হুলের গোড়ার গল্পটা কী, জানাতে নির্দেশ

কলকাতা হাইকোর্ট থেকে বিদায়ের আগে প্রধান বিচারপতি মঞ্জুলা চেল্লুর নারদ-রিপোর্টে একই সঙ্গে ইতিবাচক ও নেতিবাচক দিকের কথা বলেছিলেন। আর চেল্লুরের পরে দায়িত্ব নেওয়া ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি গিরীশ গুপ্ত জানালেন, টাকা নেওয়া হয়ে থাকলেও সেটা গোটা ঘটনার ‘ক্লাইম্যাক্স’ (শীর্ষ বা চূড়ান্ত বিন্দু) মাত্র।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০৪:০১
Share:

কলকাতা হাইকোর্ট থেকে বিদায়ের আগে প্রধান বিচারপতি মঞ্জুলা চেল্লুর নারদ-রিপোর্টে একই সঙ্গে ইতিবাচক ও নেতিবাচক দিকের কথা বলেছিলেন।

Advertisement

আর চেল্লুরের পরে দায়িত্ব নেওয়া ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি গিরীশ গুপ্ত জানালেন, টাকা নেওয়া হয়ে থাকলেও সেটা গোটা ঘটনার ‘ক্লাইম্যাক্স’ (শীর্ষ বা চূড়ান্ত বিন্দু) মাত্র। তাই পুরো পরিপ্রেক্ষিত এবং আগেকার ঘটনার খুঁটিনাটি জানা দরকার। সূচনা থেকে ঘটনার ক্রমবিস্তার না-জানলে এগোনো যায় না। ‘এগোনো’ মানে মূলত দু’টি বিষয়ের কথা বলেছেন তিনি। l ব্যাপারটা আদৌ আদালতগ্রাহ্য কি না। l কোনও নিরপেক্ষ সংস্থাকে ঘটনার তদন্তভার দেওয়া যায় কি না।

‘‘শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত ঘটনা পরম্পরা জানা না-গেলে টাকা নেওয়া আদালতগ্রাহ্য অপরাধ কি না, তার বিচার সম্ভব নয়। এবং বিচার হলে তবেই ঠিক করা যেতে পারে, নিরপেক্ষ কোনও সংস্থাকে দিয়ে নারদ-কাণ্ডের তদন্ত হবে কি না,’’ বলেছেন ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি। তাঁর নির্দেশ, নারদ হুল অভিযানের হোতা, নারদ নিউজের কর্ণধার ম্যাথু স্যামুয়েল এবং মামলার আবেদনকারীরা যদি গোটা ঘটনার আদ্যোপান্ত জেনে থাকেন, হলফনামা দিয়ে আদালতকে জানান।

Advertisement

আইনজীবী শিবিরের পর্যবেক্ষণ, নারদ স্টিং অপারেশনের ফুটেজ পরীক্ষা করে চণ্ডীগড়ের ফরেন্সিক সায়েন্স ল্যাবরেটরি অগস্টে রিপোর্ট পাঠিয়েছিল হাইকোর্টের কাছে। সেই রিপোর্ট দেখেই হাইকোর্টের তখনকার প্রধান বিচারপতি চেল্লুর বিষয়টির মধ্যে যুগপৎ ইতিবাচক ও নেতিবাচক দিক দেখতে পেয়েছিলেন। এখন তাঁর উত্তরসূরিও পুরো ঘটনাবৃত্তের নিরিখে বিচারকাজ চালাতে চাইছেন। তাই নারদ হুল অপারেশনের পরিচালক ম্যাথু বা জনস্বার্থ মামলাগুলির আবেদনকারীদের কাছ থেকে পূর্বাপর ঘটনা জানতে চাইছে আদালত।

বিধানসভা ভোটের ঠিক আগে নারদ হুল অভিযানের ভিডিওয় দেখানো হয়, শাসক দলের বেশ কিছু নেতা-মন্ত্রী দেদার টাকা নিচ্ছেন। সেই ফুটেজের সত্যতা আনন্দবাজারের পক্ষে যাচাই করা সম্ভব হয়নি। সেই ঘটনা নিয়ে একাধিক জনস্বার্থ মামলা হয়। শুক্রবার সেগুলোরই শুনানি ছিল ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি গিরীশ গুপ্ত ও বিচারপতি অরিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ডিভিশন বেঞ্চে।

মামলার নিষ্পত্তি না-হওয়া পর্যন্ত ম্যাথুর বিরুদ্ধে রাজ্য সরকার আলাদা কোনও তদন্ত করতে পারবে না বলে আগেই স্থগিতাদেশ দিয়েছিল উচ্চ আদালত। পরবর্তী নির্দেশ পর্যন্ত সেই স্থগিতাদেশ বহাল থাকবে বলেও এ দিন জানিয়ে দেয় হাইকোর্ট।

হুল অভিযানের ফুটেজ পরীক্ষা করে চণ্ডীগড়ের ফরেন্সিক সায়েন্স ল্যাবরেটরি গত ৯ অগস্ট হাইকোর্টকে জানিয়েছিল, অডিও-ভিডিও মিলিয়ে মোট ৭৩টি ফাইলের মধ্যে খোলা গিয়েছে ৪৭টি। ২৬টি খোলা যায়নি। রিপোর্টে কী আছে, তা জানায়নি চেল্লুরের ডিভিশন বেঞ্চ। তবে এই মামলায় যুক্ত কয়েক জন আইনজীবী রিপোর্টের প্রতিলিপি পেয়েছিলেন। ল্যাবরেটরির সফ্টওয়্যারের মাধ্যমে যে-সব ফাইল খোলা গিয়েছে, তাতে কোনও ‘ট্যাম্পারিং’ বা বিকৃতি এবং ‘এডিটিং’ বা সম্পাদনার চিহ্ন পাওয়া যায়নি বলেই জানান তাঁরা।

মামলার এক পক্ষের আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য এ দিন সংক্ষেপে ঘটনাটি জানান। ‘‘কর্তব্যরত এক সরকারি অফিসারকে টাকা নিতে দেখা গিয়েছে। ওই অফিসারই সকলের সঙ্গে ম্যাথুর সাক্ষাৎ করিয়ে দেওয়ার আশ্বাস দেন বলে অভিযোগ উঠেছে,’’ বলেন বিকাশরঞ্জনবাবু।

ওই কৌঁসুলির বক্তব্য শুনে ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘‘টাকা নেওয়াটা তো ঘটনার শুরু নয়। ‘‘এর শুরুটা কী ভাবে হয়েছিল? টাকা নেওয়ার প্রেক্ষাপটটা কী?’’

বিকাশবাবু বলেন, ‘‘এক বা দু’হাজার টাকার বিষয় তো নয়। লক্ষ লক্ষ টাকা নেওয়ার ব্যাপার।’’

ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি তখন প্রশ্ন করেন, ম্যাথু স্যামুয়েল ঘটনার আগাগোড়া জানাচ্ছেন না কেন?

বিকাশবাবু বলেন, ‘‘আদালত নির্দেশ দিলেই ম্যাথু তা জানাবেন।’’

রাজ্যের অ্যাডভোকেট জেনারেল জয়ন্ত মিত্র জানান, তিনি কোনও পক্ষের নন। কারও এজেন্টও নন। তবে আদালত যেন খেয়াল রাখে, হায়দরাবাদ ও চণ্ডীগড়ের ফরেন্সিক ল্যাবরেটরি একটি ব্যাপারে সহমত যে, সেলফোন ও ল্যাপটপ থেকে কিছুই মেলেনি। কেবল পেনড্রাইভ থেকে যা পাওয়া গিয়েছে, তা পরীক্ষা করা হয়েছে। তাঁর আবেদন, ‘‘এই সত্যটা যেন আদালত মাথায় রাখে।’’ এর পরেই ম্যাথুর কৌঁসুলি অরুণাভ ঘোষ সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ উদ্ধৃত করে মন্তব্য করেন, ‘‘শীর্ষ আদালত জানিয়ে দিয়েছে, অ্যাটর্নি জেনারেল বা অ্যাডভোকেট জেনারেল কোনও রাজনৈতিক দলের এজেন্ট নন!’’

অরুণাভবাবুর মন্তব্যের প্রতিবাদ করেন মামলার সঙ্গে যুক্ত তৃণমূল সাংসদ আইনজীবী কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় এবং গভর্নমেন্ট প্লিডার অভ্রতোষ মজুমদার। তাঁরা বলেন, ‘‘উনি (অরুণাভবাবু) অ্যাডভোকেট জেনারেলকে রাজনৈতিক দলের এজেন্ট বলতে পারেন না।’’

সব পক্ষের সওয়ালের পরে ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি নির্দেশ দেন, ২ নভেম্বর ম্যাথু বা মামলার আবেদনকারীদের হলফনামা দিতে হবে। পরবর্তী শুনানি হবে ৪ নভেম্বর।

গিরীশ গুপ্তকে এ দিনই কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি নিয়োগ করা হয়েছে। নতুন প্রধান বিচারপতি নিয়োগ করা হয়েছে সিকিম, ত্রিপুরা, মণিপুর এবং কেরল হাইকোর্টেও।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন