Bratya Basu

‘চোরেদের মন্ত্রিসভা বলে কেউ বেরিয়ে গেলে কি সবাই চোর!’ ব্রাত্যের ইঙ্গিতে কি বুদ্ধ-পদত্যাগ

নিয়োগ দুর্নীতিকাণ্ড প্রকাশ্যে আসার পর গত বছর ইডির হাতে গ্রেফতার হয়েছেন তৃণমূলের একাধিক নেতা। এর পর থেকেই রাজ্য জুড়ে তৃণমূলের ভাবমূর্তি নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৪ মার্চ ২০২৩ ১৬:০৩
Share:

ব্রাত্য কেন এই প্রসঙ্গ তুলে আনলেন, তা নিয়ে পরিষ্কার করে কিছু বলেননি। ফাইল চিত্র ।

দলে এক দু’জন ‘চোর’ থাকলেই সে দলের সকলকে ‘চোর’ তকমা দেওয়া যায় না। তেমনই নিয়োগ দুর্নীতিকাণ্ডে তৃণমূলের একাধিক নেতার নাম জড়ালেও তাতে দল বা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হয় না। বাম আমলে পাওয়া চাকরি নিয়ে উঠে আসা দুর্নীতির অভিযোগ নিয়ে এমনই বার্তা দিলেন রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু। তাঁর কথায় উঠে এসেছে তিন দশক পুরনো এক প্রসঙ্গও। ১৯৯৩ সালে রাজ্যের তৎকালীন মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগ করেন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। সেই সময় চাউর হয়ে যায় তদানীন্তন মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসুর মন্ত্রিসভাকে নাকি ‘চোরের মন্ত্রিসভা’ আখ্যা দিয়ে পদত্যাগ করেছিলেন বাম নেতা তথা তৎকালীন মন্ত্রী বুদ্ধদেব। শুক্রবার কৌশলে সেই ঘটনার উল্লেখ করেন ব্রাত্য। নিয়োগ দুর্নীতির কারণে কি তৃণমূলে ভাবমূর্তি কোথাও নষ্ট হচ্ছে, উত্তরে ব্রাত্য বলেন, ‘‘নিশ্চয়ই ভাবমূর্তির প্রশ্ন আছে। দিদির ভাবমূর্তি ফিকে হয়নি। কোনও ব্যক্তির চুরি পার্টির চুরি নয়। কেউ যদি পদত্যাগ করে বলে ‘চোরেদের মন্ত্রিসভায় থাকব না’ তার মানে কি সবাই চোর! একটা দুটো ছিল হয়তো।’’

Advertisement

নিয়োগ দুর্নীতিকাণ্ড প্রকাশ্যে আসার পর গত বছর ইডির হাতে গ্রেফতার হন প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। তাঁকে সমস্ত দলীয় পদ থেকে সরানো হয়েছে। একই দুর্নীতিতে নাম জড়ানোয় গ্রেফতার হয়েছেন পলাশীপাড়ার তৃণমূল বিধায়ক তথা প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের অপসারিত চেয়ারম্যান মানিক ভট্টাচার্যও। এর পর তদন্ত এগোতে গ্রেফতার হয়েছেন হুগলির দুই যুব তৃণমূল নেতা কুন্তল ঘোষ এবং শান্তনু বন্দ্যোপাধ্যায়ও। তাঁরা দু’জনেই বর্তমানে তৃণমূল থেকে বহিষ্কৃত। এর পর থেকেই রাজ্য জুড়ে ক্ষমতাসীন তৃণমূলের ভাবমূর্তি নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে দলের ছাঁকনি প্রক্রিয়া নিয়েও।

ঘটনাচক্রে, তিন দশক আগে বিতর্ক উঠেছিল জ্যোতি বসুর মন্ত্রিসভা থেকে বুদ্ধদেবের পদত্যাগ করা নিয়ে। একই সঙ্গে এই কথা ছড়িয়ে পড়েছিল যে, রাজ্যের তৎকালীন মন্ত্রিসভাকে ‘চোরেদের মন্ত্রিসভা’ মন্তব্য করে তা থেকে বেরিয়ে গিয়েছিলেন তিনি। তাঁর পদত্যাগ নিয়েও যথেষ্ট তোলপাড় হয়েছিল রাজ্য রাজনীতিতে। বুদ্ধ অবশ্য এই বিষয়ে নিয়ে প্রকাশ্যে কখনও কিছু বলেননি। আলিমুদ্দিনের তরফেও এই প্রসঙ্গে কোনও মন্তব্য করা হয়নি। সেই প্রসঙ্গই শুক্রবার ব্রাত্যর কথায় উঠে এসেছে বলে মনে করা হচ্ছে। তাঁর দাবি, দলের কোনও মন্ত্রী যদি ‘চোরেদের মন্ত্রিসভা’ মন্তব্য করে বেরিয়ে যান, তার অর্থ এই নয় যে দলের সকলেই চোর। তবে তাঁদের মধ্যে কয়েক জনের সঙ্গে দুর্নীতির যোগ থাকতেও পারে। যদিও ব্রাত্য কেন এই প্রসঙ্গ তুলে আনলেন, তা নিয়ে পরিষ্কার করে কিছু বলেননি।

Advertisement

তবে সংশ্লিষ্ট মহলের দাবি, শিক্ষামন্ত্রীর কথা শুনে মনে হচ্ছে তিনি হয়তো বলতে চেয়েছেন, দলে অসাবধানতাবশত কিছু ‘বেনো জল’ প্রবেশ করে থাকলেও থাকতে পারে। কিন্তু তাঁরা পুরো দলের প্রতিনিধিত্ব করেন না। আর তাতে দলের ভাবমূর্তিতেও সে ভাবে প্রভাব পড়ে না। তা বোঝাতে গিয়েই রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী ‘চোরেদের মন্ত্রিসভা’র প্রসঙ্গ টেনে এনেছেন বলেই মনে করছেন অনেকে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন