নিজভূমে বিদেশিনি তকমায় গারদে

২৬ বছরের টুম্পা বালাকে নিয়ে টানাপড়েনে জেরবার জেল-পুলিশ-আদালত। বিদেশি আইনে তিনি এখন বন্দিনী। কিন্তু টুম্পার নামে পরিচয়পত্র বলছে, তাঁর বাড়ি হুগলির মানকুণ্ডুতে (পুরনো বাড়ি চন্দননগরে)।

Advertisement

ঋজু বসু

শেষ আপডেট: ১৭ এপ্রিল ২০১৮ ০৩:২৭
Share:

টুম্পা বালা। নিজস্ব চিত্র

ভোটার কার্ড, পাসপোর্ট, আধার কার্ড— সব রয়েছে তাঁর নামে। এবং সবেতেই তিনি ভারতবাসী। তবু পুলিশের খাতায় তিনি ‘বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারী’! তাই তাঁর ঠিকানা আপাতত দমদম সেন্ট্রাল জেল।

Advertisement

২৬ বছরের টুম্পা বালাকে নিয়ে টানাপড়েনে জেরবার জেল-পুলিশ-আদালত। বিদেশি আইনে তিনি এখন বন্দিনী। কিন্তু টুম্পার নামে পরিচয়পত্র বলছে, তাঁর বাড়ি হুগলির মানকুণ্ডুতে (পুরনো বাড়ি চন্দননগরে)। বারাসত আদালতের নির্দেশে এই বিষয়ে যাবতীয় নথিপত্র খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

দমদমের জেল সুপার দেবাশিস চক্রবর্তী বলেন, ‘‘মেয়েটির কথাবার্তা থেকে ভুল বোঝাবুঝির জেরেই ওঁকে বাংলাদেশি মনে হয়েছিল পুলিশের। আশা করছি, জলদি সব মিটে যাবে।’’

Advertisement

মানকুণ্ডুতে টুম্পার বাবা প্রফুল্ল বালা মনিহারি দোকান চালান। সোমবার বারাসত কোর্ট থেকে দমদম জেলে গিয়ে মেয়ের সঙ্গে দেখা করেন টুম্পার মা নীলিমাদেবী। কাঁদতে কাঁদতে বললেন, ‘‘মেয়ে আমার ছোট থেকেই বুদ্ধি-প্রতিবন্ধী। ওষুধ দিতে হয়। ওর খবর না-এলে আমিও বাঁচতাম না।’’ ভদ্রেশ্বর থানার নিখোঁজ ডায়েরি অনুযায়ী ৩০ মার্চ বাড়িতে রাগারাগি করে বেপাত্তা হন টুম্পা। ১৩ এপ্রিল বারাসত কোর্টের উকিল অমিত রায়ের ফোন আসার আগে মেয়ের খোঁজ পায়নি পরিবার।

টুম্পার উদ্ধারে অমিতবাবু ছাড়াও যুক্ত আছেন বাংলাদেশের পিরোজপুর জেলায় জিয়ানগর থানার ইনস্পেক্টর মহম্মদ নাসিরুদ্দিন। কয়েক মাস আগে মায়ের সঙ্গে জিয়ানগরের হোগলাবনিয়া গ্রামেই বেড়াতে যান টুম্পা। তাঁর ঠাকুরদার ভাইয়ের পরিবার বাংলাদেশেই থিতু। ‘‘ও-দেশে ক’টা দিন গ্রামে মাছ ধরা আর গাছে চড়ার আনন্দে মেতেছিল মেয়েটা। বারবার বলত, ‘মা আবার নিয়ে চলো’,’’ বললেন টুম্পার মা। জেল-কর্তৃপক্ষের বক্তব্য, ওই তরুণী কোনও মতে মায়ের নামটা বলছিলেন। আর খালি হোগলাবনিয়া আর জিয়ানগরের কথা! তা থেকে পুলিশ, জেলকর্তা-সহ সকলেরই ধারণা হয়, তিনি বাংলাদেশি। ডেপুটি জেল সুপার চিরঞ্জিত ঘোষের অনুরোধে টুম্পার পরিবারের খোঁজ শুরু করেন অমিতবাবু। নেট ঘেঁটে জিয়ানগরের ওসি-র নম্বর জোগাড় করেন তিনিই। নাসিরুদ্দিন সাহেব বললেন, ‘‘হোগলাবনিয়ায় মেয়েটির চাচা (ঠাকুরদার ভাইয়ের ছেলে) ভুবন বালার খোঁজ পেয়ে যাই। তাঁর কাছ থেকে মেয়েটির বাবার ফোন নম্বর জোগাড় করে অমিতবাবুকে দিয়েছি।’’ দিশা মেলে সেই ফোনেই। ‘‘আশা করছি, মেয়েটি আবার জীবনের ছন্দ ফিরে পাবে,’’ বলেন জেল সুপার।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন