবী আজ শুক্রবারের মধ্যে ওকালতনামা জমা দেবেন। কিন্তু সিনিয়র কোনও আইনজীবী কমিশনের হয়ে সওয়াল করবেন কি না, তা বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ঠিক হয়নি। হাইকোর্টে কমিশনের হয়ে মামলা লড়া নয়নচাঁদ বিহানী এ দিন বলেন, ‘‘আমাকে সুপ্রিম কোর্টে যাওয়ার কথা কেউ বলেনি। কোনও কাগজপত্রও আমি পাইনি।’’

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি ও কলকাতা শেষ আপডেট: ২২ মে ২০১৫ ০৩:৫৬
Share:

গত মঙ্গলবার সুপ্রিম কোর্টে আইনজীবী না-পাঠিয়ে সাত পুরসভার ভোটে স্থগিতাদেশের পথ প্রশস্ত করার অভিযোগ উঠেছিল রাজ্য নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে। আগামী সোমবার শীর্ষ আদালতে সেই মামলার শুনানিকেও যে তারা বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছে না, তা স্পষ্ট হল।

Advertisement

কমিশন সূত্রে খবর, আদালত যে হেতু সোমবার কমিশনকে হাজির হয়ে তাদের বক্তব্য জানাতে বলেছে, সে হেতু এক জন আইনজীবী আজ শুক্রবারের মধ্যে ওকালতনামা জমা দেবেন। কিন্তু সিনিয়র কোনও আইনজীবী কমিশনের হয়ে সওয়াল করবেন কি না, তা বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ঠিক হয়নি। হাইকোর্টে কমিশনের হয়ে মামলা লড়া নয়নচাঁদ বিহানী এ দিন বলেন, ‘‘আমাকে সুপ্রিম কোর্টে যাওয়ার কথা কেউ বলেনি। কোনও কাগজপত্রও আমি পাইনি।’’

সুপ্রিম কোর্টে রাজ্য সরকারের হয়ে মামলা লড়ছেন দুই দুঁদে আইনজীবী কপিল সিব্বল ও সলমন খুরশিদ। তাঁদের বিরুদ্ধে সমান ওজনের কোনও আইনজীবী দাঁড় না-করালে তড়িঘ়ড়ি পুরভোট করানোর বিষয়টি আদালতের সামনে যথাযথ ভাবে তুলে ধরা যাবে কি না, তা নিয়ে কমিশনের অন্দরেই সন্দেহ রয়েছে।

Advertisement

শুধু আইনজীবী নিয়োগের প্রশ্নে ধোঁয়াশাই নয়, সুপ্রিম কোর্টে মামলার তদ্বির করতে দিল্লিও যাচ্ছেন না কমিশনের কোনও বড় কর্তা। এক বড়বাবুকে পাঠিয়েই দায়িত্ব সেরে ফেলা হচ্ছে। যদিও কমিশনের এক কর্তার মন্তব্য, ‘‘আদালতে তো সওয়াল করবেন আইনজীবী। মামলার ফাইলপত্র নিয়ে কমিশনের কোনও প্রতিনিধিকে দিল্লিতে পাঠাতে হবে। বড়বাবুই সেই কাজ করতে পারবেন।’’

অথচ মীরা পাণ্ডের আমলে যখন শিরদাঁড়া সোজা করে রাজ্য সরকারের অনৈতিক সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে লড়াই করেছিল কমিশন, তখন তাদের হয়ে হাইকোর্ট এবং সুপ্রিম কোর্ট দু’জায়গাতেই সওয়াল করেছিলেন বিশিষ্ট আইনজীবী সমরাদিত্য পাল। মামলার তদারকি করতে নিজে দিল্লি গিয়েছিলেন মীরা দেবী। সঙ্গে ছিলেন কমিশনের সচিব তাপস রায়। ফলে বিরোধীদের অভিযোগ, বর্তমান রাজ্য নির্বাচন কমিশনার যে শাসক দলের হাতের পুতুল হয়ে তাদের সুবিধা করে দিতেই কাজ করছেন, একের পর এক ঘটনাই তার প্রমাণ।

কমিশন কেন নামজাদা কোনও আইনজীবী দাঁড় করাচ্ছে না? কমিশনের কর্তারা মুখে কুলুপ আঁটলেও সূত্রের খবর, তাদের হয়ে সুপ্রিম কোর্টে সওয়াল করার জন্য প্রথমে মীনাক্ষী অরোরার নাম উঠেছিল। অরোরা সুপ্রিম কোর্টে জাতীয় নির্বাচন কমিশনের হয়ে সওয়াল করেন। দু’বছর আগে পঞ্চায়েত ভোট নিয়ে মামলাতেও তিনি রাজ্য নির্বাচন কমিশনের হয়ে সুপ্রিম কোর্টে সওয়াল করেছিলেন। কিন্তু সোমবার, ২৫ মে অরোরা দিল্লিতে থাকছেন না।

বিরোধীরা রাজ্য নির্বাচন কমিশনার সুশান্তরঞ্জন উপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে খড়্গহস্ত হলেও কমিশন সূত্রের দাবি, হাইকোর্টের নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করে রাজ্য সুপ্রিম কোর্টে যে স্পেশাল লিভ পটিশন দাখিল করেছে, সোমবার তার বিরুদ্ধেই সওয়াল করা হবে। কমিশনের একটি সূত্র বৃহস্পতিবার বলেন, ‘‘আমরা চাইব, যত শীঘ্র সম্ভব সাতটি পুরসভার নির্বাচন করা হোক।’’ কিন্তু ঘটনা হল, হাইকোর্ট যে সময়সীমা বেঁধে দিয়েছিল, তার মধ্যে আর ভোট করানো সম্ভব নয়। হাইকোর্ট তার রায়ে ১৬ জুনের মধ্যে ভোটপ্রক্রিয়া শেয করতে বলেছিল। ওই দিন ভোটগণনা হবে ধরে ১৪ জুন ভোট করাতে বলেছিল কমিশন। কিন্তু সে জন্য ২০ মে-র মধ্যে বিজ্ঞপ্তি জারি করতে হতো। বিরোধীদের বক্তব্য, গত মঙ্গলবার কমিশনের আইনজীবী উপস্থিত থাকলে সুপ্রিম কোর্ট হয়তো হাইকোর্টের রায়ের উপরে স্থগিতাদেশ দিত না। এখন যা পরিস্থিতি তাতে কমিশনের প্রস্তাবমতো সাতটি পুরসভায়, না রাজ্য সরকারের প্রস্তাবমতো সংযুক্তিকরণের পরে তিনটি পুরসভার নির্বাচন হবে— তা ঠিক করবে সুপ্রিম কোর্ট। রাজ্য সরকার চায়, বিধাননগরের সঙ্গে রাজারহাট-গোপালপুর পুরসভাকে জুড়ে একটি নিগম হোক। আসানসোল পুর নিগমের সঙ্গে জামুড়িয়া, রানিগঞ্জ এবং কুলটি পুরসভাকে মিশিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্তও নিয়েছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার। বালি পুরসভাকে মিলিয়ে দেওয়া হচ্ছে হাওড়া পুরসভার সঙ্গে।

এ ছাড়াও পুরসভার ভোটের দিনক্ষণ ঠিক করার অধিকার আসলে কার, সেই বিষয়টি নিয়েও সওয়াল-জবাব হওয়ার কথা সুপ্রিম কোর্টে। হাইকোর্টে যিনি পুরসভার ভোট নিয়ে জনস্বার্থ মামলা করেছিলেন, সেই প্রণয় রায়ের আইনজীবী মঙ্গলবারই সুপ্রিম কোর্টে এই প্রশ্ন তুলেছিলেন। কিন্তু কমিশনের আইনজীবী না-থাকায় সওয়াল-জবাব হয়নি।

তবে কমিশনের গয়ংগচ্ছ মনোভাবের জেরে তাদের সওয়াল কতটা জোরদার হবে, সন্দেহ থাকছেই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন