এত অশান্তি! ফর্মে জাত-ধর্ম বাদ দিল সোনালি

স্কুলে ‘ভর্তির’ ফর্মে জাত-ধর্মের উল্লেখে আপত্তি তুলল মহম্মদবাজার থানার রানিপুর গ্রামের মেয়ে সোনালি হেমব্রম।

Advertisement

দয়াল সেনগুপ্ত

রানিপুর (মহম্মদবাজার) শেষ আপডেট: ০২ এপ্রিল ২০১৮ ০৩:৪৯
Share:

রানিপুরের বাড়িতে সোনালি। ছবি: তাপস বন্দ্যোপাধ্যায়

এক লক্ষেরও বেশি স্কুলপড়ুয়া তা করেছে কেরলে। বাংলায় করল এক জন।

Advertisement

স্কুলে ‘ভর্তির’ ফর্মে জাত-ধর্মের উল্লেখে আপত্তি তুলল মহম্মদবাজার থানার রানিপুর গ্রামের মেয়ে সোনালি হেমব্রম। তার কথায়, ‘‘টেলিভিশনে দেখেছি ধর্ম নিয়ে রোজ সংঘর্ষ, অশান্তি হচ্ছে। সে জন্যই আমি স্কুলের খাতায় জাত-ধর্ম লিখতে চাইনি। আমি ও সব মানিই না!’’

বীরভূমের জেলা সদর সিউড়ি থেকে প্রায় ৪৫ কিলোমিটার দূরে প্রত্যন্ত গ্রাম রানিপুর। বাসিন্দাদের অধিকাংশই আদিবাসী। কিছু ঘর সংখ্যালঘু। কখনও দিনমজুরি, কখনও ঠিকা কাজ করে সংসার টানেন সোনালির মা লতামণি। মাকে সাহায্য করে ওই কিশোরীর দাদা সুনীল। অর্থসঙ্কটেও মেয়ে পড়াশোনার খরচ চালিয়ে গিয়েছেন লতামণি। গিরিপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের পড়ুয়া সোনালি। গত ডিসেম্বরে ওই স্কুল থেকেই অষ্টম শ্রেণির বার্ষিক পরীক্ষা দেয় সে। লতামণি জানান, এর পরেই রাজমিস্ত্রির জোগাড়ের কাজ করতে ছেলেমেয়েকে নিয়ে মুম্বই পাড়ি দেন তাঁরা। গিরিপুর স্কুলের হাজিরা খাতা থেকে অবশ্য মেয়ের নাম কাটাননি তিনি। মুম্বইয়ে মন টিকছিল না তাঁদের কারও। ২ মার্চ গ্রামেই ফেরেন সবাই।

Advertisement

রানিপুরে আগের মতোই দিনমজুরির কাজ করতে শুরু করেন লতামণি। কিন্তু, মেয়ে ফের স্কুলে পড়তে চাইছিল। কী করবেন ভেবে পাচ্ছিলেন না। এক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সদস্যেরা সোনালিকে নিয়ে যান স্কুলে। প্রধান শিক্ষক রবিউল হক জানান, নতুন ক্লাসে উঠলে প্রতিবারই পড়ুয়াদের সম্পর্কে নতুন করে তথ্য নেওয়া হয়। সে জন্যই ফর্ম পূরণ করা। তাঁর কথায়, ‘‘সোনালি জাত-ধর্ম না লেখায় আমি ওর কাছে কারণ জানতে চাই। বলল, ও ধর্ম মানে না। আমি অবাক হলেও জোর করিনি। কারণ জাত-ধর্ম লেখা আবশ্যিক নয়।’’

আরও পড়ুন: মাজারে মিত্র মন্দির কমিটি

কেরলে যারা জাত-ধর্ম লেখেনি, তাদের মধ্যে লাখ খানেক পড়ুয়াই ছিল প্রাথমিক স্তরের। সে ক্ষেত্রে ওই কাজের পিছনে তাদের অভিভাবকদের ভূমিকাই ছিল প্রধান। কিন্তু, সোনালির মনে এমন ভাবনা এল কোত্থেকে? এর উত্তর জানা নেই মা লতামণি বা দাদা সুনীলের। ভর্তির সময় তিনি মেয়ের সঙ্গে ছিলেন না বলেই জানিয়েছেন ওই মহিলা। সোনালির দাবি, টিভি-র খবর দেখে সে এমন পদক্ষেপ করেছে। আবার নিজেই জানিয়েছে, দেড় মাস ধরে তার বাড়ির টিভি খারাপ।

এলাকাবাসীর একাংশ প্রশ্ন তুলছেন, স্কুল থেকে নাম কাটিয়ে যায়নি সোনালি। ফের তা হলে ভর্তির আবেদনপত্র তাকে পূরণ করতে বলা হল কেন? প্রচারের আলো পেতে মেয়েটিকে কেউ বা কারা এমন করতে বলে থাকতে পারে বলেও তাঁদের অনুমান। পড়শিদের কয়েক জনের আবার বক্তব্য— ‘‘শুনেছি কেরলে এক দল পড়ুয়া জাতের কথা ভর্তির ফর্মে লিখতে চায়নি। দেশে বর্তমান অসহিষ্ণুতার প্রতিবাদ করেছে সে ভাবেই।’’

ঘটনা যা-ই হোক, কেরল করে দেখিয়েছে। বাংলায় এক জন সেই পথে হাঁটল। আপাতত হলেও শুরুটা তো হল। তাই বা কম কী!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন