ন্যানো কারখানার শেড সরিয়ে নিতে টাটাকে নোটিস পাঠাবে রাজ্য

সিঙ্গুরের প্রকল্প এলাকা থেকে ন্যানো কারখানার শেড সরিয়ে নেওয়ার জন্য টাটা মোটরসকে নোটিস পাঠাচ্ছে রাজ্য সরকার। সুপ্রিম কোর্ট চাষিদের জমি ফিরিয়ে দেওয়ার রায় দেওয়ার দিনই নবান্নে এবং বৃহস্পতিবার জার্মানির মিউনিখে বসে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, আদালতের নির্দেশ মেনে জমি চাষযোগ্য করেই সাবেক মালিকদের হাতে তুলে দেবে রাজ্য সরকার।

Advertisement

গৌতম বন্দ্যোপাধ্যায় ও শঙ্খদীপ দাস

সিঙ্গুর শেষ আপডেট: ১০ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০৩:৪৬
Share:

সিঙ্গুর কারখানার এই শেডই সরানো হবে। ছবি: দীপঙ্কর দে।

সিঙ্গুরের প্রকল্প এলাকা থেকে ন্যানো কারখানার শেড সরিয়ে নেওয়ার জন্য টাটা মোটরসকে নোটিস পাঠাচ্ছে রাজ্য সরকার।

Advertisement

সুপ্রিম কোর্ট চাষিদের জমি ফিরিয়ে দেওয়ার রায় দেওয়ার দিনই নবান্নে এবং বৃহস্পতিবার জার্মানির মিউনিখে বসে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, আদালতের নির্দেশ মেনে জমি চাষযোগ্য করেই সাবেক মালিকদের হাতে তুলে দেবে রাজ্য সরকার। সেই মতো কাজও শুরু হয়ে গিয়েছে সিঙ্গুরে। সেখানে সানাপাড়া এবং খাসেরভেড়িতে দু’টি বিদ্যুতের সাব-স্টেশন রয়েছে। সে দু’টি অন্যত্র সরাতে জমি খোঁজ চলছে। নবান্ন সূত্র বলছে, এই সাব-স্টেশন দু’টি সরানোর ক্ষেত্রে সমস্যা নেই। কারণ, রাজ্য সরকারই তার মালিক। কিন্তু ন্যানো কারখানার মূল শেড, যা আড়ে-বহরে প্রায় ৭০ একর জমির উপরে তৈরি, তার মালিক টাটা মোটরস। তাই একতরফা ভাবে সেটি ভেঙে না-দিয়ে সতর্কতার সঙ্গে এগোতে চাইছে নবান্ন।

শুক্রবার জমি পরিষ্কার ও জরিপের কাজ সরেজমিনে খতিয়ে দেখতে সিঙ্গুরে গিয়ে রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘সুপ্রিম কোর্ট কৃষকদের জমি ফিরিয়ে দিতে বলেছে। কিন্তু সেই জমির ওপর কেউ যদি বাড়ি করে থাকে, তাকে তো বলতে হবে এটা ভেঙে দিয়ে চলে যাও। রাজ্য শিল্পোন্নয়ন নিগমই সেই কাজ (টাটাদের জানানো) করবে। যাদের জিনিস তারা যদি তুলে নিয়ে না যায়, পরে তা হলে (তারা) আমাদের উপরে দায় চাপাতে পারে।’’

Advertisement

নবান্ন সূত্রে বলা হচ্ছে, কত দিনের মধ্যে চাষিদের হাতে জমি তুলে দিতে হবে, সে ব্যাপারে শীর্ষ আদালত একটা সময়সীমা বেঁধে দিয়েছে। ফলে টাটাদের নোটিস পাঠানোর পরে দীর্ঘদিন অপেক্ষা করা সম্ভব নয়। তারা যদি নির্দিষ্ট দিনের মধ্যে শেড সরিয়ে না নেয়, তা হলে রাজ্য সরকারই সেটা ভেঙে দেবে। কিন্তু সে ক্ষেত্রেও যথেষ্ট সতর্কতা নিয়ে এগোনোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাজ্য। গোড়াতেই টাকার অঙ্কে শেডটির মূল্যায়ন করে রাখছে তারা। শুক্রবার থেকেই সেই কাজ শুরু করেছেন পূর্ত দফতরের ইঞ্জিনিয়াররা। কী ভাবে মূল্যায়ন করা হচ্ছে, সেটা ভিডিওগ্রাফিও করে রাখা হচ্ছে। যাতে সরকার শেডটি ভেঙে সরিয়ে ফেলার পরে তার দাম নিয়ে টাটাদের সঙ্গে কোনও বিতর্ক বা আইনি জটিলতা তৈরি না হয়।

সিঙ্গুরের জমির বাকি অংশ কৃষিযোগ্য করে তোলার কাজ এখন জোরকদমে চলছে। সেই কাজ খতিয়ে দেখতে এ দিন পার্থবাবুর সঙ্গেই সিঙ্গুর গিয়েছিলেন পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম ও প্রাক্তন বিদ্যুৎমন্ত্রী মণীশ গুপ্ত। প্রকল্প এলাকা ঘুরে দেখার পরে পার্থবাবু বলেন, ‘‘এখনও পর্যন্ত সাড়ে তিনশো একর জমির ফেরতযোগ্য করে তোলা গিয়েছে। আশা করা হচ্ছে ১৪ সেপ্টেম্বরের আগে অন্তত ৬০০ একর জমি কৃষকদের ফেরত দেওয়ার মতো অবস্থায় এনে দেওয়া যাবে।’’ প্রসঙ্গত, ১৪ তারিখেই সিঙ্গুরে জনসভা করে ‘সিঙ্গুর দিবস’ পালন করার কথা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের।

মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্যের সুর ধরে পার্থবাবুও এ দিন জমি চাষযোগ্য করে তোলার ব্যাপারে সওয়াল করেন। বলেন, কৃষকদের জমি ফেরানোটাই এখন পাখির চোখ সরকারের। তাঁর কথায়, ‘‘শিল্প না কৃষি এ নিয়ে অহেতুক বিতর্ক তৈরি করা হচ্ছে। সে দিনও শিল্প চেয়েছিলাম, আজও চাই। তবে শিল্পের জন্য জমিতে শিল্প হবে। সে জন্য বাংলায় জমির অভাব নেই। কিন্তু মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বারবার বলেছেন, সিঙ্গুরের মতো এ রকম কৃষিজমি ধ্বংস করে শিল্প হবে না।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন