আসানসোল-রানিগঞ্জে গোষ্ঠী সংঘর্ষ সামলাতে রাজ্য সরকার ব্যর্থ হয়েছে বলে অভিযোগ করে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে চিঠি দিলেন রাজ্যপাল কেশরীনাথ ত্রিপাঠী।
রাজ্য সরকারের প্রাথমিক আপত্তি সত্ত্বেও গত ৩১ মার্চ আসানসোল-রানিগঞ্জের উপদ্রুত এলাকা পরিদর্শনে যান রাজ্যপাল। তার পরেই এই চিঠি। যার কথা জানাজানি হতেই প্রশাসনিক মহলে নানা চর্চা শুরু হয়েছে।
রাজভবন-নবান্নের মধ্যে চিঠি চালাচালি হামেশাই হয়ে থাকে। কিন্তু তা হয় আমলাদের মাধ্যমে। কিন্তু এ ক্ষেত্রে রাজ্যপাল যে ভাবে নিজেই মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠি লিখেছেন, তাতে নবান্নের শীর্ষ কর্তারাও কিঞ্চিৎ বিস্মিত। এর আগে রামনবমীর মিছিলের জেরে আসানসোল-রানিগঞ্জের পরিস্থিতি নিয়ে কেন্দ্রকে বিশেষ রিপোর্ট পাঠিয়েছেন কেশরী।
নবান্ন সূত্রের খবর, কেশরী চিঠিতে লিখেছেন, ‘বিভিন্ন সংগঠন যে রামনবমীতে শোভাযাত্রা বের করবে তা পুলিশের অজানা ছিল না। বিভিন্ন স্থানে শোভাযাত্রা বেরোনোর কথাও জানত পুলিশ। কোনও রাজনৈতিক বা ধর্মীয় অনুষ্ঠানের কথা জানা গেলে গোয়েন্দা বাহিনী তার আগাম খবর সংগ্রহ করবে সেটাই স্বাভাবিক। কিন্তু আসানসোল-রানিগঞ্জের ‘অশান্তির আশঙ্কার’ কোনও আগাম খবর গোয়েন্দা বাহিনীর কাছে ছিল না।’ এই ঘটনা গোয়েন্দা বিভাগের চরম ব্যর্থতাকেই চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন কেশরী।
আরও পড়ুন: হঠাৎ বুদ্ধের বাড়ি মমতা, ‘সৌজন্য সাক্ষাৎ’ শেষে গাড়ি পর্যন্ত এগিয়ে দিলেন মীরা
তবে রাজ্যপালের মতে, গোয়েন্দা ব্যর্থতাই পরিস্থিতি ঘোরালো হয়ে ওঠার একমাত্র কারণ নয়। স্থানীয় পুলিশ সব জেনেশুনেও রামনবমী মিছিলের জন্য পর্যাপ্ত নিরাপত্তা বাহিনী মোতায়েন করেনি। তার ফলে গোলমাল শুরু হয়ে দ্রুত ছড়িয়ে পড়লেও পুলিশের পক্ষে তা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয়নি।
রাজ্যপাল মুখ্যমন্ত্রীকে লিখেছেন, ‘সময়মতো গোষ্ঠী সংঘর্ষ ঠেকানোটাই পুলিশের কাজ। কিন্তু ঠিক যে সময়ে কঠোর হওয়া উচিত ছিল, সে সময় স্থানীয় পুলিশ ব্যবস্থা নিতে ব্যর্থ হয়েছে। তার ফলে প্রাণ ও সম্পত্তিহানি অনেক বেশি হয়েছে।’
মুখ্যমন্ত্রী এখনও আসানসোল যাননি। অথচ রাজ্য দু’বার না বলার সত্ত্বেও সেখানে ঘুরে এসেছেন নাছোড় রাজ্যপাল। তাতে ক্ষুণ্ণই ছিল নবান্ন। বুধবার দিল্লিতে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহের সঙ্গে দেখা করে রাজ্যপালের বিরুদ্ধে অভিযোগ জানিয়ে এসেছেন তৃণমূল সাংসদরা। সে দিনই মুখ্যসচিব মলয় দে এবং স্বরাষ্ট্রসচিব অত্রি ভট্টাচার্যকে রাজভবনে ডেকে পাঠিয়ে আসানসোল-রানিগঞ্জের ঘটনা নিয়ে আলোচনা করেন কেশরী।
তার পর পুলিশি ব্যর্থতার অভিযোগ তুলে এই চিঠি। তাতে নবান্নের অসন্তোষ আরও বাড়লেও এখনই এ নিয়ে কোনও প্রতিক্রিয়া না জানানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। নবান্নের এক শীর্ষ কর্তার কথায়, ‘‘ওই চিঠির কোনও গুরুত্ব নেই। রাজ্যপাল মুখ্যমন্ত্রীকে তাঁর আসানসোল সফরের রিপোর্ট পেশ করেছেন মাত্র।’