অশান্তি রুখতে পাহারা দেন সামসের, আশিসরা

গোষ্ঠী সংঘর্ষে তেতে ওঠা আসানসোল-রানিগঞ্জে মিলেমিশে থাকা শুরু হয়েছে এ ভাবেই। শনিবার রানিগঞ্জে ষোলো আনা দুর্গামন্দিরের পাশে খলিলুর রহমানের বাড়িতে সর্বধর্ম সম্মেলনের আয়োজন হয়।

Advertisement

সুশান্ত বণিক ও নীলোৎপল রায়চৌধুরী

আসানসোল ও রানিগঞ্জ শেষ আপডেট: ০১ এপ্রিল ২০১৮ ০৩:২৭
Share:

পায়ে-পায়ে: দুর্গাপুরে শান্তি মিছিল। শনিবার। ছবি: বিকাশ মশান।

রোজ এক সঙ্গে দোকানে বসে চা খাওয়া তাঁদের বহু দিনের অভ্যাস। এলাকায় অশান্তির পরে যখন শহরের অনেকে বাড়ি থেকে বেরোতে ভয় পাচ্ছেন, আসানসোলের রেলপাড় এলাকার সামসের আলম, বিট্টু বর্মারা সকালে সেই আড্ডা চালিয়ে যাচ্ছেন। তাঁরা বলছেন, ‘‘এটা বন্ধ করা যাবে না। সবাইকে এক হয়ে থাকতে হবে।’’

Advertisement

গোষ্ঠী সংঘর্ষে তেতে ওঠা আসানসোল-রানিগঞ্জে মিলেমিশে থাকা শুরু হয়েছে এ ভাবেই। শনিবার রানিগঞ্জে ষোলো আনা দুর্গামন্দিরের পাশে খলিলুর রহমানের বাড়িতে সর্বধর্ম সম্মেলনের আয়োজন হয়। রেলপাড়ের লোকো মসজিদ এলাকায় সামসের, বিট্টুরাও শান্তি মিছিল করার কথা ভাবছেন। ছন্দে ফিরছে আসানসোলও। তবে ১৪৪ ধারার সময়সীমা এক দিন বাড়িয়ে রবিবার রাত ১২টা পর্যন্ত করা হয়েছে।

রানিগঞ্জে খলিলুর ও মিহির সিংহের উদ্যোগে এ দিন সব পক্ষের লোকজনকে নিয়ে সভাটি হয়। স্বামী সুব্রতানন্দ, ফাদার শুভেন্দু ঘোষ, ইমাম হাফিজ মহম্মদ নাসিমউদ্দিনেরা জানান, যা হয়েছে তা ভুলে যেতে হবে। পুরনো এই খনি শহরে সবাইকে এক সঙ্গে শান্তিতে থাকতে হবে। হরজিৎ সিংহ বোগা বলেন, ‘‘এখানে সবার সঙ্গে বসে মনে হচ্ছে প্রাণ ফিরে পেলাম।’’ গোলমালের পর রানিগঞ্জে বাস বিশেষ চলছিল না। এ দিন তা পুরোদমে চালু হওয়ায় মিষ্টিমুখ করেন বাসকর্মী অনিমেষ পাল, মহম্মদ রহমতুল্লা, উজ্জ্বল ঘোষেরা। তাঁরা বলেন, ‘‘গোলমাল পাকলে আমাদের মতো দিন আনি দিন খাই মানুষের ক্ষতি। এ সব বন্ধ হওয়া প্রয়োজন।’’

Advertisement

রেলপাড়ের লোকো মসজিদ এলাকায় রোহিত প্রসাদের চা-চপ-মিষ্টির দোকানে বসে প্রবীণ বাসিন্দা মহম্মদ মুর্তিজ জানান, গোলমাল ছড়িয়ে পড়ায় তাঁরা ভয় পেয়েছিলেন। কিন্তু ঠিক করেন, সবাই মিলে এলাকা পাহারা দেবেন। সাজিদ খান, আশিস বর্মারা বলেন, ‘‘এলাকায় শান্তি মিছিলের কথা ভাবছি। তবে এখনও অনেকে বাড়ি থেকে বেরোতে চাইছেন না। ক’দিন পরে সবাই মিলে বেরোব।’’ এ দিন দুর্গাপুরে সব পক্ষ মিলে শান্তির ডাক দিয়ে মিছিল করে।

দিন তিনেকের থমথমে ভাব কাটিয়ে পুরনো মেজাজে ফিরছে আসানসোল শহরও। এ দিন চৈত্র সেলের বাজারেও ঢল নামে। তবে ইন্টারনেট পরিষেবা এখনও স্বাভাবিক না হওয়ায় অফিস-কাছারির কাজে ব্যাঘাত ঘটেছে। পুলিশ জানায়, আসানসোলে আরও ৪৬ ও রানিগঞ্জে ২১ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন