ফাইল চিত্র।
শুধু শহর বা শহরতলিতেই আটকে নেই ভাগাড়ের পচা মাংসের কারবার। রাজ্য জুড়েই সক্রিয় এই অসাধু চক্র। এবং এই ব্যবসায় জড়িত রয়েছেন সমাজের বেশ কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তিও। তদন্তে জোগাড় হওয়া তথ্যের ভিত্তিতে আদালতে এ কথাই জানাল পুলিশ। বস্তুত, এই বিষ-ব্যবসার বিস্তৃতি এমনই যে, তদন্তভার হাতে নেওয়ার কথা ভাবছে রাজ্য গোয়েন্দা সংস্থা সিআইডি।
মৃত পশুর মাংস পাচার-কাণ্ডে ধৃত ছয় পাণ্ডাকে সোমবার আলিপুর আদালতের চতুর্থ অতিরিক্ত বিচারক সম্রাট রায়ের এজলাসে তোলা হয়। ধৃতদের পুলিশি হেফাজতে নেওয়া কেন দরকার, তা বলতে গিয়ে মামলার তদন্তকারী অফিসার অজয় রায় বলেন, ‘‘ধৃতেরা অধিকাংশই শহরতলির লোকজন। সেখানকার বিভিন্ন হিমঘরেও মৃত পশুর মাংস রাখা হত। তাই তাদের আরও জিজ্ঞাসাবাদ করা দরকার। এই পাচার-চক্রে একাধিক প্রভাবশালী ব্যক্তিও রয়েছেন।’’
ধৃতদের আইনজীবীরা দাবি করেন, পুলিশ মিথ্যা মামলা দায়ের করেছে। হিমঘরের গুদামে মাংস রাখা হয়েছিল। ওই মাংস ভাগাড়ের কি না, তা নিয়ে কোনও তথ্য পেশ করা হয়নি।’’ দু’পক্ষের সওয়ালের পরে ধৃতদের পাঁচ দিন পুলিশি হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেন বিচারক।
পুলিশ সূত্রের খবর, ভাগাড়ে যে সমস্ত পশুর দেহ ফেলা হত, তাদের অধিকাংশেরই মৃত্যুর কারণ কোনও জটিল রোগ। সেই মাংস থেকে শরীরে বিষক্রিয়াও হতে পারে। এই পাচার-চক্রের সঙ্গে কোনও নামী সংস্থার যোগ রয়েছে কি না, তা-ও তদন্তে দেখা হচ্ছে। নারকেলডাঙা থানা এলাকার হিমঘরের ম্যানেজার ফিরোজ হোসেনকে জেরা করে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে এমনটাই জানিয়েছেন তদন্তকারী অফিসারেরা। ঘটনাচক্রে, এ দিনই একটি নামী বেকারি সংস্থা পুলিশে অভিযোগ দায়ের করে বলেছে, হোয়াটসঅ্যাপ ও সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটে তাদের সংস্থার লোগো ব্যবহার করে মিথ্যা প্রচার চালানো হচ্ছে।
ডায়মন্ড হারবার পুলিশ জেলার এক কর্তা জানিয়েছেন, প্রায় দশ বছর ধরে ধীরে ধীরে এই ব্যবসা জাল বিস্তার করেছে। যার প্রেক্ষিতে মাংস-কাণ্ডে তদন্তে নামার কথা ভাবছে সিআইডি-ও। রাজ্য গোয়েন্দা সংস্থার এক কর্তা জানান, মৃত পশুর মাংস পাচার-কাণ্ডে তদন্তের গতিপ্রকৃতি নিয়ে ডায়মন্ড হারবার জেলা পুলিশের সঙ্গে আলোচনা করা হবে। প্রয়োজনে সিআইডি তদন্তভার নিতে পারে।
ভাগাড়-কাণ্ডে কলকাতা হাইকোর্টে মামলা দায়েরের কথা ভাবছে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন। তাদের পক্ষে আইনজীবী অরিন্দম দাস সোমবার জানান, মামলার আবেদনে বলা হবে, ভাগাড়-তদন্তে একটি উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন কমিটি গড়ে দিক আদালত। তৈরি করা হোক বিশেষ তদন্তকারী দলও। সেই দলে সংশ্লিষ্ট সব দফতরের প্রতিনিধিদের রাখা হোক।
এ সবের মধ্যেই অবশ্য চলছে অভিযান। বিধাননগর কমিশনারেট সূত্রের খবর, নিউ টাউনের যে খামারে পুলিশি অভিযান চালানো হয়েছিল, সেখানকার সিল করা ফ্রিজার ভাঙা হয়েছে বলে খবর পেয়ে এ দিন সেখানে ফের হানা দেয় পুলিশ। বাজেয়াপ্ত করা হয় ফ্রিজারটি। খামারের দুই কর্তা এখনও অধরা। তাদের আরও একটি খামার রয়েছে লেকটাউন থানা এলাকায়। অভিযোগ, সেখানেও মরা মুরগির পালক
ছাড়িয়ে মাংস রেখে দেওয়া হত ফ্রিজারে। সেই মাংসই পরে সরবরাহ করা হত। সংরক্ষণের জন্য রাসায়নিক দ্রবণ ব্যবহার করা হত বলেও অভিযোগ উঠেছে।
যদিও বিধাননগর পুলিশের এক কর্তা জানান, জেরায় ধৃতেরা দাবি করেছে, বরাত পেলে মুরগির মাংস কেটে ফ্রিজে প্লাস্টিকে মুড়ে রেখে দেওয়া হত। কিন্তু কোনও রাসায়নিক ব্যবহার করা হত না। তাদের দাবি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
অন্য দিকে, বারাসতের চাঁপাডালি মোড় সংলগ্ন এলাকার একটি রেস্তরাঁয় অভিযান চালিয়ে স্টোর রুমের ফ্রিজে পচা মাছ-মাংস উদ্ধার করেছে বারাসত পুরসভা। তার নমুনা পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে। পুরপ্রধান বলেন, ‘‘পুরসভা ও পুলিশ এখন থেকে নিয়মিত রেস্তরাঁগুলির উপরে নজরদারি চালাবে। কাঁচা মাংস কেনার সময়ে প্রাপ্ত ক্যাশ মেমো রেস্তরাঁগুলিকে রেখে দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’’