লাল মহম্মদের পেশা কী, জানতে না পেরে সরে যান স্ত্রী

স্বামী দাবি করে কাপড়ের ব্যবসায়ী। অথচ, বাড়িতে কাপড়ের নাম-গন্ধ নেই। কোথায় ব্যবসা করে, তা ভেঙে বলে না স্বামী। তা বলে মাস গেলে তার হাতে কাঁচা পয়সার অভাব হয় না। এমনই পরিস্থিতিতে সন্দেহ করতে শুরু করেন তরুণী স্ত্রী। বারবার বলেও স্বামী আসলে কী করে, তা জানতে না পারায় সম্পর্কে তিক্ততা বাড়ে। শুরু হয় আলাদা থাকা। সোমবার বাড়িতে ‘জাতীয় তদন্তকারী সংস্থা’র (এনআইএ) গোয়েন্দারা যাওয়ার পরে তরুণী জানলেন, খাগড়াগড় বিস্ফোরণ-কাণ্ডে নাম জড়িয়েছে তাঁর স্বামী লাল মহম্মদের। ২ অক্টোবর বর্ধমানের খাগড়াগড় বিস্ফোরণের পর থেকে সে নিখোঁজ।

Advertisement

গৌরব বিশ্বাস

করিমপুর শেষ আপডেট: ২১ অক্টোবর ২০১৪ ০৩:১৭
Share:

ডোমকলের ঘোড়ামারা মাদ্রাসায় এনআইএ-র গোয়েন্দারা। ছবি: বিশ্বজিত্‌ রাউত।

স্বামী দাবি করে কাপড়ের ব্যবসায়ী। অথচ, বাড়িতে কাপড়ের নাম-গন্ধ নেই। কোথায় ব্যবসা করে, তা ভেঙে বলে না স্বামী। তা বলে মাস গেলে তার হাতে কাঁচা পয়সার অভাব হয় না। এমনই পরিস্থিতিতে সন্দেহ করতে শুরু করেন তরুণী স্ত্রী। বারবার বলেও স্বামী আসলে কী করে, তা জানতে না পারায় সম্পর্কে তিক্ততা বাড়ে। শুরু হয় আলাদা থাকা। সোমবার বাড়িতে ‘জাতীয় তদন্তকারী সংস্থা’র (এনআইএ) গোয়েন্দারা যাওয়ার পরে তরুণী জানলেন, খাগড়াগড় বিস্ফোরণ-কাণ্ডে নাম জড়িয়েছে তাঁর স্বামী লাল মহম্মদের। ২ অক্টোবর বর্ধমানের খাগড়াগড় বিস্ফোরণের পর থেকে সে নিখোঁজ।

Advertisement

গোয়েন্দা সূত্রে জানা গিয়েছে, নদিয়ার থানারপাড়া থানা এলাকার জহিরুল শেখের খোঁজ করতে গিয়ে লাল মহম্মদ সংক্রান্ত কিছু তথ্য তাদের হাতে আসে। মুর্শিদাবাদের নবগ্রামের বাসিন্দা এই লাল মহম্মদকে এখন আলাদা করে সন্দেহের বৃত্তে রাখা হয়েছে। নবগ্রাম এলাকায় কাপড়ের ব্যবসায়ী বলে পরিচয় দেওয়া লাল প্রকৃতপক্ষে খাগড়াগড়ে বিস্ফোরণে হত শাকিল আহমেদের নির্দেশে নানা ধরনের কাজ করত বলে অনুমান করা হচ্ছে। তার হদিস মিললে খাগড়াগড়-কাণ্ডের সঙ্গে জড়িত আরও তথ্য সামনে আসবে বলে মনে করা হচ্ছে।

