State News

মেয়ে হলে ‘তাড়াব’, প্রসবের পরে পালাতে চাইলেন মা

দিন কয়েক পরে বাড়িতে মুশকিল আসান এসেও জানিয়ে গিয়েছিল, ‘তবে তাই হোক।’ তা হয়নি। বৃহস্পতিবার সকালে ডোমকল সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালে সন্তান প্রসবের পরে দেখা গিয়েছিল নয়নতারা খাতুনের মেয়ে হয়েছে। আর, তার পর থেকেই মুখ ফিরিয়েছিল শ্বশুরবাড়ি। হাসপাতালে পা বাড়ায়নি স্বামী।

Advertisement

সুজাউদ্দিন

ডোমকল শেষ আপডেট: ২৬ মে ২০১৮ ০৩:৫৪
Share:

সন্তানসম্ভবা হওয়ার পর থেকেই তার কানের কাছে শুরু হয়েছিল শাসানি, ‘মেয়ে যেন না হয়!’

Advertisement

দিন কয়েক পরে বাড়িতে মুশকিল আসান এসেও জানিয়ে গিয়েছিল, ‘তবে তাই হোক।’ তা হয়নি। বৃহস্পতিবার সকালে ডোমকল সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালে সন্তান প্রসবের পরে দেখা গিয়েছিল নয়নতারা খাতুনের মেয়ে হয়েছে।

আর, তার পর থেকেই মুখ ফিরিয়েছিল শ্বশুরবাড়ি। হাসপাতালে পা বাড়ায়নি স্বামী। আসেননি অন্য কেউ। নয়নতারা বলছেন, ‘‘খালি মনে পড়ছিল, স্বামীর সেই কথাটা, ‘মেয়ে হলে ঘরছাড়া করব!’’ বাচ্চাকে মায়ের কাছে দিতে এলে নার্সদের তাই সটান জানিয়ে দিয়েছিল নয়নতারা, ‘‘মেয়েকে চাই না!’’ শুধু তাই নয়, বেলা গড়ালে সে নিজেই চুপি চুপি হাসপাতাল থেকে পালিয়ে যেতে চেয়েছিল। ব্যাপারটা নজরে পড়ে গিয়েছিল হাসপাতালের আয়াদের। তারাই নয়নতারাকে জোর করে ফিরিয়ে এনে শুইয়ে রাখে খাটে। আসেন হাসপাতাল সুপার। ডাকা হয় পুলিশ। তারাই এর পরে তলব করে ওই প্রসূতির পরিবারকে।

Advertisement

সুপার এবং পুলিশের সামনেই এর পরে হাউ হাউ করে কাঁদতে থাকেন সদ্য প্রসূতি। বলেন, ‘‘মেয়েকে ঘরে তুলতে পারব না, তা হলে ওরা আমাকে ঘর ছাড়া করবে গো!’’

তবে, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাঁকে ছাড়েনি। বরং নয়নতারার স্বামী আব্দুল হক এবং তার পরিবারের অন্যদের ডেকে ঘণ্টা কয়েক ধরে বোঝানো হয়। তার পর কন্যা-সহ তাঁদের পাঠানো হয় বাড়িতে।

তবে, আব্দুল জানান, নয়নতারার উপরে এমন কোনও চাপই বাড়ি থেকে দেওয়া হয়নি। তিনি বলেন, ‘‘আমি তো কিছু বুঝতেই পারছি না!’’ তা হলে মেয়ে হয়েছে জানার পরেও হাসপাতালে দেখা করতে এলেন না কেন?

আব্দুলের জবাব, ‘‘কাজ ছিল, তাই।’’ নয়নতারার শ্বশুর হাপিজুলের দাবি, ‘‘কন্যা সন্তান নিয়ে আমাদের কোনও আপত্তি নেই। মেয়েই তো ভাল, মেয়েরাই এখন বাড়ির লোকের যত্ন করে বেশি।’’ তবে, নয়নতারার মা রৌশনা বিবি বলছেন অন্য কথা, ‘‘সন্তানসম্ভবা হওয়ার পর থেকেই মেয়ে জানিয়েছিল, জামাই এবং পরিবারের অন্যরা নাকি, মেয়ে হলে তাড়িয়ে দেবে বলেছিল।’’

ওই হাসপাতালের মনোবিদ রঞ্জন ভট্টাচার্য বলছেন, ‘‘সন্তান জন্মের পরে অনেক মা স্বল্পমেয়াদি অবসাদের স্বীকার হন। এই সময়ে পরিবারের সহানুভূতি খুব প্রয়োজন। নয়নতারার এখন সেটাই খুব দরকার।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন