দূরশিক্ষায় গবেষণার স্বীকৃতি দিল শীর্ষ আদালত

শীর্ষ আদালতের বিচারপতি শরদ অরবিন্দ ববডে এবং বিচারপতি এল নাগেশ্বর রাওয়ের ডিভিশন বেঞ্চ ২ মে জানিয়েছে, মুক্ত ও সাধারণ বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রিকে সমান মর্যাদা দিতে হবে। এক মাসের মধ্যে কলেজের অধ্যক্ষ-পদে মতিনকে নিয়োগ করার জন্য পশ্চিমবঙ্গ কলেজ সার্ভিস কমিশন বা এসএসসি-কে নির্দেশ দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট।

Advertisement

কুন্তক চট্টোপাধ্যায়

কলকাতা শেষ আপডেট: ২০ মে ২০১৮ ০৩:১০
Share:

দূরশিক্ষায় গবেষণা কি বৈধ নয়?

Advertisement

এই প্রশ্নেই আটকে গিয়েছিল অধ্যক্ষ-পদে নিয়োগ। তবে হাল ছাড়েননি অর্থনীতির শিক্ষক আব্দুল মতিন। সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়ে নিজের অধিকার ছিনিয়ে নিয়েছেন তিনি। তাঁর দায়ের করা মামলার রায়ে শীর্ষ আদালতের বিচারপতি শরদ অরবিন্দ ববডে এবং বিচারপতি এল নাগেশ্বর রাওয়ের ডিভিশন বেঞ্চ ২ মে জানিয়েছে, মুক্ত ও সাধারণ বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রিকে সমান মর্যাদা দিতে হবে। এক মাসের মধ্যে কলেজের অধ্যক্ষ-পদে মতিনকে নিয়োগ করার জন্য পশ্চিমবঙ্গ কলেজ সার্ভিস কমিশন বা এসএসসি-কে নির্দেশ দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। এই লড়াইয়ে কেটে গিয়েছে ছ’বছর!

২ মে মামলার রায়ে এক মাসের সময়সীমা দিয়েছিল শীর্ষ আদালত। তার পরেও কেটে গিয়েছে দু’সপ্তাহ। বৃহস্পতিবার মতিন বলেন, ‘‘এখনও কলেজ সার্ভিস কমিশনের কাছ থেকে এ ব্যাপারে কোনও চিঠি হাতে পাইনি।’’

Advertisement

মতিন ঘাটালের রবীন্দ্র শতবার্ষিকী মহাবিদ্যালয়ের অর্থনীতির শিক্ষক। ২০০৮ সালে নেতাজি সুভাষ মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতেই পিএইচ ডি করেন। ২০১২ সালে তিনি পূর্ব মেদিনীপুরের তাম্রলিপ্ত মহাবিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ হওয়ার দৌড়ে কলেজ সার্ভিস কমিশনের প্যানেলে দ্বিতীয় স্থান অধিকার করেন।

প্রথম স্থানাধিকারী প্রার্থী যোগ দিতে রাজি না-হওয়ায় মতিনকেই নিয়োগের সিদ্ধান্ত নেয় কমিশন। কিন্তু তৃতীয় পদে থাকা মণিশঙ্কর মাইতি নামে এক কলেজ-শিক্ষক কলকাতা হাইকোর্টে মামলা করে বলেন, কলেজে নিয়োগের ক্ষেত্রে নেতাজি সুভাষ মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের পিএইচ ডি গ্রাহ্য নয়। সেই মামলায় মতিনের নিয়োগ বাতিল করে নতুন করে নিয়োগের সিদ্ধান্ত নিতে বলে হাইকোর্ট। মতিন হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চে আবেদন জানানোর পরেও রায় বদল হয়নি। অগত্যা তিনি সর্বোচ্চ আদালতে মামলা করেন। ইতিমধ্যে মণিশঙ্করবাবুও অবশ্য ওই পদে যোগ দিতে পারেননি।

মামলায় রায়ে ইউজিসি-র কয়েকটি চিঠির উল্লেখ করে সুপ্রিম কোর্ট বলেছে, মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রিকে সাধারণ বিশ্ববিদ্যালয়ের সমমর্যাদা দেওয়ার কথা আগেই বলা হয়েছে। এটাও বলা হয়েছে যে, মণিশঙ্করবাবু নিযুক্ত হলেও তিনি ২০১৮ সালের জানুয়ারিতে
অবসর নিতেন। কিন্তু মতিন এখনও অবসরের বয়সে পৌঁছননি। ফলে নিয়োগের ক্ষেত্রে আইনি বাধা থাকছে না। গত ফেব্রুয়ারিতেও ইউজিসি একটি বিজ্ঞপ্তি জারি করে বলেছে, উচ্চশিক্ষা প্রসারের কথা মাথায় রেখেই মুক্ত ও দূরশিক্ষায় প্রাপ্ত ডিগ্রিকে সাধারণ বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রির সমতুল বলে গ্রাহ্য করতে হবে। তবে ডাক্তারি, ইঞ্জিনিয়ারিং, নার্সিং, ফার্মাসির মতো কোর্স মুক্ত ও দূরশিক্ষার অন্তর্ভুক্ত হবে না।
ফলে সে-দিক থেকেও মতিনের নিয়োগে কোনও বাধা ছিল না বলেই মনে করছেন শিক্ষা জগতের অনেকেই।

মতিন বলছেন, ‘‘আমি অধ্যক্ষ-পদে বসার আগেই মামলা হয়েছিল। এর পিছনে অন্য কোনও কারণ ছিল কি না, সেই বিষয়ে আমার কিছু জানা নেই। ২০১২ সালে যোগ দিলে ১১ বছর অধ্যক্ষের দায়িত্ব সামলাতে পারতাম।’’ শীর্ষ আদালতের রায়ের পরে কর্মজীবনের শেষ পাঁচ বছর তিনি সেই কাজ করতে পারেন কি না, সে-দিকেই তাকিয়ে শিক্ষক শিবির।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন