লিনেন, সিল্কে নয়া সফর শান্তিপুরির

বিদ্যুৎচালিত তাঁতের (পাওয়ারলুম) চাপে এবং বংশ পরম্পরায় একই ধরনের নকশা ও তাঁতের শাড়ি বুনে ক্রমশ বাজারে কোণঠাসা হয়ে পড়ছিল শান্তিপুরি শাড়ি।

Advertisement

পিনাকী বন্দ্যোপাধ্যায়

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৬ এপ্রিল ২০১৮ ০৩:০৪
Share:

শান্তিপুরি সিল্ক ও লিনেন শাড়ি

তাঁতির ঘরে প্রায় বন্ধ হতে বসা ‘মাকু’ ফের ছুটতে শুরু করেছে। আর সুতো মুখে নিয়ে তাঁতের মাকু ছোটা মানেই তাঁতির ঘরে রয়েছে কাজ।

Advertisement

বিদ্যুৎচালিত তাঁতের (পাওয়ারলুম) চাপে এবং বংশ পরম্পরায় একই ধরনের নকশা ও তাঁতের শাড়ি বুনে ক্রমশ বাজারে কোণঠাসা হয়ে পড়ছিল শান্তিপুরি শাড়ি। ফলে নতুন প্রজন্মের বহু তাঁতি শাড়ি বোনা ছেড়ে অন্য পেশায় চলে যাচ্ছিলেন। কেউ আবার বেশি রোজগারের আশায় কাজ নিয়েছিলেন বিদ্যুৎচালিত তাঁতে। বিশ্ববাংলার হাত ধরে সেই তাঁতিরাই সুতির সঙ্গে সিল্ক ও লিনেন সুতো মিশিয়ে নতুন ধারার শান্তিপুরি শাড়ি বুনে লাভের মুখ দেখতে শুরু করেছেন। দ্বিগুণ হয়েছে দৈনিক মজুরিও।

শান্তিপুরি শাড়ি মানেই মিহি সুতোয় (১০০ কাউন্ট) বোনা নীলাম্বরী শাড়ি। আর সেই শাড়ির পাড়ে আঁশ, চাঁদমালা, ভোমরা, রাজমহলের মতো বিভিন্ন নকশার রঙিন সুতোর কাজ। শতাব্দীপ্রাচীন শান্তিপুরি শাড়ির এই ঘরানা বাংলার মহিলাদের পছন্দের শাড়িগুলির মধ্যে অন্যতম। বিখ্যাত এই শাড়ি অনেক বছর আগে ‘জিআই’ (জিওগ্রাফিক্যাল ইন্ডিকেশন) তকমাও পেয়েছে। তাঁতিদেরই কথায়, কালের নিয়মে সেই সব নকশা ও রঙের একঘেয়েমি এবং অন্য ধরনের শাড়ির বৈচিত্র্যে ক্রমশ জায়গা হারাচ্ছিল শান্তিপুরি শাড়ি। বিশ্ববাংলার উদ্যোগে হাতে বোনা শান্তিপুরি শাড়িকে বাঁচাতে তখনই শুরু হয় নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষা। বিভিন্ন মহলের পরামর্শ নিয়ে ঠিক হয় সাধারণ মিহি সুতির সুতোর সঙ্গে সিল্ক ও লিনেন মিশিয়ে শান্তিপুরি নকশাকেই অন্য ভাবে ব্যবহার করা হবে। আর সেই শাড়ি হাতে টানা মাকুর মাধ্যমে তাঁতেই বুনবেন শান্তিপুরের তাঁতিরা।

Advertisement

বিশ্ববাংলার মুখ্য পরামর্শদাতা পার্থ কর বিশ্বাস জানিয়েছেন, প্রথম দিকে প্রশ্ন উঠেছিল এমন মিশ্র সুতোর শাড়ি শান্তিপুরের তাঁতিরা বুনতে পারবেন কি না! কিন্তু তাঁত বোনায় দক্ষতা ও অভিজ্ঞতার জেরে হাতে বোনা শান্তিপুরি সিল্ক ও লিনেন শাড়ি এখন নতুন বাজার ধরতে শুরু করেছে। তিনি বলেন, ‘‘সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত আমরা তাঁতিদের কয়েক হাজার শাড়ির বরাত দিয়ে দিয়েছি। সেই সব শাড়ি আমরা কিনেও নেব।’’

আরও পড়ুন:

নাবালিকার বিয়ে নয়, প্রচারে নাটক

শান্তিপুরের কয়েকশো তাঁতিকে নিয়ে তৈরি সমবায় সমিতির ম্যানেজার স্বদেশ প্রামাণিক জানিয়েছেন, আগে সমিতির তাঁতিদের দৈনিক আয় ছিল ১২০-১৫০ টাকা। এখন লিনেন ও সিল্কের শাড়ি বুনে আয় বেড়ে হয়েছে কমপক্ষে ৩৫০ টাকা। বিশ্ববাংলার হাত ধরেই তাঁরা বাইরের জগতে নতুন বাজার ধরতে পেরেছেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন