রাগদারি সম্ভ্রান্ত স্পর্শে স্মরণীয় কীর্তনরস

তৃষা কলকাতারই মেয়ে, যদিও থাকেন বর্তমানে বৃন্দাবনে। বৈষ্ণবীয় ধর্মসাধনায় তিনি রত আছেন সদ্‌গুরু শ্রী শ্রী বিজয়কৃষ্ণ গোস্বামীর বৈষ্ণবীয় পথে। আর কীর্তনে তাঁর শিক্ষার শুরু শৈশবে মা কাবেরী বসুর সান্নিধ্যে।

Advertisement

সুধীর চক্রবর্তী

শেষ আপডেট: ২৯ এপ্রিল ২০১৮ ০৩:৪২
Share:

কণ্ঠ: আনন্দ পুরস্কারের মঞ্চে সঙ্গীত পরিবেশন করছেন তৃষা বসু। শনিবার। নিজস্ব চিত্র

১৪২৪ সালের আনন্দ পুরস্কারের অনুষ্ঠানের প্রারম্ভিক আকর্ষণ ছিল শ্রীমতী তৃষা বসুর পরিবেশিত তিনটি কীর্তন গান। পরিবেশনের লাবণ্যে ও গান নির্বাচনের স্বাতন্ত্র্যে, তা সমবেত দর্শক-শ্রোতাদের আপ্লুত করে।

Advertisement

তৃষা কলকাতারই মেয়ে, যদিও থাকেন বর্তমানে বৃন্দাবনে। বৈষ্ণবীয় ধর্মসাধনায় তিনি রত আছেন সদ্‌গুরু শ্রী শ্রী বিজয়কৃষ্ণ গোস্বামীর বৈষ্ণবীয় পথে। আর কীর্তনে তাঁর শিক্ষার শুরু শৈশবে মা কাবেরী বসুর সান্নিধ্যে। এখনও তাঁর আধ্যাত্মিক জীবনের মধ্যেই কীর্তনে তালিম নিতে কলকাতায় কীর্তন সুধাকর নিমাই মিত্রের কাছে নিয়মিত আসেন তৃষা। চৈতন্য পরবর্তী মহাজন পদাবলি রচয়িতা গোবিন্দদাসের দু’টি পদ এবং চৈতন্য পূর্ববর্তী পদকার চণ্ডীদাসের একটি পদ তিনি এ দিন পরিবেশন করেন, তাঁর গানের মূল প্রবণতা রাগ-ভিত্তিক এবং কীর্তনের নিজস্ব তাল ও মান বজায় রেখে। তিনি বিশ্বাস করেন সাম্প্রতিক কালে কিছু ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান কীর্তনকে লোকসঙ্গীতের আওতায় আনতে সচেষ্ট। কিন্তু তৃষা এই প্রবণতার প্রতিবাদী। সেই কারণেই তাঁর গানে পরিস্ফুটিত হল রাগদারি গানের সম্ভ্রান্ত রূপরীতি ও বন্দিশ। সুচর্চিত তাঁর কণ্ঠলাবণ্য সকলকে খুশি করেছে। একটি বর্ষা অভিসারের পদ ও আর একটি পূর্বরাগের পদ বিশেষ ভাবে তিনি সুদক্ষ কণ্ঠবাদনে রূপমন্ত করেছেন।

এক-একটি গানের সূচনায় তিনি দেবভাষায় যে পরিচিতিমূলক শ্লোকগুলি ব্যবহার করেছেন, তা যথেষ্ট দ্যোতনাপূর্ণ। তাঁর গানের পরিবেশন রীতিতে মনোহরশাহি কলারূপের স্পর্শ রয়েছে বলে একটি স্বতন্ত্র গভীরতা আমরা পাই। এই মনোহরশাহি কলারূপে মূল গানের সঙ্গে তার আখর বা ব্যাখ্যা জুড়ে দেওয়া হয়। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলতেন, এই আখর হল কীর্তনের তান। তাঁর শেষ নিবেদন ‘সুন্দরী রাধে আওয়ে বনি’ পদটি যদিও গোবিন্দদাসের রচনা কিন্তু তাতে মণ্ডিত আছে রবীন্দ্রপ্রতিভার স্পর্শ। তাতে এই গানটি এক অন্যতর কীর্তন ভাবনাকে উদ্ভাসিত করল। আমরা এই সামগ্রিক কীর্তন রসসিক্ত ভক্তিভাবনার অভিব্যক্তিকে স্মরণীয় করে রাখব।

Advertisement
(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন