সাক্ষাতে: বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যকে দেখে বেরোচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁকে এগিয়ে দিলেন স্ত্রী মীরা। —নিজস্ব চিত্র।
প্রাক্তনের বাড়িতে ফের হাজির বর্তমান। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের বাড়ি গেলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বুদ্ধবাবুর স্বাস্থ্যের খোঁজখবর নিলেন, গল্পগুজবও হল বেশ কিছু ক্ষণ। বেরনোর সময় বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের স্ত্রী মীরা ভট্টাচার্য গাড়ি পর্যন্ত এগিয়ে দিলেন মুখ্যমন্ত্রীকে।
বুদ্ধবাবুর বাড়ি থেকে বেরিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, সৌজন্য সাক্ষাতেই এসেছিলেন। বুদ্ধবাবুর স্বাস্থ্যের খোঁজখবর নিয়েছেন, চোখে একটু সমস্যা হচ্ছে।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, অনেক বিষয় নিয়ে কথা হল, গল্প হল, একটু আড্ডা হল, গান নিয়ে কথা হল, বই নিয়ে কথা হল, এখন তিনি কী বই পড়ছেন, সে সব নিয়ে কথা হল।
বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের সঙ্গে দেখা করতে তাঁর পাম অ্যাভিনিউয়ের বাড়িতে মুখ্যমন্ত্রী এই প্রথম গেলেন, এমন নয়। বুদ্ধবাবুর অসুস্থতার খবর পেয়ে আগেও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দেখা করতে গিয়েছিলেন। পরে বুদ্ধবাবুর আবাসনটির দুরবস্থা দেখে তা দ্রুত মেরামতির নির্দেশ দিয়েছিলেন তিনি। কেন দীর্ঘ দিন আবাসনের প্রয়োজনীয় সংস্কার হয়নি, সে প্রশ্ন তুলে কলকাতা পুরসভার কাজ নিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অসন্তোষ প্রকাশ করেছিলেন। মুখ্যমন্ত্রীর অসন্তোষের জেরে তড়িঘড়ি সংস্কারের কাজে হাত দেয় পুরসভা।
আরও পড়ুন: মনোনয়ন ঘিরে অশান্ত নলহাটি-কাটোয়া, মারধর-ভাঙচুর-বোমাবাজি
বুদ্ধবাবুর বাড়িতে যখনই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় গিয়েছেন, তখনই মূলত এ ভাবে বিনা নোটিসেই গিয়েছেন। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় পাম অ্যাভিনিউতে মুখ্যমন্ত্রীর ঝটিকা সফরও সে রকমই ছিল। কিন্তু বুদ্ধবাবু অসুস্থ বা আবাসনে কোনও সমস্যা হচ্ছে, এ রকম কোনও খবরের প্রেক্ষিতে এই সফর ছিল না। তাই মমতা-বুদ্ধর এই ‘সৌজন্য সাক্ষাৎ’ ঘিরে জল্পনাও তৈরি হয়েছে রাজনৈতিক শিবিরে।
পঞ্চায়েত নির্বাচন নিয়ে এই মুহূর্তে শাসক-বিরোধী ধুন্ধুমার চলছে গোটা রাজ্যে। তৃণমূলের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসের অভিযোগ তুলছে সব বিরোধী দল। সপ্তাহ দু’য়েক আগেও ছবিটা অন্য রকম ছিল। বিজেপি বিরোধী ঐক্যের ডাক দিয়ে দেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক দলকে এক মঞ্চে আনার তোড়জোড়ে তখন ব্যস্ত ছিলেন তৃণমূলনেত্রী। রাজ্যেও তার ছাপ পড়ছিল। সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে লড়ার কথা বলে বিজেপির বিরুদ্ধে সরব হচ্ছিলেন এ রাজ্যের কংগ্রেস এবং বাম নেতৃত্বও।
কিন্তু পঞ্চায়েত নির্বাচন ঘোষিত হতেই শাসকের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসের অভিযোগ তুলে কাছাকাছি এসে গিয়েছে বিরোধী দলগুলি। নিচুতলায় সমঝোতার পরিবেশ তৈরি হচ্ছে। মনোনয়ন জমা পর্বের প্রথম তিন দিনে মূলত বিজেপি মার খাচ্ছিল শাসকের হাতে। বৃহস্পতিবার বামেরাও রক্তাক্ত হয়েছে। বীরভূমে মাথা ফেটেছে প্রাক্তন সিপিএম সাংসদ রামচন্দ্র ডোমের। এই পরিস্থিতিতে নিচুতলায় বিজেপি এবং বাম কর্মীরা আরও কাছাকাছি আসতে পারেন, এমন আশঙ্কা তৃণমূল নেতৃত্বের রয়েছে। তেমন কোনও পরিস্থিতি রুখতেই কি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আচমকা হাজির হলেন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের বাড়িতে? বিজেপি-কে নিঃসঙ্গ করতেই কি বামেদের সৌজন্যের বার্তা দিলেন? জল্পনা চলছে এই প্রশ্নকে ঘিরেই।