যখন যে ক্ষমতায় প্রার্থী দেয় তারা। খুঁজে পাওয়া যায় না বিরোধীদের। ফলে বিনা লড়াইয়ে জেতেন শাসক দলের প্রার্থীরাই। প্রায় কুড়ি বছর ধরে এমনই প্রবণতা বজায় রয়েছে গড়বেতা ১ ব্লকের ৩ নম্বর বড়মুড়া গ্রাম পঞ্চায়েতে।
পঞ্চায়েত সমিতি এবং জেলা পরিষদ স্তরে ভোট হয়। কিন্তু বড়মুড়া গ্রাম পঞ্চায়েতের ১১টি আসনে শেষবার ভোট হয়েছিল ১৯৯৮ সালে। এ বারও সবক’টি আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হয়েছেন তৃণমূল প্রার্থীরা। পঞ্চায়েত সমিতির তিনটি আসনে শাসকের প্রতিপক্ষ নেই।
কিন্তু পঞ্চায়েত আইন অনুসারে গ্রাম সংসদের সভায় জয়ীর পাশাপাশি বিজিত প্রার্থীকেও তো থাকতে হয়। তা হলে এখানে বছরের পর বছর ধরে কী ভাবে গঠিত হয় গ্রাম সংসদ? গড়বেতা ১ ব্লকের বিডিও বিমল শর্মা বলেন, ‘‘নিয়ম অনুসারে গ্রাম সংসদে সকলের থাকার কথা। কিন্তু বিরোধী কেউ না থাকলে কী করা যাবে?’’
১৯৯৮-এ সিপিএমকে হারিয়ে বড়মুড়া গ্রাম পঞ্চায়েত দখল করেছিল তৃণমূল-বিজেপি জোট। ২০০৩-এর পঞ্চায়েতে ভোটে গ্রাম পঞ্চায়েতের ১১টি আসনেই বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জেতে সিপিএম। বিনা ভোটে জয়ের ধারা সেই শুরু। ২০০৩ এর পুনরাবৃত্তি ঘটে ২০০৮-এও। ২০১১-তে পালাবদলের পর ২০১৩-তে বড়মুড়া গ্রাম পঞ্চায়েতে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ের ধারা বজায় রাখে তৃণমূল।
কৃষিপ্রধান বড়মুড়ায় এখন রাস্তাঘাটের হাল ফিরেছে, জল, বিদ্যুতের সমস্যা অনেকাংশে মিটেছে। গ্রাম পঞ্চায়েত অফিসের পাশের রাস্তা পিচ হয়েছে। তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক যাদবনগর গ্রামের কয়েকজন বাসিন্দা বলেন, ‘‘আগে দুষ্কৃতীদের মদত দেওয়া হত। এখনও তাই হচ্ছে।’’
এই অঞ্চলের মধ্যেই পড়ে ছোট আঙারিয়া। গত বছর খুন হয়েছিলেন তৃণমূল কর্মী বক্তার মণ্ডলের ভাই ওসমান। তাঁর স্ত্রী আসিয়া মণ্ডল এখানে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিতেছেন। বড়মুড়ায় কেন গ্রাম পঞ্চায়েতে ভোট হয় না? বক্তারের জবাব, ‘‘সিপিএম তো কাউকে প্রার্থী হতেই দেয়নি। এখন উন্নয়ন-সুযোগসুবিধা এত পাচ্ছে বলে মানুষ তৃণমূল ছাড়া কাউকে ভাবতেই পাচ্ছে না।’’ বড়মুড়া অঞ্চলেই বাড়ি তৃণমূলের ব্লক সভাপতি সেবাব্রত ঘোষের। তাঁর কথায়, ‘‘আগে সিপিএম সন্ত্রাস করে কাউকে প্রার্থী না দিতে দিয়ে পঞ্চায়েত দখল করত। এখন তো এসব হয় না। বিরোধীরা নিজেদের অপকর্মের জন্য প্রার্থী দিতে পারে না।’’ সিপিএমের গড়বেতা এরিয়া কমিটির সম্পাদক দিবাকর ভুঁইয়া বলেন, ‘‘আগে গণতন্ত্র ছিল, এখন সেটাই নেই। মামলা আর হামলার ভয়ে কেউই প্রার্থী হতে চান না। ভোট হবে কী করে!’’