খরচ ৫০০ কোটি, ফের বিলি হবে সাইকেল

বিপুল ঋণের ভার, কেন্দ্রের আর্থিক বঞ্চনা নিয়ে হাজার অভিযোগ। কিন্তু এই তার মধ্যেও মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে ফের চালু হচ্ছে ‘সবুজ সাথী’ প্রকল্প।

Advertisement

শঙ্খদীপ দাস

শেষ আপডেট: ২১ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০৪:০৪
Share:

বিপুল ঋণের ভার, কেন্দ্রের আর্থিক বঞ্চনা নিয়ে হাজার অভিযোগ। কিন্তু এই তার মধ্যেও মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে ফের চালু হচ্ছে ‘সবুজ সাথী’ প্রকল্প।

Advertisement

দ্বিতীয় দফায় নবান্নে এসে এর মধ্যেই প্রায় সমস্ত জেলা একপ্রস্ত ঘুরে ফেলেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। নবান্ন সূত্রের খবর— দ্বিতীয় দফায় তাঁর জেলা সফর শুরু হতেই ‘সবুজ সাথী’ প্রকল্পের আওতায় জেলাওয়াড়ি স্কুল পড়ুয়াদের ধাপে ধাপে আরও ১৫ লক্ষ সাইকেল বিলি শুরু করে দেবে সরকার। এ ব্যাপারে প্রস্তুতি নিয়ে গত শনিবার অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্রের কাছে খোঁজখবর নিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।

গত বছর সবুজ সাথী প্রকল্প শুরু হওয়ার সময়ে দশম, একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্র ছাত্রীদের সাইকেল দেওয়া হয়েছিল। সেই সঙ্গে নবম শ্রেণিতে শুধু ছাত্রীরাই সাইকেল পেয়েছিল। এ বার নবম শ্রেণির ছাত্রছাত্রী এবং দশম শ্রেণির ছাত্রদের সাইকেল দেওয়া হবে। কারণ, দশম শ্রেণির ছাত্রী এবং একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণিতে এখন যারা পড়ছে, তারা গত বছরই সাইকেল পেয়ে গিয়েছে।

Advertisement

পশ্চিমবঙ্গ তফসিলি জাতি ও উপজাতি উন্নয়ন এবং আর্থিক নিগমকে সাইকেল বিতরণের জন্য গোড়া থেকেই নোডাল এজেন্সি করা হয়েছে। নিগমের ম্যানেজিং ডিরেক্টর পার্থপ্রতিম মান্না মঙ্গলবার বলেন, ‘‘দ্বিতীয় দফায় সাইকেল বিলির জন্য আগেই নিগমের তরফে সব জেলাশাসককে প্রস্তুতি নিতে বলা হয়েছে। বুধবার থেকে উত্তরবঙ্গ সফরে যাচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর এই সফরেই ছাত্রছাত্রীদের আনুষ্ঠানিক ভাবে সাইকেল দেওয়ার কাজ শুরু হয়ে যেতে পারে।’’

সাইকেল কেনার জন্য জুলাই মাসে দরপত্র ডেকেছিল নিগম। ১৫ লক্ষ সাইকেলকে তিনটি ‘প্যাকেজে’ ভাগ করে পাঁচ লক্ষ সাইকেলের জন্য তিনটি পৃথক দরপত্র ডাকা হয়েছিল। মজার ব্যাপার হল, হিরো সাইকেলস, এভন সাইকেলস এবং টিউব ইনভেস্টমেন্টস অব ইন্ডিয়া— সাকুল্যে এই তিনটি প্রস্তুতকারী সংস্থা দরপত্র জমা দিয়েছিল। ওই তিন সংস্থাই পাঁচ লক্ষ করে সাইকেল সরবরাহের বরাত পেয়েছে। হিসেব মতো গড়ে সাইকেল পিছু সরকারের খরচ হবে প্রায় ৩২৭৮ টাকা। ১৫ লক্ষ সাইকেলের জন্য প্রায় ৫০০ কোটি টাকা।

প্রথম মেয়াদে রাজ্য জুড়ে মোট ২৪ লক্ষ ৪৮ হাজারের মতো সাইকেল বিলি করেছিল সরকার। তবে এ বার যে হেতু কেবল মাত্র দু’টি শ্রেণির ছাত্রছাত্রীদের সাইকেল দেওয়া হবে, তাই জেলাওয়াড়ি সংখ্যাটা গত বারের তুলনায় কম। রাজ্যের ২১টি জেলার মধ্যে উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা— এই দু’টি জেলায় গত বার সব চেয়ে বেশি সাইকেল দেওয়া হয়েছিল। এর মধ্যে উত্তর ২৪ পরগনায় বিলি করা হয়েছে ৩ লক্ষ ১০ হাজার ৩৮টি সাইকেল, দক্ষিণ ২৪ পরগনায় ২ লক্ষ ৪৫ হাজার ২৩৮টি সাইকেল। এ বার ওই দুই জেলায় চাহিদা রয়েছে যথাক্রমে ২ লক্ষ এবং দেড় লক্ষের মতো সাইকেলের।

তবে সরকারি কোষাগার থেকে এ ধরনের খয়রাতি নিয়ে অর্থনীতিবিদদের অনেকেরই আপত্তি রয়েছে। তাঁদের মতে, আর্থিক ভাবে রাজ্য যখন স্বনির্ভর নয়, তখন এ ভাবে খয়রাতি করে ঋণের বোঝা বাড়ানোর যুক্তি কী? তাঁদের প্রশ্ন— সাইকেল বিলি কি আদৌ সরকারের কাজ?

কিন্তু সেই সব তর্ক নিয়ে মাথাব্যথা নেই শাসক দলের। কেন না তৃণমূল নেতৃত্বের মতে, গরিব পরিবারকে দু’টাকা কেজি দরে চাল, বিনা পয়সায় ছাত্রছাত্রীদের সাইকেল বিলির মতো জনমুখী প্রকল্পের কারণেই বিধানসভা ভোটে বিপুল সাফল্য পেয়েছেন তাঁরা। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও সেটা বোঝেন। ফলে আর্থিক সঙ্কটের সাত-সতেরো যাই থাকুক, ‘সবুজ সাথী’দের খুশি রাখতে কার্পণ্য করতে চান না তিনি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন