সব নাগরিকের অধিকার সুরক্ষিত করতে এনআরসি-কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে রাজ্য সরকার।—ফাইল চিত্র।
অসমের মতো না-হলেও এনআরসি বা নাগরিক পঞ্জি নিয়ে কমবেশি উদ্বেগ রয়েছে পশ্চিমবঙ্গেও। বৈধ নথি থাকা সত্ত্বেও এখানে অন্তত ৫০০ নাগরিকের নাগরিকত্ব প্রশ্নের মুখে পড়েছে। মানবিকতার প্রশ্নে সেই সব নাগরিকের অধিকার সুরক্ষিত করতে এনআরসি-কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে রাজ্য সরকার।
নাগরিক পঞ্জি তৈরির প্রক্রিয়ায় পশ্চিমবঙ্গের প্রায় এক লক্ষ ১৫ হাজার বাসিন্দার দাখিল করা নথি যাচাইয়ের জন্য রাজ্য প্রশাসনের কাছে পাঠিয়েছিলেন এনআরসি-কর্তৃপক্ষ। এ-পর্যন্ত প্রায় ৪০ হাজার নথি যাচাই করে কর্তৃপক্ষের কাছে ফেরত পাঠিয়েছে বিভিন্ন জেলা প্রশাসন। কিন্তু বেশ কয়েকটি জেলার প্রশাসন অন্তত ৫০০ বাসিন্দার নাগরিক নথি নিয়ে বিপাকে পড়েছে।
প্রশাসনিক সূত্রের খবর, ও-পার বাংলার অনেক মানুষ ১৯৭১ সালের ২৪ মার্চ পর্যন্ত উত্তর ২৪ পরগনা ও নদিয়া সীমান্ত দিয়ে এ দেশে এসেছিলেন। সীমান্ত পেরোনোর সময় তাঁদের একটি করে সার্টিফিকেট বা নথি দিয়েছিল রাজ্যের উদ্বাস্তু দফতর। পরবর্তী সময়ে সেই সার্টিফিকেট বা শংসাপত্রের ভিত্তিতেই তাঁদের নাগরিক হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছিল। নিয়ম অনুযায়ী সেই সব নথি বৈধ কি না, তা যাচাইয়ের জন্য রাজ্য সরকারের কাছে পাঠিয়েছিলেন এনআরসি-কর্তৃপক্ষ। কিন্তু কয়েকটি জেলার প্রশাসনিক সূত্রের খবর, সেই সব নথিপত্রের প্রতিলিপির কোনও অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি।
এই পরিস্থিতিতে এনআরসি-কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে রাজ্য সরকার। মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে ওই নাগরিকদের নথি-সমস্যার বিষয়টি বিবেচনার অনুরোধ করেছে তারা। জেলা প্রশাসনের এক কর্তা বলেন, ‘‘স্বাধীনতার পর থেকে বিভিন্ন সময়ে এই ধরনের সরকারি সার্টিফিকেট বা শংসাপত্রের কাঠামো বদলেছে। ফলে সব শংসাপত্র এক রকম না-হওয়াই স্বাভাবিক। যদিও সেগুলির সবই বৈধ। সংশ্লিষ্ট বাসিন্দাদের নাগরিকত্ব নিয়েও প্রশ্ন ওঠার কিছু নেই। এনআরসি-কর্তৃপক্ষ নিশ্চয়ই পুরো বিষয়টি সহানুভূতির সঙ্গে বিবেচনা করবেন।’’
আমলা শিবিরের একাংশের ব্যাখ্যা, ‘বেঙ্গল রেকর্ডস ম্যানুয়াল-১৯৪৩’ অনুযায়ী জমি সংক্রান্ত নথি চিরকাল সুরক্ষিত রাখতে হয়। কিছু নথি বাধ্যতামূলক ভাবে সংরক্ষণের মেয়াদ সর্বাধিক ১২ বছর। আবার কিছু নথি দু’বছর পরে না-রাখলেও চলে। সেই রীতিতে সীমান্ত পেরোনোর নথি সংরক্ষণের মেয়াদ শেষ হয়ে গিয়েছে বলেই ৫০-৬০ বছরের পুরনো কাগজগুলি আর পাওয়া যাচ্ছে না।