প্রাক-ভোট চমক

উন্নয়নের ফিরিস্তি দিতে ২৭শেও কুচকাওয়াজ

এ বছর ২৬ জানুয়ারি রেড রোডে সামরিক কুচকাওয়াজ দেখার পরের দিন আর একটি কুচকাওয়াজ দেখতে প্রস্তুত হোন। সৌজন্যে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ক্ষমতায় আসার পরে ২৬ জানুয়ারির আদলে ১৫ অগস্ট কুচকাওয়াজ শুরু করেছিলেন মমতা। ওই অনুষ্ঠানে সরকারি নানা প্রকল্পের প্রচার গুরুত্ব পায়।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২০ জানুয়ারি ২০১৬ ০৩:৫২
Share:

এ বছর ২৬ জানুয়ারি রেড রোডে সামরিক কুচকাওয়াজ দেখার পরের দিন আর একটি কুচকাওয়াজ দেখতে প্রস্তুত হোন।

Advertisement

সৌজন্যে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

ক্ষমতায় আসার পরে ২৬ জানুয়ারির আদলে ১৫ অগস্ট কুচকাওয়াজ শুরু করেছিলেন মমতা। ওই অনুষ্ঠানে সরকারি নানা প্রকল্পের প্রচার গুরুত্ব পায়। অনেকটা সেই আদলেই এ বার ২৭ জানুয়ারি রেড রোডে দেখা যাবে রাজ্য সরকারের নিজস্ব কুচকাওয়াজ। যার পোশাকি নাম: ‘উন্নয়নে উত্তীর্ণ’।

Advertisement

হঠাৎ প্রজাতন্ত্র দিবসের পরের দিনই এমন উদ্যোগ কেন? প্রশাসনের অন্দরে অনেকের মতে, এ হল ভোটের আগে সরকারি উন্নয়নের ফিরিস্তি জনগণের সামনে তুলে ধরার কৌশল। এই কুচকাওয়াজ ১৫ অগস্ট করা হলে বিধানসভা ভোট পেরিয়ে যেত। ভোটের আগে সরকারি প্রকল্প প্রচারের শেষ সুযোগ ছিল ২৬ জানুয়ারির কুচকাওয়াজ। কিন্তু রীতি অনুযায়ী, প্রজাতন্ত্র দিবসে সামরিক প্যারেডই প্রাধান্য পায়। মুখ্যমন্ত্রী নন, স্যালুট নেন রাজ্যপাল।

২৬শের রেশ ধরে রেখে তাই এ বার রাজ্য সরকার পরের দিন আলাদা করে একটি কুচকাওয়াজের আয়োজন করছে। ২৬শের মঞ্চটি পরের দিন ব্যবহার করেই অনুষ্ঠানটি সেরে ফেলতে চাইছেন মুখ্যমন্ত্রী। ইতিমধ্যেই বিষয়টি নিয়ে সংশ্লিষ্ট দফতরের সচিবদের নিয়ে বৈঠক করেছেন মুখ্যসচিব বাসুদেব বন্দ্যোপাধ্যায়। আজ, বুধবার অনুষ্ঠানসূচি চূড়ান্ত করতে বৈঠকে বসছেন রাজ্যের তথ্য ও সংস্কৃতি দফতরের সচিব অত্রি ভট্টাচার্য। সেখানেই অনুষ্ঠানের খরচ-খরচা বা কাজের দিনে রেড রোড আটকে অনুষ্ঠান করার হ্যাপা পুলিশ কী ভাবে সামাল দেবে, তা চূড়ান্ত করা হবে। অনুষ্ঠানের খরচ সব মিলিয়ে কোটিখানেক ছুঁয়ে যাবে বলে মনে করছেন প্রশাসনের শীর্ষ কর্তারা।

ক্ষমতায় আসার এক বছরের মাথাতেই অবশ্য নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি পালন করা হয়ে গিয়েছে বলে দাবি করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। কয়েক দিন আগেও বলেছেন, ‘‘চার বছরে যা কাজ করেছি, চারশো বছরেও কেউ করতে পারবে না।’’ মঙ্গলবার মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘যা কাজ করেছি বলতে গেলে দিন কাবার হয়ে যাবে। রামায়ণ, মহাভারত, কোরান, বাইবেল শেষ হয়ে যাবে।’’

শেষ পর্যন্ত সরকারের এ হেন কর্মযজ্ঞকে চূড়ান্ত শংসাপত্র দিতে রাস্তা আটকে একটা কুচকাওয়াজের ব্যবস্থাই করে ফেলেছেন মুখ্যমন্ত্রী। যদিও ভরা কাজের দিনে শহরের কেন্দ্রস্থলে রেড রোডের মতো রাস্তা বন্ধ থাকলে জনজীবন বিপর্যস্ত হওয়ার আশঙ্কা। এর আগে শাসক দলই আশ্বাস দিয়েছিল যে, তারা কাজের দিন সভা-সমাবেশ করবে না। বিরোধীদের অভিযোগ, প্রাক-ভোট প্রচারের তাগিদে সে সব প্রতিশ্রুতি ভুলে মেরে দিয়েছেন তাঁরা।

