টহল: রানিগঞ্জ বাজার এলাকায়।
চার দিন পেরিয়ে গিয়েছে। তারপরেও পুরোপুরি স্বাভাবিক হয়নি রানিগঞ্জ-আসানসোলের বিস্তীর্ণ এলাকা। পরিস্থিতির খোঁজখবর রাখছেন এমন অনেকেই মনে করছেন, গোলমালের শুরুতেই ‘কঠোর’ পুলিশি পদক্ষেপ হলে অশান্তি এতটা ছড়াত না।
অতীতে রাজ্যের বিভিন্ন স্থানে গোষ্ঠী সংঘর্ষের ঘটনা সামলেছেন এমন পুলিশ অফিসারদের বক্তব্য, ‘‘পুলিশের কড়া মনোভাব এবং পর্যাপ্ত স্থানীয় সূত্রের খবর থাকাটা জরুরি ছিল। কিন্তু আসানসোল-রানিগঞ্জে পুলিশ প্রাথমিকভাবে নরম মনোভাব দেখায়, কোথায় কী হতে পারে তা সম্পর্কে নির্দিষ্ট খবরও ছিল না। ফলে পুলিশ শুরুতে পরিস্থিতি সামলাতে পারেনি।’’ পরে অবশ্য কলকাতা থেকে সিনিয়র অফিসার এবং পুলিশ বাহিনী পৌঁছলে এলাকা নিয়ন্ত্রণে এসেছে। সোমবারের শুরু হওয়া অশান্তি সামলে পরিবেশ কিছুটা স্বাভাবিক করতে বৃহস্পতিবার গড়িয়ে গিয়েছে। যদিও এ দিনও শহরজুড়ে ১৪৪ ধারা বলবৎ ছিল। ইন্টারনেট পরিষেরাও চালু করেনি প্রশাসন।
পুলিশের তৎপরতার অভাবের কথা জানিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশ। তাঁদের অভিযোগ, সোমবার দুপুরে শহরের হাটিয়াতলা থেকে রাজারবাঁধে শোভাযাত্রার পথে পুরো এলাকায় পুলিশ মোতায়েন ছিল না। ওই এলাকায় সাম্প্রতিক অতীতেও বেশ কয়েকবার গোলমাল বেধেছিল। রামনবমীর দিন গোলমালের খবর চাউর হওয়ার পরেও থানার কাছাকাছি কোথাও পুলিশি ব্যারিকেড দেখা যায়নি। অথচ, উদ্যোক্তারা জানিয়েছেন, শোভাযাত্রার তিন দিন আগে তাঁদের সঙ্গে পুলিশের আলোচনা হয়। তার পরেও সে দিন পথে পর্যাপ্ত সংখ্যক পুলিশ ছিল না।
মঙ্গলবার সন্ধ্যায় আসানসোলের রেলপাড় এলাকায় একটি শোভাযাত্রাকে কেন্দ্র করে ফের গোলমাল বাধে। বাসিন্দাদের একাংশের অভিযোগ, রানিগঞ্জের ঘটনার পর দিনের শোভাযাত্রায় আরও পুলিশ রাখার প্রয়োজন ছিল। বিশেষ করে রেলপাড়ে অতীতেও নানা ঘটনা ঘটছে। কিন্তু সে দিনও শোভাযাত্রার তুলনায় পুলিশি উপস্থিতি ছিল হাতে গোনা।
জেলা পুলিশের কোনও কোনও অফিসার জানাচ্ছেন, মঙ্গলবার গোলমালের শুরুতেই যে পুলিশ ‘অ্যাকশন’ হওয়ার কথা ছিল তা হয়নি। পুলিশ বরং রাজনৈতিক নেতাদের উপর ভরসা করে অশান্তি নিয়ন্ত্রণ করতে চেয়েছিল। তাতে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। আসানসোলের বেশ কিছু স্থানে গোষ্ঠী সংঘর্ষ মারাত্মক আকার নেয়। আসানসোল কমিশনারেটের একার পক্ষে যে সংঘর্ষ থামানো সম্ভব নয়, তা বুঝতে পারে নবান্ন। তখনই পাহাড় সামলে আসা তিন অফিসারকে আসানসোলে পাঠানো হয়।
এক কর্তা জানাচ্ছেন, গোষ্ঠী সংঘর্ষের সময় জনা কয়েক ‘কড়া ধাঁচের’ অফিসারের নেতৃত্বে সাহসী ছেলেদের নিয়ে অপারেশন করতে হয়। ধূলাগড়, বসিরহাটে তেমনই হয়েছিল। পুলিশকে যদি সে ক্ষেত্রে লাঠি-গুলি চালাতে হয় তাতেও সরকারি অনুমোদন থাকা প্রয়োজন। কিন্তু এ ক্ষেত্রে সে সব ছিল কি না তা এখনও স্পষ্ট নয়। আর গোলমালের শুরুতেই এক সিনিয়র পুলিশ অফিসারের হাতে বোমা পড়ায় নীচুতলার পুলিশ কর্মীদের মনোবল তলানিতে ছিল। সেই কারণেই কলকাতা থেকে ফোর্স যাওয়ার পরেই এলাকায় শান্তি ফিরেছে।
নবান্নের এক শীর্ষ কর্তার কথায়,‘‘আসানসোলে এমন কোনও কোনও অফিসার রয়েছেন যাঁরা দক্ষিণ ২৪ পরগনায় থাকাকালীন গঙ্গাসাগরে পদপৃষ্ট হওয়ার ঘটনা, মগরাহাটে চোলাই খেয়ে একশোর বেশি মৃত্যু বা বিদ্যুৎ সংযোগ কাটতে গিয়ে গুলি চালানোর ঘটনা ঘটেছিল। এখন আসানসোলেও গোষ্ঠী সংঘর্ষ সামলাতে ব্যর্থ তাঁরা।’’