ফাইল চিত্র।
তাঁরা পশ্চিমবঙ্গ ক্যাডারের অফিসার। অথচ এ রাজ্যে কাজে যোগ দেওয়ার আগেই তাঁদের তিন মাসের জন্য দিল্লিতে কেন্দ্রীয় সরকারের বিভিন্ন পদে বসিয়ে দেওয়া হয়েছে। এ নিয়ে তীব্র আপত্তি তুলেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। দিল্লিকে চিঠি দিয়ে নবান্ন জানিয়েছে, ২০১৪ ব্যাচের ওই ৮ জন আইএএস অফিসারকে রাজ্যে ফেরত পাঠাতে হবে। নবান্নের খবর, মুখ্যমন্ত্রীর দাবি মেনে অফিসারদের ফেরত না পাঠালে রাজ্য যে সংঘাতের পথেই হাঁটবে, সেই ইঙ্গিতও লিখিত ভাবে দেওয়া হয়েছে।
কেন এত ক্ষোভ? নবান্নের কর্মিবর্গ এবং প্রশাসনিক সংস্কার দফতরের এক কর্তা জানাচ্ছেন, আইএএস অফিসারদের প্রশিক্ষণ নিয়ে গত বার থেকেই কেন্দ্র-রাজ্যের সংঘাত শুরু হয়েছে। ২০১৩ ব্যাচের পশ্চিমবঙ্গ ক্যাডারের ১২ জন অফিসারকে প্রশিক্ষণ শেষে তিন মাসের জন্য কেন্দ্রের বিভিন্ন মন্ত্রকে সহকারী সচিব পদে নিয়োগ করা হয়েছিল। এ নিয়ে আপত্তি তোলেন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর অভিযোগ ছিল, এ ভাবে তাঁর অফিসারদের মগজ ধোলাই করছে কেন্দ্র। তখন দিল্লি জানিয়েছিল, সব রাজ্যের অফিসারদেরই প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। এতে আপত্তি জানালে ভবিষ্যতে পশ্চিমবঙ্গ ক্যাডারের অফিসারদের ফল ভুগতে হবে। তখন মুখ্যমন্ত্রী কেন্দ্রকে জানিয়ে দেন, এই এক বছরের জন্যই অনুমতি দেওয়া হচ্ছে। এর পর থেকে আর নয়া আমলাদের দিল্লির মন্ত্রকে প্রশিক্ষণ নিতে দেওয়া হবে না।
কিন্তু এ বছরেও আট নয়া আইএএস-কে গত ১ অগস্ট থেকে দিল্লির বিভিন্ন মন্ত্রকে প্রশিক্ষণ দিতে শুরু করে দিয়েছে প্রধানমন্ত্রীর অধীনস্থ পার্সোনেল মন্ত্রক। এবং সে জন্য রাজ্যের মতামত নেওয়ারও প্রয়োজন বোধ করেনি তারা। পরে এই খবর জেনে ঘনিষ্ঠ মহলে ক্ষোভ প্রকাশ করেন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর নির্দেশেই রাজ্যের কর্মিবর্গ সচিব মনোজ অগ্রবাল দিল্লিতে চিঠি লিখে জানিয়েছেন, ‘১৯৫৪ সালের আইএএস (প্রোবেশন) রুলের ৫(১) ধারা অনুযায়ী দু’বছরের প্রশিক্ষণ শেষ হওয়ার পর আইএএস অফিসারদের ভার সংশ্লিষ্ট রাজ্যের। কিন্তু রাজ্যের ছাড়পত্র ছাড়াই কেন্দ্র আট অফিসারকে মন্ত্রকে নিয়ে গিয়েছে। এটা রাজ্য মানছে না। ওঁদের এখনই ফেরত পাঠানো হোক।’ এ নিয়ে প্রয়োজনে আরও কড়া অবস্থান নেবেন বলেই মুখ্যমন্ত্রী ঘনিষ্ঠ মহলে জানিয়েছেন।
প্রশাসনের খবর, আইএএস, আইপিএস এবং আইএফএস অফিসারদের চার মাসের প্রথম পর্বের প্রশিক্ষণ হয় মুসৌরির লালবাহাদুর শাস্ত্রী ন্যাশনাল অ্যাকাডেমি অব অ্যাডমিনিস্ট্রেশন-এ। তার পর অফিসারদের দু’মাস বিভিন্ন রাজ্যে ঘোরানো হয়। ‘ভারত দর্শন’ নামে দ্বিতীয় পর্বের এই প্রশিক্ষণের পর আইএএস অফিসারদের ১৫ সপ্তাহের বিশেষ প্রশিক্ষণের জন্য ফের মুসৌরি যেতে হয়। এই সময়েই ক্যাডার নির্বাচন করা হয়। অর্থাৎ, কোন অফিসার কোন রাজ্যে গিয়ে কাজ করবেন তা ঠিক হয় এবং সেই মতো ভাষা শেখানোর কাজও চলে। এর পর আট মাসের জন্য অফিসারেরা রাজ্যে-রাজ্যে চলে যান তৃণমূলস্তরে কাজ শেখার জন্য। প্রশিক্ষণ পর্বের শেষ লগ্নে আরও ছয় সপ্তাহের জন্য তাঁদের মুসৌরিতে ফিরতে হয়। তার পরেই তাঁরা নিজের ক্যাডার-রাজ্যে কাজে যোগ দেন। এখন এই পর্বেই দিল্লিতে নিয়ে গিয়ে বিভিন্ন মন্ত্রকে তিন মাসের প্রশিক্ষণ দিচ্ছে কেন্দ্র।
কেন্দ্রের যুক্তি হল, আইএএস-এর চাকরিতে তৃণমূলস্তরে কাজে যোগ দেওয়ার আগে কেন্দ্রীয় সচিবালয়ের কাজ হাতে-কলমে বুঝে নেওয়াটা দরকার। এর সঙ্গে মগজ ধোলাইয়ের কোনও সম্পর্ক নেই। কারণ, একই ভাবে কেন্দ্রীয় সচিবদেরও বিভিন্ন জেলায় ‘স্টাডি ট্যুর’-এ পাঠিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। কেন্দ্রীয় সচিবালয়ের অফিসারদের রাজ্যের ব্লক স্তরে পাঠানোর সিদ্ধান্তও নিয়েছেন তিনি।