বিস্ফোরণ-কাণ্ডে ধৃত রাজিয়া বিবি ও আলিমা বিবিকে জেরা করে দিন দশেক আগে পাওয়া গিয়েছিল জহিরুল শেখের নাম। শোনা গিয়েছিল লাল মহম্মদ নামে এক জনের কথাও। গত ১১ অক্টোবর নদিয়ার থানারপাড়ার গমাখালি গ্রামে জহিরুলের বাড়িতে হানা দিয়ে ৪১টি জিলেটিন স্টিক উদ্ধার করে সিআইডি। কিন্তু সে সময় এই লাল মহম্মদ সম্পর্কে বিশেষ তথ্য তাদের হাতে আসেনি। এ দিন এনআইএ-র গোয়েন্দারা জহিরুলের গমাখালির বাড়িতে তল্লাশি চালাতে যান। সেই সময়েই স্থানীয় সূত্রে ফের তাঁদের কানে পৌঁছয় লাল মহম্মদের নাম। জানা যায়, বছর বত্রিশের লালের যোগাযোগ ছিল করিমপুর থানা এলাকার বারবাকপুরের সঙ্গে। সেই বারবাকপুর, যেখানে মেয়েদের কাপড়চোপড় বিক্রি করতে এসে পরিচিতি গড়ে তোলে শাকিল আহমেদ। পরে বারবাকপুরেরই রাজিয়া বিবিকে বিয়ে করে সে।

Advertisement


থানারপাড়ায় জহিরুলের বাড়িতে এনআইএ-র গোয়েন্দারা। ছবি: কল্লোল প্রামাণিকের তোলা ছবি

তদন্তে গোয়েন্দারা জানতে পারেন, শাকিল, জহিরুল এবং লাল মহম্মদ তিন জনেরই শ্বশুরবাড়ি বারবাকপুরে। ২০০৭ সালে শাকিলের বিয়ের দিন দশেক পরে একই এলাকার এক তরুণীকে বিয়ে করে লাল। সোমবার সেই তরুণী গোয়েন্দাদের জানান, বিয়ের আগে লাল মহম্মদ বলেছিল তার বাড়ি মুর্শিদাবাদের নবগ্রামে। দাবি করে সে কাপড়ের ব্যবসা করে। এই ব্যবসার সূত্রেই কিছু দিন অন্তর তাকে বাড়িছাড়া হতে হয় বলেও জানিয়েছিল। প্রথম-প্রথম সব ঠিক চলছিল। কিন্তু তরুণীটির দাবি, বিয়ের বছর দু’য়েকর মাথায় লালের রকমসকম দেখে তাঁর সন্দেহ হতে শুরু করে। কারণ, স্বামীর সঙ্গে কাপড়ের ব্যবসার কোনও সম্পর্ক রয়েছে বলে ওই তরুণী চোখে দেখেননি। অথচ, তার পরেও লালের হাতে টাকার অভাব কখনও হতো না। স্বামী-স্ত্রী-র সম্পর্ক তিক্ত হতে শুরু করে। ২০১০-এ তরুণী দুই ছেলেকে নিয়ে নবগ্রাম ছেড়ে বারবাকপুরে চলে আসেন। আর ফেরেননি। নবগ্রাম থানায় তার আগেই লালের বিরুদ্ধে বধূ নির্যাতনের একটি মামলাও করেন তিনি। তবে লাল গ্রেফতার হয়নি।

এক গোয়েন্দা-কর্তার কথায়, “প্রথম থেকেই লাল মহম্মদ সন্দেহজনক চরিত্র। বারবাকপুরের তরুণীর সঙ্গে সেই সন্দেহের জায়গা থেকেই ওর ছাড়াছাড়ি হয়েছে। শাকিল, লাল আর জহিরুলের শ্বশুরবাড়ি এক গ্রামে হওয়াতেও আমাদের খটকা লেগেছে। জহিরুল আর লাল মহম্মদকে ধরা গেলে ব্যাপারটা স্পষ্ট হবে।”

বারবাকপুরে লাল মহম্মদের শ্বশুরবাড়ি থেকে জহিরুলের শ্বশুরবাড়ি যান এনআইএ-র গোয়েন্দারা। গোয়েন্দাদের দাবি, বাড়ির লোকজন তাঁদের জানিয়েছেন, জহিরুলের স্ত্রী খানসা বিবি (জামাত-উল-মুজাহিদিনের সদস্যা) এ দিন সকালে ওই এলাকায় গিয়েছিল বলে তাঁরা খবর পান। সে অবশ্য বাপের বাড়িতে যায়নি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন