মধ্যমণি: তখন চলছে রাজ্য মন্ত্রিসভার বৈঠক। রয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং অন্যেরা। বৃহস্পতিবার দার্জিলিঙের রাজভবনে। ছবি: বিশ্বরূপ বসাক।
বাংলার জন্য আরও বাংলার আমলা-অফিসার চাই, যাঁরা কাজ করবেন বাড়তি দরদ দিয়ে।
সে জন্য এ বার ডব্লুবিসিএস এবং আইএএস-এর মাঝখানে আরও একটি ক্যাডার তৈরির সিদ্ধান্ত নিল রাজ্য মন্ত্রিসভা। বৃহস্পতিবার দার্জিলিংয়ে মন্ত্রিসভার বৈঠকের পর মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘রাজ্যে যা কাজ হচ্ছে তার জন্য আরও অফিসার দরকার। আইএএস-আইপিএস অফিসাররা ভালই কাজ করছেন। কিন্তু রাজ্যের অফিসারদের আরও সুযোগ দেওয়া দরকার। সেই কারণে একটি কমিটি তৈরি করা হচ্ছে। এক মাসের মধ্যে তারা রিপোর্ট দেবে।’’ মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
কী সেই ব্যবস্থা? এ দিন মন্ত্রিসভা বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, পশ্চিমবঙ্গ উচ্চ-প্রশাসনিক পরিষেবা (ওয়েস্ট বেঙ্গল হায়ার অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস) নামে নতুন একটি ক্যাডার তৈরি হবে। কোনও অফিসার আট-দশ বছর ডব্লুবিসিএস হিসাবে কাজ করার পরে তাঁদের নাম নতুন এই উচ্চ-প্রশাসনিক ক্যাডারের জন্য বিবেচিত হবে। কিন্তু কোন ধরনের পদে এঁদের বসানো হবে, কত জন অফিসারকে এই ক্যাডারে আনা হবে, এঁদের থেকে আইএএস পদে পাঠানো হবে কি না, হলে কী ভাবে— এ সবই বিচার করবে সদ্যগঠিত কমিটি।
নবান্নের কর্তারা জানান, নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে। এখন এই ব্যবস্থা কার্যকর করতে হলে ইউনিয়ন পাবলিক সার্ভিস কমিশন এবং কেন্দ্রীয় পার্সোনেল মন্ত্রকের সঙ্গেও আলোচনা জরুরি। রাজ্যে প্রশাসনিক ক্ষেত্রে নতুন ক্যাডারের জন্য কেন্দ্রীয় সরকারের ছাড়পত্রও দরকার। কারণ, নতুন ক্যাডার থেকেও অফিসাররা আইএএস-এ উন্নীত হবেন। প্রশাসনের একাংশ জানাচ্ছে, বিচার ব্যবস্থাতেও লোয়ার জুডিসিয়াল সার্ভিস ও হায়ার জুডিসিয়াল সার্ভিস রয়েছে। সে রকমই ডব্লুবিসিএস থেকে হায়ার অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস করা যেতে পারে। প্রয়োজনে নতুন ক্যাডার থেকে জেলাশাসক, পুলিশ সুপার থেকে দফতরের সচিব পর্যন্ত করা যেতে পারে।
কেন এই ভাবনা? নবান্নের খবর, এ রাজ্যে তিনশোর বেশি আইএএস এবং প্রায় তিনশো আইপিএস অফিসার রয়েছেন। কিন্তু এঁদের অধিকাংশই ভিন্ রাজ্য থেকে আসা। সর্বভারতীয় পরীক্ষা দিয়ে আসা এই অফিসাররা অনেক সময়ে কেন্দ্রীয় সরকারের কাজেও যেতে চান, যা বর্তমান সরকারের পছন্দ নয়। মুখ্যমন্ত্রী এমন অফিসারদের চান, যাঁরা শুধু চাকরি নয়, বাংলার জন্য আবেগ দিয়ে পরিষেবা দেবেন। মুখ্যমন্ত্রী মনে করেন, এ রাজ্যের অফিসারদের সেই দরদ অনেক বেশি। তাই তিনি ডব্লুবিসিএস-দের আরও বেশি করে তুলে ধরতে চান। এমনিতেই এখন চারটি জেলার ডিএম এবং অন্তত পাঁচটি জেলার পুলিশ সুপার বা কমিশনার রাজ্যের নিজস্ব ক্যাডারের অফিসার। সেই সংখ্যাটি আরও বাড়াতে চাইছেন মুখ্যমন্ত্রী।