গরম পড়তেই বে়ড়েছে রক্তের সঙ্কট। তার উপরে পঞ্চায়েত ভোটের প্রস্তুতির জেরে রক্তদান শিবির হচ্ছে না। ফলে ঝাড়গ্রাম থেকে বারাসত, মালদহ থেকে কাকদ্বীপ— রক্তের সঙ্কটে বিপদে রোগীরা। বাদ যায়নি কলকাতার সরকারি ব্লাড ব্যাঙ্কও।
মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজে জেলা ব্লাড ব্যাঙ্কে বুধবার কোনও গ্রুপের রক্ত ছিল না। তিনটি মহকুমা হাসপাতালের ব্লাড ব্যাঙ্কের সহায়তায় কাজ চলেছে। রক্তের প্রয়োজন হলে রোগীর পরিবারকে ‘ডোনার’ সঙ্গে করে নিয়ে আসতে বলা হচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল ও জেলা প্রশাসনের কর্তারা বুধবার স্থির করেন, ব্লক প্রশাসনের কর্তারা প্রতিটি ব্লকে রক্তদান শিবির করায় উদ্যোগী হবেন।
স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, বুধবার পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, খড়্গপুর মহকুমা হাসপাতাল ও ঘাটাল হাসপাতালের ব্লাড ব্যাঙ্কে মোট ১৬০ ইউনিট রক্ত মজুত ছিল। গড়ে যেখানে ৭০ ইউনিট রক্তের প্রয়োজন, সেখানে সংগ্রহ হচ্ছে ৪০ ইউনিট। সিউড়ি জেলা ব্লাড ব্যাঙ্কে ৩০০ ইউনিট রক্ত রাখার পরিকাঠামো থাকলেও বুধবার বিকেলে মজুত ছিল ১৪০ ইউনিট রক্ত। পুরুলিয়া জেলা সদর হাসপাতালের ব্লাড ব্যাঙ্কে মাসে প্রায় ৭০০ ইউনিট রক্তের চাহিদা থাকে। কিন্তু এখন প্রয়োজনের তুলনায় জোগান কম।
খড়্গপুর মহকুমা হাসপাতালের ব্লাড ব্যাঙ্কের দায়িত্বপ্রাপ্ত মেডিক্যাল অফিসার ঝুমা মুখোপাধ্যায় কিংবা পশ্চিম মেদিনীপুরের মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক গিরীশচন্দ্র বেরা জানাচ্ছেন, মে-জুনে শিবির কম হয়। কিন্তু চলতি মাসে রাজনৈতিক দলগুলি শিবিরের আয়োজন করেনি। তাই এই সঙ্কট। বারাসত জেলা হাসপাতালে সপ্তাহ দেড়েক আগে সাত-দশ দিনের জন্য রক্তের সঙ্কট দেখা দিয়েছিল। হাসপাতালের সুপার সুব্রত মণ্ডল জানান, ছ’টি শিবির বাতিল হওয়ার সঙ্কট দেখা দিয়েছিল। সেই সময় রক্ত নেওয়া হয়েছিল ব্যারাকপুর এবং বনগাঁ মহকুমা হাসপাতাল থেকে। কাকদ্বীপ মহকুমার মধ্যে একমাত্র কাকদ্বীপ হাসপাতালেই ব্লাড ব্যাঙ্ক রয়েছে। গত কয়েক মাস ধরে রক্তদান শিবির হচ্ছে না। ঘাটতি মেটাতে গত সপ্তাহে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ চিকিৎসক, নার্স এবং স্বাস্থ্য কর্মীদের নিয়ে শিবির করেন। তাতে ৩৪ ইউনিট রক্ত সংগ্রহ করা হয়। এই হাসপাতালে দিনে ১৮ ইউনিট রক্ত লাগে। সপ্তাহে দু’দিন থ্যালাসেমিয়া রোগী এলে চাহিদা বেড়ে দাঁড়ায় ২৫-২৭ ইউনিট। বর্তমানে হাসপাতালের সংগ্রহে রয়েছে মাত্র ৭০ ইউনিট রক্ত।
মঙ্গলবার আরামবাগ হাসপাতালের ব্লাডব্যাঙ্কে রক্ত না থাকায় থ্যালাসেমিয়া শিশুদের জন্য রক্তদান করেন অ্যাম্বুল্যান্স চালকেরা। হাসপাতাল সুপার শিশিরকুমার নস্কর জানান, মঙ্গলবার একটি শিবির থেকে ৫৪ ইউনিট রক্ত মিলেছিল। বুধবার দুপুরের মধ্যে তা শেষ। বিকেলে মাত্র ৩৫ ইউনিট রক্ত হাসপাতালে মজুত রয়েছে। শক্তিনগর জেলা হাসপাতালের ব্লাডব্যাঙ্কে বুধবার সকাল থেকে ৪৫ ইউনিট রক্ত ছিল। দু’টি শিবির থেকে ৭৭ ইউনিট রক্ত সংগ্রহ হওয়ায় কিছুটা স্বস্তি মিলেছে। সুপার শচীন্দ্রনাথ সরকার বলছেন, “গরমের কারণে শিবির ও দাতার সংখ্যা কমে যায়। তার উপরে ভোটের কারণে রাজনৈতিক দলগুলি সেভাবে শিবির করছেন না।”
সূত্রের খবর, কলকাতার সেন্ট্রাল ব্লাড ব্যাঙ্ক কিংবা এনআরএস, আরজিকর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ব্লাড ব্যাঙ্কে প্লেটলেটের আকাল। যার জেরে একাধিক রোগীর চিকিৎসা প্রায় থমকে। রক্তদান আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত কর্মীদের একাংশ জানাচ্ছেন, ভোটের প্রচার কর্মসূচির অঙ্গ হিসাবে রক্তদান শিবির করলে রোগীদের হয়রানি কমত।
যদিও রাজ্যজুড়ে রক্ত সঙ্কটের কথা মানতে নারাজ রাজ্যের ব্লাড ব্যাঙ্কের দায়িত্বে থাকা শীর্ষকর্তা। তাঁর কথায়, ‘‘নজরদারি রয়েছে। কোথাও সমস্যা হলে মিটিয়ে নেওয়া হচ্ছে।’’