আমে ভুবন ভরিয়ে দিতে চাইছে বাংলা

রফতানির উপযোগী প্যাকিংয়ের বন্দোবস্ত আছে। কিন্তু বিদেশে পাঠানোর আগে আমের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে নেওয়ার ব্যবস্থা এত দিন ছিল না। বিশেষ করে ইউরোপের নানা দেশে আম রফতানি করার জন্য অবশেষে সেই স্বাস্থ্যপরীক্ষা-সহ নয়া পরিকাঠামো তৈরি করা হচ্ছে।

Advertisement

পিনাকী বন্দ্যোপাধ্যায়

কলকাতা শেষ আপডেট: ১২ মে ২০১৭ ০৪:১০
Share:

প্রতীকী ছবি।

রফতানির উপযোগী প্যাকিংয়ের বন্দোবস্ত আছে। কিন্তু বিদেশে পাঠানোর আগে আমের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে নেওয়ার ব্যবস্থা এত দিন ছিল না। বিশেষ করে ইউরোপের নানা দেশে আম রফতানি করার জন্য অবশেষে সেই স্বাস্থ্যপরীক্ষা-সহ নয়া পরিকাঠামো তৈরি করা হচ্ছে। সেই সঙ্গে বিশেষ আধিকারিকও নিয়োগ করছে খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ দফতর।

Advertisement

ওই দফতর সূত্রের খবর, মালদহে আম রফতানির একটি আধুনিক ‘প্যাকিং হাউস’ আছে। আন্তর্জাতিক বাজারে রফতানির করার জন্য যে-প্রক্রিয়ায় আম মোড়কবন্দি করা প্রয়োজন, তার পরিকাঠামো রয়েছে সেখানে। কিন্তু ইউরোপের বিভিন্ন দেশে আম রফতানি করতে গেলে চাই ‘হট ওয়াটার ট্রিটমেন্ট’। গরম জলে একটি নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় ৪৫-৫০ মিনিটের জন্য আম চুবিয়ে রেখে তার থেকে ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র মাছি ও অন্যান্য পোকামাকড় নিকেশ করা হয় এই প্রক্রিয়ায়। এই ট্রিটমেন্টের কোনও ব্যবস্থা ছিল না রাজ্যে। এখন সেই পরীক্ষার ব্যবস্থাই করা হচ্ছে। সেখানে ঘণ্টায় কমপক্ষে এক মেট্রিক টন আমের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা যাবে বলে উদ্যোক্তাদের দাবি। সেই সঙ্গে দেওয়া হবে কেন্দ্রের ছাপ মারা শংসাপত্রও।

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সম্প্রতি উত্তরবঙ্গ সফরে গিয়ে ঘোষণা করে এসেছেন, মালদহের আম যাবে ইউরোপের দেশে। সেই সূত্রেই এ বার রফতানিযোগ্য আমের স্বাস্থ্যপরীক্ষার পরিকাঠামো তৈরির পরিকল্পনা করছে রাজ্য। খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ দফতরের উদ্যোগে শুরু হয়েছে আমচাষিদের নাম নথিভুক্তি ও প্রশিক্ষণ। লক্ষ্য, ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলিতে আম রফতানি করতে গেলে যে-সব শর্ত মেনে চলার নির্দেশ জারি হয়েছে, সেগুলো অক্ষরে অক্ষরে মেনে চলা। প্রাযুক্তিক প্রস্তুতির পাশাপাশি গোটা পরিকল্পনা রূপায়ণের জন্য মালদহে ‘ম্যাঙ্গো ডেভেলপমেন্ট অফিসার’ হিসেবে এক আধিকারিককে সম্প্রতি বিশেষ দায়িত্বে বসানো হয়েছে।

Advertisement

খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ দফতরের এই উদ্যোগে হাত মিলিয়েছে কেন্দ্রীয় সংস্থা ‘কৃষি ও খাদ্যপণ্য রফতানি উন্নয়ন পর্ষদ’ বা অ্যাপিডা। লক্ষ্য, এই মরসুমেই বেশ ভাল পরিমাণ আম ইউরোপের দেশে রফতানি করা। বাংলার আমের ব্যাপারে সুইডেন ও ইতালি সরকার ইতিমধ্যেই আগ্রহ প্রকাশ করেছে। রফতানিতে সম্মতির কথাও জানিয়ে দিয়েছে। রাজ্যের খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ দফতরের সচিব নন্দিনী চক্রবর্তী বলেন, ‘‘ইউরোপের বাজারে আম রফতানি করার ক্ষেত্রে যা যা পদক্ষেপ করা দরকার, আমরা সেই সব কাজ শুরু করে দিয়েছি। আশা করি, ভাল ফল পাওয়া যাবে।’’

রাজ্য প্রশাসনের হিসেবে এত দিন মালদহের উৎপাদিত আমের ৬০ শতাংশ রফতানি হতো বাংলাদেশে। কিন্তু ঢাকা গত বছর থেকে আমের উপরে হঠাৎই অতিরিক্ত হারে আমদানি শুল্ক বসিয়ে দেওয়ায় মাথায় হাত পড়েছে আমচাষিদের। প্রতি কিলোগ্রামে ২৯ টাকা হারে আমদানি শুল্ক বসানোয় বাংলাদেশে আম রফতানি বন্ধ হয়ে গিয়েছে। সরকারের হিসেব অনুযায়ী এ বছর শুধু মালদহেই আমের ফলন হবে প্রায় তিন লক্ষ ৭০ হাজার মেট্রিক টন।

শুধু ইউরোপের বিভিন্ন দেশে নয়, আমের বাজার বাড়াতে দুবাই, সংযুক্ত আরব আমিরশাহিতেও পা রাখতে চাইছে রাজ্যের খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ দফতর। বেছে নেওয়া হয়েছে নেপাল এবং ভুটানের কিছু বাজারকেও।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন