প্রশ্ন বিরোধীদের

প্রতিবাদের রোষ কমাতে এ কেমন বিল

প্রতিবাদের নামে ভাঙচুর বন্ধ করতে কড়়া আইনের হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর সেই ঘোষণা অনুযায়ীই বিধানসভার আসন্ন বাজেট অধিবেশনে এই সংক্রান্ত বিল পেশ করতে চলেছে রাজ্য সরকার।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০১ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ ০৩:০৫
Share:

প্রতিবাদের নামে ভাঙচুর বন্ধ করতে কড়়া আইনের হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর সেই ঘোষণা অনুযায়ীই বিধানসভার আসন্ন বাজেট অধিবেশনে এই সংক্রান্ত বিল পেশ করতে চলেছে রাজ্য সরকার। এমনকী, ভাঙড়, আউশগ্রাম বা বোলপুরের ঘটনার পরে বিষয়টির গুরুত্ব বোঝাতে রাজ্য বাজেট পেশ হওয়ার আগেই সম্পত্তি নষ্টে জরিমানা আদায়ের বিল আনা হচ্ছে অধিবেশনে! বিরোধীরা অবশ্য সাফ জানিয়ে দিয়েছে, সরকারের মনোভাবের সঙ্গে তারা সহমত নয়। তা ছাড়া, জনতার রোষে ভাঙচুরের ঘটনা ঘটলে অপরাধী চিহ্নিত হবে কী ভাবে, সেই প্রশ্নও থাকছে।

Advertisement

সরকারি সূত্রের খবর, সিদ্ধার্থশঙ্কর রায়ের আমলের ‘দ্য ওয়েস্ট বেঙ্গল প্রিভেনশন অফ ডিফেসমেন্ট অফ প্রপার্টি অ্যাক্ট’ এ বার সংশোধন করতে চলেছে মমতার সরকার। আগের আইনে যেখানে সম্পত্তি নষ্টের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ৬ মাসের জেল এবং এক হাজার টাকা জরিমানার কথা ছিল, সংশোধনী বিলে সে ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ৭ বছর কারাদণ্ডের সংস্থান থাকবে। আর নির্দিষ্ট টাকার অঙ্কে জরিমানা না রেখে ক্ষতিগ্রস্ত সম্পত্তির বাজারমূল্য ‘অপরাধী’র সম্পত্তি থেকে আদায় করার কথা বলা হবে।

রাজ্যপালের ভাষণের উপরে বিতর্ক শেষে আগামী ৮ ফেব্রুয়ারি বিলটি বিধানসভায় পেশ হতে পারে বলে মঙ্গলবার পরিষদীয় মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় জানিয়েছেন। অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র বাজেট পেশ করবেন আগামী ১০ তারিখ।

Advertisement

বিরোধীরা তো বটেই, প্রশাসনিক মহলের একাংশও অবশ্য প্রশ্ন তুলছে, বহু ক্ষেত্রেই থানা, সরকারি দফতর বা রাস্তায় থাকা বাস-ট্রাম ভাঙচুর হয় মারমুখী জনতার হাতে। সাম্প্রতিক কালে বিভিন্ন জেলায় ছোট-বড় দুঘর্টনা ঘিরেও বারবার এমন তাণ্ডব ঘটেছে। এই ধরনের ঘটনায় কে প্রকৃত অপরাধী, তা খুঁজে বার করার পদ্ধতি নিয়েই প্রশ্ন রয়েছে সংশ্লিষ্ট মহলের। প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেসের এক বিধায়কের কথায়, ‘‘ধরা যাক, আমরা কোনও ধর্মঘট বা রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ করছি। সেখানে ভিড়ের মধ্যে থেকে কেউ ঢিল ছুড়ে বাসের কাচ ভেঙে দিল। তখন কী প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরীর সম্পত্তি থেকে জরিমানা আদায় হবে? বাস্তবে এ রকম হয় নাকি?’’

পরিষদীয় মন্ত্রী পার্থবাবু শুধু বলেছেন, ‘‘আমরা আইন করি। কিন্তু নিজেরাই আইনের প্রতি দায়বদ্ধ থাকি না। মুখ্যমন্ত্রী চাইছেন, আন্দোলন-প্রতিবাদ যা-ই হোক, সকলেই যেন দায়বদ্ধ থাকে।’’ মুখ্যমন্ত্রী নিজেই অবশ্য বলেছেন, এখন প্রযুক্তি ও সোশ্যাল মিডিয়ার যুগে ‘কোথায় কে কী করছে’, সব জানতে পারা যায়! তাই ভাঙচুরের ঘটনায় কোথায়
কারা দায়ী, তা-ও জানা যাবে বলে মুখ্যমন্ত্রী আশাবাদী।

একই আশায় বিলই এনে ফেলছে সরকার পক্ষ। বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়ন্ত্রণ সংক্রান্ত যে বিলটি গত অধিবেশনে এনেও তুলে নেওয়া হয়েছিল, কিছু ‘পরিবর্তন ও পরিমার্জন’ করে সেই বিলও এই অধিবেশনে আসবে বলে জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী
পার্থ চট্টোপাধ্যায়।

বাস্তব রূপায়ণের সমস্যা ছাড়াও বিরোধীরা সম্পত্তি নষ্টের বিল আনায় তৃণমূলের ‘নৈতিক অধিকার’ নিয়েও প্রশ্ন তুলছে।

বিরোধী দলনেতা আব্দুল মান্নান বলেছেন, ‘‘দস্যু রত্নাকর এখন বাল্মীকি হতে চাইছেন! কিন্তু বাল্মীকি রত্নাকরের সব পাপ স্বীকার
করে নিয়েছিলেন। মুখ্যমন্ত্রী কি বিরোধী দলে থাকার সময়ে এই বিধানসভায় তাঁদের ভাঙচুরের পাপ স্বীকার করবেন? শাসক দলে থেকেও কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে ওঁরা রেল বা রাস্তা অবরোধ করতে পারেন। অন্য কেউ করলেই তাদের আইন এনে কণ্ঠরোধ করা হবে!’’

একই সুরে বাম পরিষদীয় নেতা সুজন চক্রবর্তীর বক্তব্য, ‘‘এখনকার বিলে পুরনো ঘটনার বিচার হয় না। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী অন্তত বিধানসভায় ভাঙচুরের অর্থদণ্ড এবং দায় গ্রহণ করুন। নইলে এই বিল এনে ওঁরাই হাস্যাস্পদ হবেন!’’ মান্নান-সুজন দু’জনেই বলেছেন, গণ আন্দোলন কখনও ধারাপাত মেনে হয় না। আইনের গণ্ডিতে গণ প্রতিবাদকে বাঁধাও যায় না।

সরকার বিধানসভায় বিরোধীদের কোনও মত গ্রাহ্য করছে না এবং যে কোনও বিষয়েই শাসক-বিরোধী বৈষম্য চলছে, এই অভিযোগে এ দিন স্পিকারের ডাকা সর্বদল বৈঠক ও তার পরে কার্য উপদেষ্টা (বিএ) কমিটির বৈঠকে যায়নি কংগ্রেস ও বামফ্রন্ট। এমনকী, বিজেপি বা গোর্খা জনমুক্তি মোর্চাও বৈঠকে ছিল না। ফলে, প্রকৃত অর্থে সর্বদল বৈঠক হয়ে উঠেছিল একদলীয়!

পরে সরকারের তরফে পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের কটাক্ষ, ‘‘বিধানসভায় মান্নানদেরই সব চেয়ে বেশি সময় দেওয়া হয়। কিন্তু ওঁরা কোনও গঠনমূলক কাজে নেই! কী করে বিধানসভার গেটের বাইরে সংবাদমাধ্যমে মুখ দেখাবেন, সেটাই ওঁদের একমাত্র চিন্তা!’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন