কৃতী: মায়ের সঙ্গে কৌশিকী দাশগুপ্ত চৌধুরী। সোমবার। ছবি: সজল চট্টোপাধ্যায়
কলকাতায় থাকতে চাইছেন না আইএসসি এবং আইসিএসই-র কৃতী ছাত্রছাত্রীরা। শুধু ভিন্ রাজ্য নয়, অনেকেরই পাখির চোখ বিদেশ।
অথচ দু’টি পরীক্ষাতেই ‘ভারত সেরা’দের তালিকায় কলকাতা বা লাগোয়া তল্লাটের পড়ুয়াদের রমরমা। তবে তাদের অনেকেই কলকাতা ছেড়ে বাইরে পড়তে যাওয়াটা ভবিতব্য বলে ধরে নিচ্ছেন। পানিহাটির সেন্ট জেভিয়ার্স ইনস্টিটিউশন থেকে গোটা দেশে আইএসসি-র সেরার মুকুটজয়ী কৌশিকী দাশগুপ্ত চৌধুরী যেমন রসায়ন নিয়ে পড়তে কানপুর বা মুম্বই আইআইটি-তে যাওয়ারই স্বপ্ন দেখেন। রসায়ন, পদার্থবিদ্যা, জীববিদ্যায় একশোয় একশো ছিনিয়ে নিয়েছেন এই ‘ফার্স্ট গার্ল’। তবে শেষ পর্যন্ত কোথায় কী সুযোগ আসে, তা নিয়ে মন খোলা রাখছেন কৌশিকী।
আইসিএসই-র তৃতীয় হেরিটেজ স্কুলের স্পৃহা পাণ্ডে আবার এখনই ভবিষ্যতের পথ চলাটা অঙ্কের ধাপের মতো ছকে রেখেছে। মুম্বইয়ে আইএসসি-পর্বের পাট চুকিয়ে ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব সিঙ্গাপুরে পড়ার স্বপ্ন এই মেয়ের। কামারহাটির দ্য এরিয়ান্স স্কুলের অনুরাগ ঘোষও স্পৃহার সমান নম্বর পেয়ে তৃতীয়। রেল কলোনির এই কিশোর ইঞ্জিনিয়ার হতে চায়। সেও ভবিষ্যতে কলকাতার বাইরে পড়তে যাওয়ার সম্ভাবনা উড়িয়ে দিচ্ছে না।
তবে কি তরুণ প্রজন্মের চোখে কলকাতার উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলির কৌলীন্য নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে? কৌশিকীর থেকে এক নম্বর কম পেয়ে আইএসসি-তে দ্বিতীয়, লিলুয়া ডন বস্কোর বাণিজ্য শাখার ছাত্র ঋষভ জালান ঠিক তা মনে করেন না।
তবে দিল্লির শ্রীরাম কলেজে পড়তে পাততাড়ি গোটানো এই তরুণ বলছেন, ‘‘কলকাতায় ভাল কলেজের সংখ্যা তুলনায় কম। তার থেকেও চাকরির সুযোগ অনেক কম।’’ কলাবিদ্যার ছাত্রী হয়েও আইএসসি-তে দ্বিতীয় হয়ে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন মডার্ন হাই স্কুলের অস্মিতা সরকার। তাঁরও লক্ষ্য ইতিহাস পড়তে দিল্লি যাওয়ার! মা-বাবাও ইতিহাসের শিক্ষক। মালদহে দশম শ্রেণি অবধি পড়াশোনার পরে কলকাতায় চলে এসেছিলেন অস্মিতা। কলকাতার ভাল কলেজগুলিকেও বাতিল করছেন না তিনি।
আইএসসি-র আর এক দ্বিতীয়, ব্যারাকপুরের মডার্ন ইংলিশ অ্যাকাডেমির জয়দীপ বসু কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বা রসায়ন নিয়ে পড়বেন বলে ঠিক করেছেন। কোথায় কী সুযোগ আসে, তা জরিপ করছেন এখন। ইঞ্জিনিয়ার হতে চান গার্ডেন হাই স্কুলের ছাত্র আদিত্য পালও। ফোনে কথা বলার সময়েও জানতেন না আইএসসি-তে তৃতীয় হয়েছেন।
চুলচেরা ফারাকের টক্করে আইএসসি-র মেধা-তালিকার তিন নম্বরে একই সঙ্গে রয়েছেন বাংলার পাঁচ জন পড়ুয়া। দীবীশা জায়সবাল কলাবিদ্যায় রাষ্ট্রবিজ্ঞান, সমাজতত্ত্বের মতো বিষয়ে একশোয় একশো পেয়ে আইএসসি-র অন্যতম তৃতীয় স্থানাধিকারী। ইতিমধ্যেই আমেরিকার বল্টিমোরে জন হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ে ইতিহাস, অর্থনীতি ও সমাজতত্ত্বের একটি শিক্ষাক্রমে ভর্তি হয়ে গিয়েছেন তিনি। আইএসসি-র আর এক তৃতীয় আর্যমান জৈনও আমেরিকার বিখ্যাত সিএমইউ বিশ্ববিদ্যালয়ে চলে যাচ্ছেন। পার্ক সার্কাস ডন বস্কোর বাণিজ্য শাখার এই পড়ুয়ার ইচ্ছে, পরে বিহেভিয়েরাল ইকনমিক্স নিয়ে পড়াশোনা করে সরকারি আর্থিক নীতি রূপায়ণের কাজে সামিল হবেন। লা মার্টিনিয়রের ছাত্রী সুমেধা ঘোষ চাইছেন দিল্লি যেতে। দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতি নিয়ে পড়ার স্বপ্ন তাঁর। সুমেধার মা আইএএস-কর্তা। সুমেধাও কি সে দিকেই যাবেন? তাঁর উত্তর, পরের কথা পরে ভাবা যাবে। শিলিগুড়ি ডন বস্কোর ছাত্র অমন চৌধুরীও বাণিজ্য শাখায় পড়ে আইএসসি-তে তৃতীয়। সূদূর ভবিষ্যতের কথা এখনই ভাবছেন না ব্যাডমিন্টন-পাগল এই ছাত্র।