State News

গভীর রাত পর্যন্ত চলেছে গোলমাল, টহল দিচ্ছে র‌্যাফ, থমথমে ঝাড়গ্রাম

পঞ্চায়েত নির্বাচনে জঙ্গলমহলের এই জেলায় জোরদার ধাক্কা খেয়েছে শাসক দল। বিজেপি-র যে উত্থান ঝাড়গ্রাম এবং পাশ্ববর্তী পুরুলিয়ায় দেখা গিয়েছে, তা তৃণমূলের কাছে অপ্রত্যাশিত ছিল।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ৩০ মে ২০১৮ ০৯:৫১
Share:

মঙ্গলবার রাতে বিজেপি পার্টি অফিসের সামনে এই ছবিই দেখা গিয়েছে। —নিজস্ব চিত্র।

রাত ১টা পর্যন্ত শোনা গিয়েছে গুলির শব্দ, বোমার আওয়াজ। তৃণমূল-বিজেপি সংঘর্ষে অবরুদ্ধ ছিল জঙ্গলঘেরা জেলা শহরের বিস্তীর্ণ অংশ। সকালে পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক। পুলিশ মোতায়েন হয়েছে শহরের বিভিন্ন অংশে, চলছে র‌্যাফের টহলদারিও। থমথমে ঝাড়গ্রাম ছেড়ে কলকাতায় ফিরছেন রাজ্য বিজেপি-র সাধারণ সম্পাদক (সংগঠন) সুব্রত চট্টোপাধ্যায়।

Advertisement

পঞ্চায়েত নির্বাচনে জঙ্গলমহলের এই জেলায় জোরদার ধাক্কা খেয়েছে শাসক দল। বিজেপি-র যে উত্থান ঝাড়গ্রাম এবং পাশ্ববর্তী পুরুলিয়ায় দেখা গিয়েছে, তা তৃণমূলের কাছে অপ্রত্যাশিত ছিল। মঙ্গলবারই তৃণমূল যুব কংগ্রেসের সভাপতি তথা সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় মন্তব্য করেন যে, পুরুলিয়াকে তিনি বিরোধীশূন্য করে দেবেন। আর সেই একই দিনে বিজেপি-র উপর ‘হামলা হয়েছে’ ঝাড়গ্রামে।

স্থানীয় সূত্রের খবর, মঙ্গলবার রাত ৮টা নাগাদ হামলা শুরু হয়। বিজেপি-র জেলা পার্টি অফিস ঘিরে ধরে চলতে থাকে গুলি, বোমাবাজিও। পঞ্চায়েত নির্বাচনে জয়ী প্রার্থীদের একাংশের সঙ্গে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় বৈঠক ছিল বিজেপি-র রাজ্য নেতৃত্বের। বিজেপি-র দাবি, বৈঠক চলাকালীনই পার্টি অফিস ঘিরে ধরে হামলা শুরু হয়। বুধবার সকালে ঝাড়গ্রাম থেকে কলকাতা ফেরার পথে সুব্রত চট্টোপাধ্যায় জানালেন, “প্রথমবার হামলা করে সুবিধা করতে পারেনি। পার্টি অফিসে আদিবাসী সমাজেরও অনেকেই ছিলেন। তাঁদের সঙ্গে তির-ধনুক ছিল। পাল্টা প্রতিরোধ হয়। তৃণমূলের গুন্ডারা আশা করেনি প্রতিরোধ হবে। ফলে কয়েকটা বাইক-টাইক ফেলে রেখেই পালিয়ে যায়। কিন্তু ঘণ্টাখানেকের মধ্যেই হাজার দেড়েক লোক জড়ো করে ফের পার্টি অফিস ঘিরে ফেলে ওরা। মুড়ি-মুড়কির মতো বোমা-গুলি চলতে থাকে।”

Advertisement

আরও পড়ুন
ঝাড়গ্রামে বিজেপি অফিসে হামলার অভিযোগ তৃণমূলের বিরুদ্ধে, আমরাই আক্রান্ত, পাল্টা তৃণমূল

বেশ কয়েক ঘণ্টা পুলিশ কোনও পদক্ষেপ করেনি বলে বিজেপি নেতাদের দাবি। রাজ্য বিজেপি-র মুখপাত্র সায়ন্তন বসু রাতেই জানান যে, পুলিশি অসহযোগিতার খবর সরাসরি কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে জানানো হচ্ছে। বিজেপি-র কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষক কৈলাস বিজয়বর্গীয় নিজে রাজনাথ সিংহকে ফোন করেছেন বলে সায়ন্তন জানান। বিজেপি নেতাদের ইঙ্গিত, কেন্দ্র থেকে চাপ আসার পরেই কিছুটা সক্রিয় হয় পুলিশ। রাতেই র‌্যাফ নামানো হয়। তার পরে বিজেপি অফিসের সামনে থেকে সরে যেতে থাকে তৃণমূলের জমায়েত। সুব্রত চট্টোপাধ্যায় বললেন, “পুলিশ চাইছিল রাতেই আমাদের পার্টি অফিসে খালি করে দিতে। পার্টি অফিসের ভিতরে যাঁরা ছিলেন, রাতেই তাঁদের বাড়ি পাঠানোর জন্য চাপ দিচ্ছিল পুলিশ। কিন্তু আমরা রাজি হইনি। আমরা জানতাম পার্টি অফিসের সামনে থেকে সরে গেলেও, কিছুটা দূরেই অপেক্ষায় রয়েছে তৃণমূলী দুষ্কৃতীরা। কর্মীরা পার্টি অফিস ছাড়লেই আবার হামলা হতে পারে। সবাই সারা রাত পার্টি অফিসেই ছিলাম। সকালে একে একে সকলে নিজের নিজের এলাকায় ফিরেছেন।”

আরও পড়ুন
যারা যত খেয়েছে, তারা তত হেরেছে জঙ্গলমহলে!

তৃণমূলের অবশ্য দাবি, হামলা চালিয়েছে বিজেপি। জেলা তৃণমূলের কার্যকরী সভাপতি আর্য ঘোষ বলেন, “আমরা কোনও হামলা করিনি। আমাদের বাইক মিছিলেই বিজেপি হামলা চালিয়েছে।” বিজেপি নেতা সুব্রত চট্টোপাধ্যায়ের পাল্টা প্রশ্ন, “গোলমালটা তো রাস্তায় হয়নি, গোলমালটা তো হয়েছে আমাদের পার্টি অফিসের সামনে। ওঁরা কি বাইক মিছিল নিয়ে আমাদের পার্টি অফিসের সামনে ধূপ-ধুনো দিতে এসেছিলেন?”

র‌্যাফ এবং পুলিশি টহল চললেও পরিস্থিতি থমথমে ঝাড়গ্রামে। গভীর রাত পর্যন্ত চলা অশান্তির রেশে রাজনৈতিক উত্তেজনা বুধবার সকালেও বহাল। ঝাড়গ্রামের পুলিশ সুপার অমিত কুমার ভরত রাঠৌর বললেন, “দুষ্কৃতীদের আমরা চিহ্নিত করছি। প্রত্যেকের বিরুদ্ধেই আইনি পদক্ষেপ করা হবে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন