বৃষ্টির মতো সংবর্ধনা মুখ্যমন্ত্রীকে

এক বছর আগেকার টালমাটাল সময় পার হয়ে এ বারে ভরা পর্যটন মরসুম ফিরে পেয়েছে পাহাড়। তারই মধ্যে মুখ্যমন্ত্রীর এই সফরকে স্বাগত জানাতে এবং তাঁকে দেখতে বিভিন্ন জনপদে উপচে পড়েছে ভিড়।

Advertisement

দেবাশিস চৌধুরী

কালিম্পং শেষ আপডেট: ২৯ মে ২০১৮ ০২:২৪
Share:

স্বতঃস্ফূর্ত: কালিম্পঙের রাস্তায় মুখ্যমন্ত্রীর গাড়ি। নিজস্ব চিত্র

সেই দুপুর বারোটা থেকে তৈরি হয়ে আছে ভিড়টা। সেতুতে ওঠার মুখে হাতে তৃণমূলের পতাকা নিয়ে যাঁরা রয়েছেন, তাঁরা খামি সম্প্রদায়। মাথায় অনেকেরই সাদা ফেট্টি। থামিদের মধ্যে বলা হয় পাগরা। সকলেরই উৎসুক চোখ সামনের বাঁকটায়। ঘড়ির কাঁটা এগোচ্ছে পাঁচটার দিকে। মাঝে মাঝেই পুলিশের গাড়ি যাচ্ছে হুটার বাজিয়ে। সঙ্গে সঙ্গে হইহই করে উঠছেন ওঁরা।

Advertisement

তিস্তা সেতু ধরে এগিয়ে গেলে একটু দূরেই আর এক দল। কারা-নাকাড়া সাজিয়ে দাঁড়িয়ে। হঠাৎ হঠাৎ বাজিয়ে তুলছেন সে সব। শেরপাদের এই দলটার কাছেই আরও কয়েকটি সম্প্রদায়। সেতু পার হয়ে বাঁক ঘুরতে তৃণমূলের পতাকা সাজিয়ে আরও কয়েকটি বোর্ড। হাতে মাইক। পিছনে স্পিকার। মুখ্যমন্ত্রীর গাড়ি যখন পার হয়ে যাচ্ছে তাঁদের, স্পিকারে স্লোগান: ‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জিন্দাবাদ, উই ওয়ান্ট জাস্টিস।’

এক বছর আগেকার টালমাটাল সময় পার হয়ে এ বারে ভরা পর্যটন মরসুম ফিরে পেয়েছে পাহাড়। তারই মধ্যে মুখ্যমন্ত্রীর এই সফরকে স্বাগত জানাতে এবং তাঁকে দেখতে বিভিন্ন জনপদে উপচে পড়েছে ভিড়। পাহাড়ে ওঠার মুখে, সেবকে যেমন দেখা মিলল এক বৃদ্ধার। বাড়ির পোশাকে তাঁকে এনে রাস্তার পাশে চেয়ারে বসিয়ে দিয়েছে পরিবারের লোকজন। কালীঝোরার কাছে বাচ্চা কোলে দাঁড়িয়ে আছেন মা। তিস্তাবাজারে দলের লোকজনের সঙ্গে এসেছে স্কুলের ছাত্রছাত্রীরাও। প্রবল বৃষ্টির মধ্যে যখন মুখ্যমন্ত্রীর কনভয় তাদের পার হচ্ছে, সকলে ভিজতে ভিজতে দাঁড়িয়ে হাত নেড়েছে। সেই বৃষ্টির মধ্যেই মুখ্যমন্ত্রীকে খাদা পরিয়ে অভ্যর্থনা জানিয়েছেন জিটিএ-র তত্ত্বাবধায়ক বোর্ডের ভাইস চেয়ারম্যান অনীত থাপা।

Advertisement

সেবক, কালিঝোরা, লোহাপুল, তিস্তা এবং কালিম্পংয়ের আগে বেশ কয়েকটি জায়গায় দল ও সম্প্রদায়গুলির তরফে লোকজন এসেছে। কিন্তু এর বাইরেও বাড়ির মাথায়, রাস্তার ধারে ভিড় জমিয়েছেন মানুষ। গত বছর যখন টানা বন্‌ধ চলছিল পাহাড়ে, সে সময় এমনটা ভাবা যেত না, বলছেন পবন ভুজেল। থামি সম্প্রদায়ের ভিড়ে দাঁড়িয়েছিলেন নরেন্দ্র। বললেন, ‘‘এখন তো সব জায়গায় শান্তি। এটাই হওয়া দরকার।’’

মুখ্যমন্ত্রী অবশ্য আগেই জানিয়েছিলেন, তৃণমূল এখন আর পাহাড়ে জোর দিয়ে সংগঠন বাড়ানোর পক্ষপাতী নয়। বরং ডুয়ার্সে তারা মন দেবে বেশি করে। মোর্চা এবং তৃণমূল যে সমঝোতা করে চলবে, তারও উদাহরণ মিলেছে সাম্প্রতিক পঞ্চায়েত ভোটে। ডুয়ার্সে গিয়ে প্রচার করে এসেছেন বিনয় তামাং। সেই প্রচারে ভোটব্যাঙ্ক কতটা পুষ্ট হয়েছে, সেটা পরের কথা। এ দিনও দুই পতাকা পাশাপাশি থেকে বুঝিয়ে দিয়েছে, মোর্চায় এখন বিমল গুরুং জমানা অস্তমিত।

এই দৃশ্যে শুধু একটা পতাকাই চোখে পড়েনি। সেটা জিএনএলএফের।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন