বিসর্জনের নিয়ন্ত্রণ নির্দেশিকা খারিজ করে হাইকোর্টের দেওয়া রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে যাচ্ছে রাজ্য। আজ, শুক্রবারই সর্বোচ্চ আদালতে এই সংক্রান্ত স্পেশ্যাল লিভ পিটিশন জমা দেওয়ার প্রস্তুতি নিয়েছে নবান্ন। বৃহস্পতিবার কলকাতা হাইকোর্টের রায় জানার পরেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর ঘরে পুলিশ ও প্রশাসনের শীর্ষকর্তাদের নিয়ে বৈঠক করেন। সেখানে স্পেশ্যাল লিভ পিটিশনে রাজ্যের বক্তব্য কী হবে, তার একটি খসড়া তৈরি হয়।
রায় খারিজের আবেদনে মূলত চারটি কথা বলা হবে বলে ঠিক হয়েছে। প্রথমত, বিসর্জনের দিন সরকার একা ঠিক করেনি। সিদ্ধান্তের আগে প্রকাশ্য সভায় সব ধর্ম ও সম্প্রদায়ের প্রতিনিধি ও সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের মতামত নেওয়া হয়েছিল। দ্বিতীয়ত, প্রতিবেশী রাষ্ট্র এবং দেশের কয়েকটি রাজ্যেও এমন নিয়ন্ত্রণ করা হয়। তৃতীয়ত, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উপর নজর রেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার সাংবিধানিক অধিকার সরকারের। আর সর্বোপরি বিসর্জন এক দিনের জন্য বন্ধ করার পাশাপাশি মহরমের আগে মহড়া হিসেবে তাজিয়া নিয়ে তিন দিন যে মিছিল বের হয়, সরকার তাও নিয়ন্ত্রণ করেছে। সুতরাং শুধু বিসর্জনের উপর নিয়ন্ত্রণ জারি করা হয়েছে এই তত্ত্ব ভুল এবং আপত্তিকর।
আরও পড়ুন:মহরমের সঙ্গেই বিসর্জন, রায় কলকাতা হাইকোর্টের
হাইকোর্টের রায় সম্পর্কে কোনও প্রতিক্রিয়া না জানালেও বিসর্জন-নীতি থেকে সরকার যে সরতে নারাজ, মুখ্যমন্ত্রী এ দিনও তা স্পষ্ট করে দেন। সেই সঙ্গেই আঙুল তোলেন বিজেপির ‘রাজনৈতিক চক্রান্তের’ দিকে। একডালিয়া এভারগ্রিনের পুজো উদ্বোধন করে তিনি বলেন, ‘‘এ রাজ্যে নতুন করে দাঙ্গা লাগানোর চেষ্টা হচ্ছে। রাজ্যে সবাই সুখে-শান্তিতে আছে, এটা অনেকের পছন্দ হচ্ছে না। দিল্লির চক্রান্ত চলে আমাদের বিরুদ্ধে। কেউ অশান্তি করার চেষ্টা করলে আমার থেকে বড় শত্রু কেউ হবে না।’’
একই দিনে দুর্গাপুজোর ভাসান ও মহরমের মিছিলের ফলে কোনও অপ্রীতিকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হলে, তার দায় চক্রান্তকারীদের উপর বর্তাবে বলেও হুঁশিয়ারি দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।
মমতা জানান, ফোরাম ফর দুর্গোৎসবের প্রধান পার্থ ঘোষ তাঁকে জানিয়েছেন, ওই ফোরামের সদস্য ৩৫০টি পুজো কমিটি একাদশীর দিন ভাসান দেবে না। তিনি সব ধর্মের মানুষের পাশেই থাকবেন বলেও এ দিন ফের জানিয়ে দিয়েছেন মমতা। তাঁর কথায়, ‘‘যে মাটিতে রামকৃষ্ণ, বিবেকানন্দ জন্মেছেন, সেখানে আর কারও কাছে মানবধর্ম শিখব না। মানুষই সব থেকে বড় বিচারক।’’
বাম পরিষদীয় দলনেতা সুজন চক্রবর্তীর বক্তব্য, ‘‘বাম জমানায় বিসর্জন, মহরম-সহ সব ধর্মের উৎসব একসঙ্গেই হয়েছে। তৃণমূল জমানায় সেটা সম্ভব নয় কেন?’’ (যদিও তথ্য অন্য কথা বলছে) বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষেরও প্রশ্ন, ‘‘মহরম আর বিসর্জন, একসঙ্গে দু’টো সামলানোর জন্য প্রশাসনের উপরে মুখ্যমন্ত্রীর কি আস্থা নেই?’’ প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরীর প্রতিক্রিয়া, ‘‘বিতর্কের রাজনীতি করতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী তাঁর প্রশাসনিক অপরিপক্কতা স্পষ্ট করে দিলেন।’’