কী থাকবে ২৭শের অনুষ্ঠানে? নবান্ন সূত্রের খবর, সরকারের চার-পাঁচটি দফতরের উন্নয়নের খতিয়ান এখানে প্রাধান্য পাবে। সবচেয়ে গুরুত্ব পাচ্ছে খাদ্য দফতর। ওই দিনই সরকারি ভাবে রাজ্য সরকারের খাদ্য সুরক্ষা প্রকল্পের উদ্বোধন করবেন মুখ্যমন্ত্রী। কী ভাবে রাজ্যের অধিকাংশ মানুষকে সরকার দু’টাকা এবং তিন টাকা কিলো দরে চাল দিচ্ছে, তা চার-পাঁচটি ট্যাবলোর সাহায্যে তুলে ধরা হবে। থাকবে পরিবহণ দফতরের ‘গতিধারা’ প্রকল্পে লাভবান অন্তত ৬০ জন বেকার যুবক-যুবতী এবং তাঁদের নতুন গাড়ির মিছিল।

রাজ্য সরকারের সবুজ সাথী প্রকল্পে পাওয়া সাইকেল নিয়েও মিছিল করবেন স্বাস্থ্য প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত পাঁচশো ‘আশা’ কর্মী। থাকবে নতুন কেনা দমকলের কয়েকটি গাড়ি, সরঞ্জাম এবং নতুন করে রাস্তায় নামা দোতলা বাস। আর সবশেষে নিজমুখে উন্নয়নের খতিয়ান দেবেন মুখ্যমন্ত্রী। যার সময় ধার্য করা হয়েছে অন্তত আধ ঘণ্টা।

ওই অনুষ্ঠান থেকেই হাওড়া পুরসভার একগুচ্ছ প্রকল্পও উদ্বোধন করবেন মুখ্যমন্ত্রী। পুরসভার রিং রোডের বিভিন্ন অংশে যে সৌন্দর্যায়নের কাজ হয়েছে, তেমন কয়েকটি প্রকল্প রিমোট কন্ট্রোলে উদ্বোধন করবেন মুখ্যমন্ত্রী। মঙ্গলবার পুর কমিশনার নীলাঞ্জন চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘হাওড়ায় জেলাশাসকের বাংলোর সামনে তিনমাথা মোড়ে একটি এলইডি টিভি বসানো হচ্ছে। দিনের আলোতেও রঙিন এলইডি টিভি যাতে দেখা যায় সেই ব্যবস্থা করা হচ্ছে।’’ হাওড়ার সমাজবন্ধু প্রকল্পেরও উদ্বোধন ওই দিনই। পাশাপাশি দারিদ্রসীমার নীচে বসবাসকারী ৮ জন বাসিন্দাকে তিন মাসের অগ্রিম দেড় হাজার টাকার চেকও দেওয়া হবে।

মেলা-ভাতা-খয়রাতি-উৎসবের পিছনে দেদার খরচ আর তা সামাল দিতে গিয়ে প্রতি মাসে ধার করার সংস্কৃতি নিয়ে এমনিতেই লাগাতার সমালোচনার মুখে পড়তে হয় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারকে। প্রজাতন্ত্র দিবসের মঞ্চকে ব্যবহার করে কুচকাওয়াজের অনুষ্ঠানকেও ‘নিজের ঢাক নিজে পেটাও কর্মসূচি’ বলেই কটাক্ষ করছেন বিরোধীরা। সিপিএম সাংসদ মহম্মদ সেলিমের কথায়, ‘‘অনেক কিছুর মতোই মুখ্যমন্ত্রীর এই উত্তীর্ণ হওয়ার সার্টিফিকেটটিও জাল। ভোট সামনে। তাই সরকারি খরচে ভোটের প্রচার করছেন।’’

বিজেপি বিধায়ক শমীক ভট্টাচার্যের বক্তব্য, ‘‘যাঁরা সাইকেল বা গাড়ি পেয়েছেন, তাঁরা তাঁদের টাকাতেই তা পেয়েছেন। দারিদ্রকে উপলক্ষ করে এমন অভূতপূর্ব প্রচার করে ‘উত্তীর্ণ’ হতে তৃণমূলীরাই পারে।’’ যদিও শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের দাবি, ‘‘যাঁরা শুধু নিজের ভাল চান, তাঁরা রাজ্যের মানুষের উন্নয়ন সহ্য করতে পারেন না। সেই জন্য এই সব বলছেন।’’

এই সব কটাক্ষকে ধর্তব্যের মধ্যে আনছেন না স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রীও। এ দিনও পানাগড়ে মাটি উৎসবের মঞ্চে তিনি বলেন, ‘‘উৎসব করব না তো কি কঙ্কাল কাণ্ড করব? রাজ্যে ৯ কোটি ১০ লক্ষ রেশন কার্ডধারীর মধ্যে ৭ কোটি ৭০ লক্ষ মানুষকে আমি সস্তায় চাল-গম দিচ্ছি। ৪০ লক্ষ ছেলেমেয়েকে সাইকেল দিচ্ছি। ৩৫ লক্ষ ছাত্রী কন্যাশ্রীর সুবিধা পাচ্ছে। এত মানুষের কাছে সরকার পৌঁছতে পেরেছে বলে মানুষ খুশিতে আছে, মানুষ উৎসব করছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন