প্রতীকী ছবি।
পুলিশ ও স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার হাত ধরে বাড়ি ফিরলেও পরিবার ও সমাজে ঠাঁই পান না ওঁদের অনেকেই। দক্ষিণ ২৪ পরগনার একটি গ্রামের দাস পরিবার কিন্তু পাচারকারীদের হাত থেকে উদ্ধার হওয়া মেয়েকেই পুত্রবধূ হিসেবে গ্রহণ করলেন।
দক্ষিণ ২৪ পরগনার বাসিন্দা বছর ১৭-র মৌসুমী সরকারকে (নাম পরিবর্তিত) ফোনে আলাপ জমিয়ে স্টেশনে ডেকে পাঠিয়েছিল এক যুবক। কিছু না বুঝে সেই অপরিচিত যুবকের সঙ্গে দেখা করতে গিয়ে আর বাড়ি ফেরেনি সে। পুলিশ তদন্ত শুরু করে। কিন্তু মেয়ের খোঁজ মেলে না। মৌসুমীর মায়ের কথায়, ‘‘এক দিন একটা অজানা নম্বর থেকে ফোন এল। মৌসুমীর গলা। কাঁদতে কাঁদতে বলল, কে বা কারা আগরায় নিয়ে গিয়ে ওকে বিক্রি করে দিয়েছে। পরে আরও কয়েক বার ও ফোন করেছিল বিভিন্ন নম্বর থেকে। সব নম্বরগুলোই পুলিশকে দিতাম।’’
দু’মাসের মাথায় সুন্দরবন পুলিশের একটি দল, দিল্লির একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা এবং উত্তরপ্রদেশ পুলিশের সাহায্যে আগরায় পৌঁছে মৌসুমীকে উদ্ধার করে। শুধু মৌসুমী নয়। সে দিনের অভিযানে বাংলার আরও পাঁচ নাবালিকা উদ্ধার হয়। কিন্তু মেয়েকে ফেরত পেয়েও চিন্তা কাটেনি পরিবারের। মেয়ে কেমন যেন চুপচাপ বসে থাকত। চোখের দৃষ্টিও কেমন যেন! চিকিৎসক দেখিয়ে কাউন্সেলিং করানো হত। এর মধ্যেই আত্মীয়েরা বিয়ে দেওয়ার কথা বলেন। পাত্রেরও খোঁজ মেলে। পাশের গ্রামেরই ছেলে। অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করে বাবার সঙ্গে স্টেশনারি ব্যবসা চালান।
মৌসুমীর পরিবার মেয়ের ১৮ বছর হতেই বিয়ে দিয়েছেন। তবে বিয়ের আগে প্রথমে মেয়েকে দিয়ে পাত্রকে সব ঘটনা খুলে বলা হয়। নিজেরাও সব জানান মেয়ের হবু শ্বশুর-শাশুড়িকে। মৌসুমীর মায়ের কথায়, ‘‘সব জেনে কোনও ছেলে বা পরিবার যে ওকে ঘরের বৌ করে নিয়ে যাবে এবং তার পাশে দাঁড়িয়ে পাচারকারীদের বিরুদ্ধে আইনি লড়াই ল়ড়বে— এতটা ভাবিনি!’’
শ্বশুরবাড়িতে কতটা খুশি আছে সে? মৌসুমীর সলজ্জ উত্তর ‘‘যা আবদার করি, এনে দেয়। পড়াবেও বলেছে।’’ আর মৌসুমীর স্বামী সঞ্জীব (নাম পরিবর্তিত)? তিনি বললেন, ‘‘ওর হাতের লেখা খুব সুন্দর। পড়তে চায়। আমি সব সময়েই ওর পাশে থাকতে চাইব।’’
আশার কথা, মৌসুমী একা নয়। উদ্ধার হওয়া মেয়েদের পুনর্বাসন পাওয়ার পরিসংখ্যান বাড়ছে বলেই জানাচ্ছেন এক বেসরকারি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার কর্ণধার, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী রবিকান্ত। বৃহস্পতিবার তিনি বলেন, ‘‘দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলাতেই অন্তত ৫-৬টি পরিবার তাদের মেয়েদের বা়ড়িতে নিয়ে গিয়েছে।’’