একটি প্রতারণা মামলায় তিন দিন আগেই আসিফ খানকে গারদে পুরেছে পুলিশ। অন্য আর যে মামলাটিতে আগাম জামিন পেয়েছিলেন একদা মুকুল রায়ের ছায়াসঙ্গী এই প্রাক্তন তৃণমূল নেতা, তার বিরুদ্ধে আবেদন করতে আজ সোজা সুপ্রিম কোর্টে হাজির মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার। শীর্ষ আদালত কিন্তু আগাম জামিন বাতিল করেনি। বরং আসিফের বক্তব্য খতিয়ে দেখতে রাজি হয়েছে। আসিফের আইনজীবীকে তিন সপ্তাহের মধ্যে নিজের বক্তব্য জানিয়ে হলফনামা জমা দিতে বলেছে ডিভিশন বেঞ্চ।
এক সময় তৃণমূল নেতৃত্বের কাছের লোক আসিফ খান সারদা কেলেঙ্কারিতে সরাসরি মমতার দিকে অভিযোগের আঙুল তুলেছিলেন। তাঁকে ‘মিথ্যেবাদী’ পর্যন্ত বলেছিলেন। সিবিআই অফিসারদেরও তিনি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়ে সাহায্য করছেন। আসিফের অভিযোগ, তার পর থেকেই তাঁকে মিথ্যে প্রতারণা মামলায় ফাঁসিয়ে গারদে পোরার চেষ্টা হচ্ছে। প্রথমে তাঁর বিরুদ্ধে ২০ কোটি টাকার একটি প্রতারণার মামলা দায়ের হয়। সেই মামলায় সেপ্টেম্বর মাসে কলকাতা হাইকোর্টে আগাম জামিন পেয়েছিলেন আসিফ। সেপ্টেম্বরে আট কোটি টাকা প্রতারণার আর একটি মামলা দায়ের করা হয়। সেই মামলায় তাঁকে গত বৃহস্পতিবার গ্রেফতার করে পুলিশ। এবং অন্য মামলাটিতে আসিফের আগাম জামিন নাকচ করতে সুপ্রিম কোর্টে আসে রাজ্য। যা এক কথায় নজিরবিহীন।
এই মামলার শুনানি চলাকালীন আজ শীর্ষ আদালতে আসিফের আইনজীবী পীযূষ রায় প্রতারণার অভিযোগটির সত্যতা নিয়েই প্রশ্ন তুলেছেন। উল্টো দিকে, রাজ্য সরকারের আইনজীবী কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় দাবি তুলেছেন, এমনিতেই আসিফ এখন পুলিশের হেফাজতে। তার পরে অন্য মামলায় তিনি জামিন পেয়েছিলেন কি না, তার প্রাসঙ্গিকতা নেই। আসিফের আইনজীবী যুক্তি দেন, দু’টি মামলার মধ্যে কোনও সম্পর্ক নেই। বিচারপতি সুধাংশুজ্যোতি মুখোপাধ্যায় ও বিচারপতি এন ভি রমানার বেঞ্চ তাঁকে তিন সপ্তাহের মধ্যে হলফনামা দিয়ে আসিফের বক্তব্য জানানোর নির্দেশ দিয়েছেন। আগামী ১ ডিসেম্বর এই মামলার পরবর্তী শুনানি।
আসিফের জামিন আটকাতে রাজ্য সরকারের এমন তৎপরতা দেখে স্বাভাবিক ভাবেই রাজনীতিক ও আইনজীবীদের মধ্যে কৌতূহল তৈরি হয়েছে। কারণ, এই মামলায় আসিফের বিরুদ্ধে প্রাথমিক ভাবে অভিযোগটি রাজ্য সরকারের নয়, উত্তরপ্রদেশের তৃণমূলের কার্যকরী সভাপতি ব্যবসায়ী ওয়াহিদুল হাসান সিদ্দিকির দায়ের করা। তাঁর অভিযোগ ছিল, রাজারহাটে ৪৮০ একর জমি পাইয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে তাঁর কাছ থেকে ২০ কোটি টাকা নিয়েছিলেন আসিফ। আজ আদালতে আসিফের আইনজীবী প্রশ্ন তুলেছেন, ২০১৩ সালের নভেম্বরে যে টাকা দিয়েছিলেন ওয়াহিদুল, সে ব্যাপারে এফআইআর করতে কেন সাত মাস সময় নিলেন? কেন ওই ২০ কোটি টাকার রসিদ নেননি তিনি? আইনজীবীর যুক্তি, পশ্চিমবঙ্গের ভূমি সংস্কার আইন অনুযায়ী যেখানে ২৪ একরের বেশি জমি কেউ কিনতে পারে না, সেখানে কোন আইনে ৪৮০ একর জমি কেনার চেষ্টা করছিলেন অভিযোগকারী? আসিফের আইনজীবী যুক্তি দেন, তাঁর মক্কেলের বিরুদ্ধে মিথ্যে মামলা সাজানো হয়েছে।
এই ২০ কোটি প্রতারণার মামলায় ৩ সেপ্টেম্বর আগাম জামিন পেয়ে যান আসিফ। পরের দিনই বিধাননগর থাকায় আর একটি ৮ কোটি টাকার প্রতারণার মামলা দায়ের হয়। আজ রাজ্য সরকারের তরফে কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের দাবি ছিল, একটি মামলায় এমনিতেই আসিফ গারদে। কাজেই পুরনো মামলাতেও আসিফের জামিন নাকচ করে দেওয়া হোক। কিন্তু বিচারপতিরা তা মানতে রাজি হননি।