খোশমেজাজে: সাগরে উমা ভারতী। নিজস্ব চিত্র
গঙ্গা নিয়ে গুরুত্ব দিচ্ছে না রাজ্য সরকার। গঙ্গাদূষণ এবং ভাঙন রোধে নতুন করে নেওয়া নমামী গঙ্গে প্রকল্পে তিন বছর ধরে অগ্রাধিকারের তালিকা তৈরি করে তা কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে পাঠানো হয়নি। শনিবার সাগরে এসে এ রকমই অভিযোগ করলেন কেন্দ্রীয় জলসম্পদ ও নদী উন্নয়নমন্ত্রী উমা ভারতী। তবে উমাদেবীর এই দাবি খারিজ করেছেন রাজ্যের সেচমন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়।
এ দিন সাগর থেকে ফেরার পথে উমা বলেন, ‘‘গত তিন বছর ধরে আমরা রাজ্য সরকারকে বলে আসছি, গঙ্গাকে ঘিরে বিভিন্ন প্রকল্পের অগ্রাধিকার তালিকা কেন্দ্রের কাছে পাঠাতে। তা হয়নি। রাজ্য সরকার তালিকা তৈরি না করলে এ বার আমরাই এ রাজ্যে গঙ্গা উন্নয়নের অগ্রাধিকারের তালিকা তৈরি করে কাজ করব।’’ নমামী গঙ্গে প্রকল্পে বেশ কিছু নতুন কাজের সমীক্ষা করতেই পরিদর্শন যাত্রা শুরু করেছেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী। শুক্রবার ব্যারাকপুর থেকে শুরু করেছেন। শনিবার গিয়েছিলেন গঙ্গাসাগরে। তার আগে কাকদ্বীপের লট ৮ ঘাট এবং হারউড পয়েন্ট ঘাট ঘুরে দেখেন। তাঁর কথায়, ‘‘যাত্রীরা অভিযোগ করেছেন, ভাল শৌচাগার নেই। বিশ্রামাগার নেই। অনেকক্ষণ রোদে দাঁড়িয়ে থাকতে হচ্ছে তাঁদের।’’
কেন্দ্রীয় দু’টি দফতরের সঙ্গেই গঙ্গা নিরাময় (গঙ্গা রিজুভেনেশন) মন্ত্রকটিও তাঁর দায়িত্বে এসেছে। কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর দাবি, তাঁরা অগ্রাধিকার হিসেবে ব্যারাকপুর, বেলুড়, দক্ষিণেশ্বর, গঙ্গাসাগরে সাধারণ মানুষের জন্য শৌচাগার, বিশ্রামাগার, পানীয় জলের সুবিধার মতো বেশ কিছু প্রকল্প চালু করতে চান। কিন্তু এ জন্য কেন্দ্র-রাজ্য মন্ত্রী পর্যায়ে বৈঠক হওয়া জরুরি। তাঁর কথায়, ‘‘বেশ কয়েক দিন থেকে এ সব নিয়ে মন্ত্রীপর্যায়ে সমন্বয় বৈঠকও হচ্ছে না। একবার আমিই আসতে পারিনি। এ বার এসে আমি মুখ্যমন্ত্রীর কাছে বৈঠকের বার্তা পাঠিয়েছি। দেখা যাক কী হয়।’’
সাগরে গঙ্গাদূষণ এবং ভাঙন রোধে একটি ছোট্ট প্রচার অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, ‘‘গঙ্গা বেশ কয়েকটি রাজ্যের মানুষের রুটিরুজি এবং মোক্ষলাভের উপায়। এটাকে বাঁচাতে সকলের সাহায্য চাই।’’ উমা এ দিন কপিল মুনির আশ্রমে পুজো দেন, স্নানও সারেন। কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর দাবি খারিজ করে রাজ্যের সেচমন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘বিষয়টি একেবারেই ঠিক নয়, বরং রাজ্য সরকারই বেশ কয়েকটি প্রকল্পের টাকা পাচ্ছে না। কয়েকটি প্রকল্প নিয়ে বার বার কেন্দ্রীয় মন্ত্রকের দৃষ্টি আকর্ষণ করার পরেও লাভ হয়নি।’’ রাজীববাবুর কথায়, ‘‘বার বার বলার পরেও গঙ্গা নিয়ে বঞ্চনা করছে কেন্দ্রীয় সরকার। কেন্দ্র টাকা না দেওয়ায় ভাঙন রোধে বেশ কিছু প্রকল্প রাজ্য সরকারই নিজের টাকায় করেছে। দূষণ রোধ এবং সৌন্দর্যায়ন নিয়েও নগরোন্নয়ন দফতর কেন্দ্রের অপেক্ষায় না থেকে ভাল কাজ করছে। তাই সাগরে এসে ওঁর এ সব বলার যুক্তি হয় না।’’
ডায়মন্ড হারবার থেকে সহ প্রতিবেদন: এ দিন ডায়মন্ড হারবারেও সভা করেন উমা। সেখানে বলেন, ‘‘কারখানার বর্জ্য পড়ে দূষিত হচ্ছে গঙ্গা। বহু বিরল প্রজাতির মাছও নষ্ট হচ্ছে। গঙ্গা দূষণ রোধে ২০ হাজার কোটি টাকা অনুমোদন করেছে সংশ্লিষ্ট দফতর। কাজ শুরুও হয়েছে।’’