বিদ্যুতে লোকসান কমাতে কেপকোর দ্বারস্থ রাজ্য

চেষ্টা অনেক হয়েছে। তবু পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থার আর্থিক ক্ষতি কিছুতেই নিয়ন্ত্রণে আনা যাচ্ছে না। সংস্থার হিসেব বলছে, ১০০ টাকার বিদ্যুৎ দিলে ক্ষতি হয় গড়ে ৩৪ টাকা। ফলে বিদ্যুৎ পরিষেবা দিতে গিয়ে বণ্টন সংস্থার লোকসানের বহর বেড়েই চলেছে।

Advertisement

পিনাকী বন্দ্যোপাধ্যায়

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৪ জুলাই ২০১৬ ০৪:০৬
Share:

চেষ্টা অনেক হয়েছে। তবু পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থার আর্থিক ক্ষতি কিছুতেই নিয়ন্ত্রণে আনা যাচ্ছে না। সংস্থার হিসেব বলছে, ১০০ টাকার বিদ্যুৎ দিলে ক্ষতি হয় গড়ে ৩৪ টাকা। ফলে বিদ্যুৎ পরিষেবা দিতে গিয়ে বণ্টন সংস্থার লোকসানের বহর বেড়েই চলেছে। রোগের দাওয়ায় খুঁজতে এ বার দক্ষিণ কোরিয়ার সংস্থা কোরিয়া ইলেকট্রিক পাওয়ার কর্পোরেশন বা কেপকো-র সঙ্গে গাঁটছড়া বাঁধতে চলেছে রাজ্য বিদ্যুৎ দফতর। নবান্ন সূত্রের খবর, খুব শীঘ্রই দু’পক্ষের মধ্যে চুক্তি হবে। চুক্তি করার অনুমতি দিয়েছে অর্থ দফতর। বিদেশ মন্ত্রকের ছাড়পত্র পেতেও অসুবিধা হবে না বলে মনে করছেন সংস্থার কর্তারা।

Advertisement

বিদ্যুৎ সংবহন ও বণ্টনের ক্ষেত্রে নিত্যনতুন প্রযুক্তি ব্যবহার করে গোটা বিশ্বে তাক লাগিয়ে দিয়েছে কেপকো। এই কারণে বহু দেশেই তারা পরামর্শদাতা সংস্থা হিসাবে কাজ করছে। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার প্রায় প্রতিটি দেশ তাদের সহযোগিতা ও পরামর্শ নিয়েছে বা নিচ্ছে। প্রতিবেশী বাংলাদেশ ও পাকিস্তানেও বিভিন্ন প্রকল্পে কাজ করছে কেপকো। এ বার তারা পা রাখতে চলেছে পশ্চিমবঙ্গে। প্রশাসন সূত্রের খবর, রাজ্যে কেপকো-কে আনার ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা নিয়েছেন পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য বিদ্যুৎ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের চেয়ারম্যান রবীন্দ্রনাথ সেন।

এ রাজ্যে কী করবে কেপকো? এক কথায়, বণ্টন সংস্থার আর্থিক ক্ষতি (অ্যাভারেজ ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন লস, সংক্ষেপে এটিসি লস) কমিয়ে আনাই হবে তাদের প্রধান কাজ। এ জন্য নতুন ধরনের প্রযুক্তিকে কাজে লাগাবে কেপকো। এ ছাড়াও পরিকাঠামোর উন্নতি করতে প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেবেন কেপকোর ইঞ্জিনিয়াররা। বণ্টন সংস্থার এক কর্তা জানান, মুখ্যমন্ত্রী চান, বিদ্যুৎ সংস্থাগুলিকে আর্থিক ভাবে শক্তিশালী করে গড়ে তোলা এবং গ্রামাঞ্চলে লো-ভোল্টেজের সমস্যা দূর করার ব্যবস্থা হোক। কেপকো সে দিকেও নজর দেবে।

Advertisement

প্রশাসনের এক কর্তা জানান, দক্ষিণ কোরিয়ায় কেপকো যে এলাকায় বিদ্যুৎ বণ্টন করে, সেখানে ‘এটিসি লস’ গড়ে পাঁচ শতাংশেরও কম। ১০০ টাকার বিদ্যুৎ দিলে পাঁচ টাকা ক্ষতি। কী করে তা সম্ভব হয়, সেটাই এ রাজ্যে হাতেকলমে করে দেখাবে কেপকো। রাজ্যে এখন প্রায় দেড় কোটি গ্রাহককে বিদ্যুৎ দেয় বণ্টন সংস্থা। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের আমলে পরিষেবার এলাকা আড়ে-বহরে অনেকটাই বেড়েছে। সংস্থার দাবি, রাজ্যের প্রায় ৯৭% বিপিএল পরিবারের ঘরেই বিদ্যুৎ পৌঁছে গিয়েছে। তবু লোকসান আটকানো যাচ্ছে না। কেন? কর্তারা বলছেন, বিদ্যুৎ সরবরাহের পথে খামতি অনেক। যেমন দুর্বল পরিকাঠামোর জন্য মাঝপথে বিদ্যুৎ নষ্ট হয়ে যাওয়া, দীর্ঘ পথে হাইটেনশন লাইন থাকায় বিদ্যুতের শক্তি ক্ষয় হওয়া ইত্যাদি। এর সঙ্গে রয়েছে ব্যাপক হারে বিদ্যুৎ চুরি, বিল ঠিক মতো আদায় না হওয়ার মতো একাধিক কারণ। বিদ্যুৎ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের এক কর্তা জানান, ৩৪% ‘এটিসি লস’ যে কোনও বণ্টন সংস্থার কাছেই বিরাট ক্ষতি।

তথ্য বলছে, দেশে বিদ্যুৎ শিল্পে বণ্টনের ক্ষেত্রে ১৭% ‘এটিসি লস’ ধরে নেওয়া হয়। গ্রাহকের বিলে বাড়তি মাসুল বসিয়ে ক্ষতির অঙ্ক তুলে নেওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়। কিন্তু বাস্তবে বেশির ভাগ বণ্টন সংস্থারই ‘এটিসি লস’ অনেক বেশি। পশ্চিমবঙ্গে ঠিক দ্বিগুণ। এই ক্ষতি কমানো না গেলে চাপ পড়বে গ্রাহকের উপর। সে জন্যই বিদেশি সংস্থার দ্বারস্থ হওয়া। বণ্টন সংস্থার এক কর্তার কথায়, ‘‘উদ্যোগ প্রশংসনীয়। কেপকো-র পরামর্শ পেলে ভালই হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন