বিরতি বা বিশ্রাম যা-ই বলা হোক, সেটা ছিল মাত্র এক দিনের।
তার পরেই শুক্রবার ফের ঝড়বৃষ্টিতে কলকাতা-সহ দক্ষিণবঙ্গে স্বস্তির হাওয়া। স্বস্তি আরও এই জন্য যে, এ বারের ঝড়বৃষ্টি মানেই বজ্রাঘাতে মৃত্যুর যে-আতঙ্ক তৈরি হয়েছিল, এ দিন সেটা নেই। কারণ প্রাণহানির খবর আসেনি। কলকাতায় তিন জনের আহত হওয়া ছাড়া দক্ষিণবঙ্গের জেলাগুলিতে বড় ধরনের কোনও বিপর্যয় ঘটেনি। মহানগরী এবং জেলার বিভিন্ন জায়গায় অবশ্য অনেক গাছ ভেঙেছে। বিকেলের ঝড়ে নবান্নের ভিআইপি গেটের ছাউনির একাংশ উড়ে যায়। পড়ে গিয়ে ভেঙে যায় দু’টি মেটাল ডিটেক্টরও।
এ দিন সকাল থেকেই ভ্যাপসা গরমে নাজেহাল হতে হচ্ছিল গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গের বাসিন্দাদের। বাতাসে বাড়তি জলীয় বাষ্পের জন্যই এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়। রেডার চিত্র বিশ্লেষণ করে আবহবিদেরা জানান, দুপুরে দক্ষিণবঙ্গের উপরে আবার বজ্রগর্ভ মেঘ তৈরি হয়েছিল। নদিয়া, উত্তর ২৪ পরগনা হয়ে সেই বজ্রমেঘ চলে আসে কলকাতার দিকে। বেলা সাড়ে ৩টে থেকে ৪টের মধ্যে দু’দফায় ঝড় বয়ে যায়। আলিপুরে প্রথম দফায় ঝড়ের সর্বোচ্চ বেগ ছিল ঘণ্টায় ৫৬ কিলোমিটার। দ্বিতীয় দফায় তা বেড়ে হয় ঘণ্টায় ৯২ কিলোমিটার।
আবহবিদেরা জানান, ঝাড়খণ্ডের লাগোয়া পুরুলিয়ার উপরেও একাধিক ছোট ছোট বজ্রগর্ভ মেঘপুঞ্জ তৈরি হয়েছিল। সেগুলি পরস্পরের সঙ্গে জু়ড়ে বড় আকারের মেঘপুঞ্জ তৈরি করে। তার প্রভাবে বিকেলের পরে পুরুলিয়া, বাঁকু়ড়া, হাওড়া, হুগলি, পূর্ব মেদিনীপুরে ঝড়বৃষ্টি হয়েছে। নবান্নের খবর, ঝড়ের চেহারা দেখে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বিপর্যয় মোকাবিলা দফতরে ফোন করে খোঁজখবর নেন। কলকাতার মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়কেও ফোন করেন তিনি। সংশ্লিষ্ট সকলকেই সতর্ক থাকার নির্দেশ দেন মুখ্যমন্ত্রী।
এ বার গ্রীষ্মের মরসুমে মাত্রাছাড়া গরমের পূর্বাভাস দিয়েছিল দিল্লির মৌসম ভবন। কিন্তু আবহাওয়ার খামখেয়ালিপনায় সেই পূর্বাভাস মেলেনি। বরং নিত্যদিন ঝড়বৃষ্টির ফলে গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গে সে-ভাবে মাথাচাড়া দিতে পারেনি গরম। আবহবিদেরা জানাচ্ছেন, সম্প্রতি বিহার ও উত্তরপ্রদেশে দু’টি ঘূর্ণাবর্ত তৈরি হয়েছিল। সেগুলোর প্রভাব কেটে গেলেও বিহার থেকে উপকূলীয় বাংলা পর্যন্ত একটি নিম্নচাপ অক্ষরেখা বিস্তৃত রয়েছে। তার ফলে এ দিন সকাল থেকেই আকাশ মেঘলা ছিল। ওই অক্ষরেখা বঙ্গোপসাগরের জোলো হাওয়া টেনে আনছে বাংলায়।