Mental Illness

ফিরে এসেছে স্মৃতি, ঘরের পথে দুই বাংলাদেশি কন্যা

আজ সোমবার জন্মভূমি বাংলাদেশে ফিরছেন শীলা খাতুন ও নাহিদা সুলতানা। এ দিন বেনাপোল সীমান্তে দু’দেশের কর্মকর্তা ও অফিসারদের উপস্থিতিতেই বাড়ির লোকের হাতে তুলে দেওয়া হচ্ছে তাঁদের।

Advertisement

পারিজাত বন্দ্যোপাধ্যায়

কলকাতা শেষ আপডেট: ২১ মে ২০১৮ ০৩:৪৭
Share:

শীলা খাতুন (উপরে) ও নাহিদা সুলতানা। নিজস্ব চিত্র

সাত বছর পরে মায়ের হাতের গরম ভাত, মাছের ঝোলের আস্বাদ! সাত বছর পরে ফেলে আসা গ্রাম, গাংপাড়, ছোট ভাই-বোন, মামু-খালা-ফুফি, ছোটবেলার সঙ্গীদের দেখার আনন্দ।

Advertisement

আজ সোমবার জন্মভূমি বাংলাদেশে ফিরছেন শীলা খাতুন ও নাহিদা সুলতানা। এ দিন বেনাপোল সীমান্তে দু’দেশের কর্মকর্তা ও অফিসারদের উপস্থিতিতেই বাড়ির লোকের হাতে তুলে দেওয়া হচ্ছে তাঁদের।

মানসিক সমস্যার কারণে এই দু’জন এলোমেলো ঘুরতে-ঘুরতে পার করে ফেলেছিলেন সীমান্ত। বহু জায়গা ঘুরে শেষে এসে পড়েছিলেন কলকাতা শহরে। হেস্টিংস থানা ও গড়িয়াহাট থানার পুলিশ যথাক্রমে ২০১১ এবং ২০১২ সালে পর পর নাহিদা ও শীলাকে তুলে দিয়েছিল
রাস্তার মানসিক ভারসাম্যহীন ভবঘুরেদের জন্য তৈরি সংস্থা ঈশ্বর সঙ্কল্পের হোমে।

Advertisement

চিকিৎসায় সাড়া দিয়ে ক্রমশ স্মৃতি ফিরে পেতে শুরু করেন দু’জনে। নাম, ঠিকানা, বাবার নাম বলতে পারেন। সংস্থার প্রধান সর্বাণী দাস রায়ের কথায়, ‘‘এর পরের পর্বটা ছিল সবচেয়ে কঠিন। প্রথমে ঠিকানা খুঁজে বাড়ি চিহ্নিত করা। তার পরে দুই দেশের সরকারি কর্তাদের সঙ্গে লাগাতার যোগাযোগ রেখে, তদ্বির করে তাঁদের বাংলাদেশে ফেরানোর অনুমতি জোগাড় করা। গত ৮ মে ‘ফরেনার রিজিয়োনাল রেজিস্ট্রেশন অফিস’ থেকে সেই পারমিট পাওয়া গিয়েছে।’’ সর্বাণী জানান, এর মধ্যে বাড়ির লোকের সঙ্গে ফোনে ওদের কথাও হয়েছে।

বাংলাদেশের ঝিনাইদহের মগেদাশপুর গ্রামে বাড়ি শীলার। সেখান থেকে টেলিফোনে তাঁর বাবা খোদাবক্স বলেন, ‘‘মাথা়ডা এট্যু খারাপ হয়েছিল। লোকে বইলতো মেইয়ে মরি গিয়েছে। এত দিন পরে নিয়া আসবো তারে।’’ নাহিদার বাড়ি চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের বড়বাড়ি গ্রামে। সেখান থেকে তাঁর বাবা করিমও জানালেন, মেয়েকে কোনও দিন ফিরে পাবেন ভাবেননি। তাঁর দ্বিতীয় স্ত্রী জটিল অসুখে ভুগছেন বলে তিনি বেনাপোল আসতে পারছেন না। তবে বাংলাদেশের বিদেশ দফতরের কর্তাদের সঙ্গে কথা হয়েছে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তারা মেয়েকে সীতাকুণ্ডে নিয়ে আসবেন।

দু’জনকে ফেরানোর বিষয়ে অন্যতম ভূমিকায় ছিলেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর অফিসের ডেপুটি সেক্রেটারি আব্দুল বাশার। যে সংস্থার কাছে তাঁরা ছিলেন সেখানকার কর্মী তপন প্রধান জানান, বাংলাদেশ ডেপুটি হাই কমিশন ও রাজ্য সরকারের সঙ্গে মেয়েদের ফেরানোর বিষয়ে কথাবার্তা ও নথিপত্র চালাচালি হওয়ার সময় আব্দুল বাশারের সঙ্গে যোগাযোগ হয়। ঘটনাচক্রে শীলার বাবা এক সময় তাঁদের বাড়ি কাজ করতেন। টেলিফোনে আব্দুল বাশার বলেন, ‘‘আমার বাবা আমাকে এক দিন বললেন, শীলাকে ফেরানোর ব্যাপারে একটু সাহায্য করে দিতে। আমার পক্ষে যতটা সম্ভব করেছি।’’

বাক্সপ্যাঁটরা বাঁধা হয়ে গিয়েছে দুই মেয়ের। ‘ইন্ডিয়া’য় তাঁরা রেখে যাচ্ছেন জীবনের একটা অধ্যায়। যেখানে রক্তের সম্পর্কের না-হয়েও কিছু মানুষ হয়েছেন তাঁদের সহায়। হারিয়ে যাওয়া মেয়েদের ফিরে আসার রূপকথায় তাঁরাই জাদুকাঠি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন