শিক্ষা বিলে কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষিকাদের হাজিরায় বায়োমেট্রিক পদ্ধতি বাধ্যতামূলক করা হচ্ছে না ঠিকই। তবে হাজিরার ব্যাপারে আরও কঠোর হবে রাজ্য সরকার।
বৃহস্পতিবার প্রায় বিরোধী-শূন্য বিধানসভায় ‘দ্য ওয়েস্টবেঙ্গল ইউনিভার্সিটি অ্যান্ড কলেজ (প্রশাসন ও নিয়ন্ত্রণ) বিল, ২০১৭’ বিল পেশ করেন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। তিনি জানান, এই বিল কাউকে খতম করার জন্য নয়। ‘‘শিক্ষার মেরুদণ্ড সোজা করতেই এই বিল। উৎকর্ষ বাড়াতে, ছাত্রছাত্রীরা যাতে ঠিকমতো প্রশিক্ষিত হয়ে ওঠে, তার ব্যবস্থা করতেই এই বিল,’’ বলেন শিক্ষামন্ত্রী।
ওই শিক্ষা বিলে আগে কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকদের হাজিরায় বায়োমেট্রিক পদ্ধতি বাধ্যতামূলক করার প্রস্তাব থাকলেও নতুন বিলে তার উল্লেখ নেই। তবে বলা হয়েছে, ‘শিক্ষা দফতর মনে করলে কলেজের সময়ানুবর্তিতা এবং শৃঙ্খলা ফেরাতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে পারে।’ নতুন বিলে ‘বায়োমেট্রিক বাধ্যতামূলক’ কথাটি না-থাকায় শিক্ষকদের হাজিরার ব্যাপারে সরকার নরম হচ্ছে কি না, সেই প্রশ্ন ওঠে। পার্থবাবু বলেন, ‘‘কেউ কেউ বলছেন, আমরা হাজিরায় কড়াকড়ির সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসেছি। তা কিন্তু ঠিক নয়।’’
আরও পড়ুন: মাঠ নেই, বিপাকে শিক্ষার স্বাস্থ্য
তা হলে বায়োমেট্রিক পদ্ধতির প্রস্তাব তুলে নেওয়া হল কেন?
‘‘আমরা বিবেকের উপরে বিষয়টি ছেড়ে দিচ্ছি। ২০১৬ সালে যে-কথাটি বলেছিলাম, ৫-৬টি বিশ্ববিদ্যালয় তা কার্যকর করেছে। ৩০টি কলেজও করেছে। দেখতে চাই, এমনিতেই এটা করা সম্ভব কি না। নইলে সরকার নির্ধারিত নিয়মবিধি মেনেই নিজেদের পথে হাঁটবে,’’ বলেন শিক্ষামন্ত্রী। সরকার যে ২০১৬ সালে সব কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়েই বায়োমেট্রিক পদ্ধতি চালু করার কথা বলেছিল, শিক্ষামন্ত্রী সেটাই মনে করিয়ে দেন।
শিক্ষামন্ত্রীর দাবি, কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়কে দুর্নীতিমুক্ত করা এবং সুশৃঙ্খল ভাবে চালানোর জন্যই এই বিল আনা হয়েছে। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের আর্থিক দুর্নীতির খতিয়ানও দেন তিনি। বিল পেশের সময় বিরোধী বলতে বিধানসভায় ছিলেন শুধু বিজেপি, গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার বিধায়কেরা। বিজেপির দিলীপ ঘোষ ছাড়া আর কোনও বিরোধী বিধায়ক বক্তব্য পেশ করেননি।
আরও পড়ুন: সমস্যা কোথায়, স্কুলও দেখুক মা-বাবার সঙ্গে
শিক্ষা বিলের বিরুদ্ধে কংগ্রেস ও বাম শিবির এ দিন বিধানসভা চত্বরে মিছিল করে। বিলের প্রতিলিপি ছিঁড়ে পুড়িয়ে দেওয়া হয়। এটিকে ‘কালা বিল’ আখ্যা দিয়ে বাম পরিষদীয় দলনেতা সুজন চক্রবর্তী বলেন, ‘‘আরএসএসের জুতো পায়ে গলিয়ে সরকার শিক্ষাকে নিয়ন্ত্রণ করতে চাইছে। এতে কর্তাভজা লোকেরা মাথায় চড়বে।’’ তাঁর দাবি, বিজেপি এ দিন বিধানসভা বয়কট না-করে প্রমাণ করল, তারা তৃণমূলের সঙ্গেই আছে।
বিরোধী সব শিক্ষক সংগঠনই এই বিলের বিরোধিতা করেছে। তৃণমূলের শিক্ষক সংগঠন ওয়েবকুপা অবশ্য ইঙ্গিত দিয়েছে, বিলের সমর্থনে তারা পাল্টা আন্দোলনে নামতে পারে।
পুলিশি যাচাই
কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী নিয়োগের আগে তাঁদের ‘পুলিশ ভেরিফিকেশন’ বা পুলিশ দিয়ে প্রার্থীর বিষয়ে খোঁজখবর নেওয়া এবং মেডিক্যাল টেস্ট বা স্বাস্থ্যপরীক্ষা বাধ্যতামূলক করা হচ্ছে। শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় বৃহস্পতিবার বিধানসভায় শিক্ষা বিল পেশ করে জানান, অন্যান্য বিভাগে নিয়োগের ক্ষেত্রে এই নিয়ম রয়েছে। তাই শিক্ষাতেও এই নিয়ম চালু করা হল।