দেখো-রে: মরা হলেও রয়্যাল বেঙ্গল তো। তাই বাঘ দেখতে ভিড় বাগঘোরায়। শুক্রবার। নিজস্ব চিত্র
জঙ্গলে বন্যপ্রাণী থাকবে। জঙ্গল লাগোয়া গ্রামে মানুষও থাকবেন। এই সহাবস্থানের জন্য আমাদের প্রয়োজন সহনশীল মানসিকতা। যা এক দিনে তৈরি করা যায় না। এ জন্য লাগাতার সচেতনতা কর্মসূচির প্রয়োজন।
লালগড়ের জঙ্গলে বাঘ রয়েছে এটা নিশ্চিত হওয়ার পর সচেতনতা কর্মসূচি নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু আমার মনে হয়, কোথাও একটা ঘাটতি ছিল। শিকারে যাওয়া লোকজনের পা ধরে অনুনয় বিনয় করে কয়েকজনকে একদিনের জন্য নিরস্ত করা যেতে পারে। কিন্তু এতে দীর্ঘমেয়াদি ফল পাওয়া মুশকিল। শিকার করতে জঙ্গলে ঢোকা একশো শতাংশ বন্ধ করতে গেলে নিরবিচ্ছিন্ন প্রচার চালাতেই হবে। এ ছাড়া অন্য কোনও উপায় নেই। আমার মনে হয়, কোনও বিষয়ে মানুষকে গুরুত্ব সহকারে লাগাতার বোঝালে সকলে তা বোঝেন। গলদ তো নিশ্চয়ই ছিল। তা না হলে কেন বল্লমের খোঁচায় এ ভাবে মরতে হল বাঘটাকে?
একসময় সুন্দরবন এলাকায় বাঘ লোকালয়ে ঢুকে পড়লে গ্রামবাসীর হাতে তার মৃত্যু নিশ্চিত ছিল। সচেতনতার ফলে এখন সেখানে ছবিটা বদলেছে। ঝড়খালি, সোনারগাঁওয়ে বাঘ ঢুকলে লোকজন ক্যানেস্তারা পিটিয়ে বাঘকে নদী পার করিয়ে জঙ্গলের দিকে পাঠানোর চেষ্টা করেন। কেউ বল্লম ছোড়েন না।
লালগড়ে বাঘ ধরতে খাঁচা বসানো হয়েছে। ড্রোন ওড়ানো হয়েছে। কিন্তু এগুলি কোনওটাই নিশ্চিত পদ্ধতি নয়। সাধারণত, বাঘের বিচরণ ক্ষেত্রে ১০ বর্গ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে হয়। এই বাঘটি নতুন পরিবেশে এসে বিভিন্ন জায়গায় ‘পথচারী বাঘ’ হিসেবে ঘুরে বেড়িয়েছে। বন দফতরের কাছে স্থানীয় খবরাখবর (লোকাল রিপোর্ট) যথেষ্ট ছিল বলে মনে হয় না।
বাঘটি যে এলাকায় অবস্থান করছিল, সেখানে টানা জঙ্গলও ছিল না। জঙ্গলের মাঝে মাঝে লোকবসতি ছিল। আবার জঙ্গল। এর ফলে বাঘটিকে ধরা বেশ কঠিন কাজ ছিল। এজন্য আরও বেশি সংখ্যক প্রশিক্ষিত বনকর্মীদের দিয়ে জঙ্গল ও লাগোয়া লোকালয় এলাকাগুলিকে বৃত্তাকারে ঘিরে সম্ভাব্য বাঘের ডেরার দিকে যাওয়ার অভিযান করাও প্রয়োজন ছিল।
বাঘটা মারা যাওয়ার পরে বন দফতরের দায়িত্ব বেড়ে গেল। কে বলতে পারে কাল, পরশু আবার এক দু’টো বাঘ ওডিশা থেকে যদি চলে আসে! ফলে সচেতনতা ও সহাবস্থানের শিক্ষাটা বড়ই জরুরি।
লেখক: রাজ্যের প্রাক্তন প্রধান মুখ্য বনপাল