নির্যাতিতাদের মামলা আটকে কর্মবিরতিতেই

১৯ ফেব্রুয়ারি থেকে দু’মাসেরও বেশি সময় ধরে আইনজীবীরা কাজ বন্ধ রাখায় সব শ্রেণির বিচারপ্রার্থীই নাকাল হচ্ছেন। হাইকোর্টের ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতির আবেদনেও কর্মবিরতির অবসান ঘটানো হয়নি।

Advertisement

প্রদীপ্তকান্তি ঘোষ

কলকাতা শেষ আপডেট: ২১ এপ্রিল ২০১৮ ০৩:১৭
Share:

জনস্বার্থের মামলাটি হয়েছিল বছরখানেক আগে। তার পরে দীর্ঘ সময় কেটে গেলেও কোনও শুনানি হয়নি। শেষ পর্যন্ত শুক্রবার তা শুনতে চেয়েছিলেন কলকাতা হাইকোর্টের ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন ডিভিশন বেঞ্চ। কিন্তু বাদ সাধল আইনজীবীদের কর্মবিরতি! পাচার চক্রের হাতে পড়ে নির্যাতিত মেয়েদের পুনর্বাসনের জন্য উত্তর ২৪ পরগনার তিন তরুণী যে-লড়াই করছেন, ফের থমকে গেল সেটা।

Advertisement

১৯ ফেব্রুয়ারি থেকে দু’মাসেরও বেশি সময় ধরে আইনজীবীরা কাজ বন্ধ রাখায় সব শ্রেণির বিচারপ্রার্থীই নাকাল হচ্ছেন। হাইকোর্টের ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতির আবেদনেও কর্মবিরতির অবসান ঘটানো হয়নি। বরং বৃহস্পতিবার তার মেয়াদ আরও এক দফা বাড়ানো হয়েছে। এর মধ্যেই পঞ্চায়েত ভোট এবং অন্য কিছু মামলা হচ্ছে। কিন্তু খোদ ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি এ দিন ওই তিন তরুণীর মামলাটি শুনতে চাইলেও কৌঁসুলিদের প্রলম্বিত কর্মবিরতির জন্যই তা আর এগোল না।

ওই মামলায় আবেদন জানানো হয়েছে, পাচারের শিকার হওয়া মেয়েদের সমাজের মূল স্রোতে ফেরানোর জন্য রাজ্য সরকার যাতে নির্দিষ্ট প্রকল্প ঘোষণা করে, সেই নির্দেশ দেওয়া হোক। একই সঙ্গে পাচারের পরে যে-সব তরুণীকে উদ্ধার করা হয়েছে, তাঁদের পুনর্বাসনের দাবিতে গত বছরের ১৯ মে হাইকোর্টে একটি জনস্বার্থ মামলা দায়ের করেন তিন ভুক্তভোগী তরুণী—হাসনাবাদের রুনা খাতুন, বারাসতের রাজিয়া বিবি এবং স্বরূপনগরের রোকেয়া গাইন (সবই ছদ্মনাম)। সমাজের মূল স্রোতে ফিরে আসার সুযোগ পেয়ে ওই তিন তরুণী এখন অন্যদের অধিকারের জন্য লড়াই করছেন। তাঁদের সঙ্গে রয়েছেন মনোবিদ পম্পি বন্দ্যোপাধ্যায় এবং সমাজকর্মী রবীন্দ্রনাথ বিশ্বাস।

Advertisement

হাইকোর্টের ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি জ্যোতির্ময় ভট্টাচার্য এবং বিচারপতি অরিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ডিভিশন বেঞ্চ এ দিন জানায়, আবেদনকারিণীরা নিজেরা সওয়াল করতে চাইলে আইনজীবীর ‘নো অবজেকশন সার্টিফিকেট’ লাগবে। মামলাটিতে রুনা, রাজিয়াদের আইনজীবী ছিলেন অনির্বাণ তরফদার। তিনি বলেন, ‘‘আমাদের ‘নো অবজেকশন’ দিতে অসুবিধা নেই।’’

গত বছরের ১৯ মে মামলাটি দায়ের করা হলেও সেটি তালিকাভুক্ত হয় গত ডিসেম্বরে। ছ’মাস কেটে যাওয়ায় ডিসেম্বর নতুন করে মামলার সব পক্ষকে নোটিস দিতে বলে হাইকোর্ট। দীর্ঘদিন মামলাটি তালিকাভুক্ত থাকলেও আদালতের নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে তা ওঠেনি।

প্রশ্ন উঠছে, আইনজীবীদের কর্মবিরতি কি সমাজকে আলো দেখানোর লড়াইয়ে বাধা সৃষ্টি করছে? মনোবিদ পম্পিদেবী বলেন, ‘‘আদালতেই দীর্ঘসূত্রতা চলছে। আইনজীবীদের কর্মবিরতির ঝামেলা তো আছেই। রাজ্য সরকারের তরফেও কেউ হাজির হচ্ছেন না।’’ মামলায় রাজ্য সরকারের স্বরাষ্ট্র, নারী, শিশু এবং সমাজকল্যাণ, স্বাস্থ্য, পঞ্চায়েত, আবাসন এবং অর্থ দফতরকেও যুক্ত করা হয়েছে।

পরিস্থিতি ঘোরালো হয়ে উঠলেও হাল ছাড়তে রাজি নন রুনা, রাজিয়ারা। ‘‘নিখোঁজ হয়ে যাওয়ার পরে পুনর্বাসনের কোনও ব্যবস্থা নেই। সেই অধিকারের লড়াইটাই তো লড়ছি। জয়ের বিষয়ে আমরা আশাবাদী,’’ বলছেন তিন তরুণী।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন