কোনও নিখোঁজের দেহ গঙ্গায় ভেসে উঠলেই তার ছবি তুলে থানায় পৌঁছে দেওয়ার জন্য উত্তর বন্দর থানার অফিসার ইন-চার্জ তৈরি করেছেন একটি হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ— ‘আননোন ডিসিসড অব নর্থ পোর্ট’। মূলত দ্রুত পরিবারের সন্ধান পেতেই এই পদক্ষেপ। যার ফলও মিলল হাতেনাতে। সেই গ্রুপেই নিখোঁজ ঠাকুরমাকে খুঁজে পেলেন বিএসএফে কর্মরত এক অফিসার। যদিও তত ক্ষণে জলে থাকতে থাকতে দেহে পচন ধরেছে।
পরিবার সূত্রের খবর, গত ১৭ জুন সোদপুরের বাসিন্দা বছর পঁচাশির কামিনী দাস গঙ্গাস্নান করতে খড়দহের একটি ঘাটে গিয়েছিলেন। কিন্তু স্নান করে ফেরেননি তিনি। অনেক জায়গায় খোঁজ করেও কামিনীদেবীর সন্ধান না পেয়ে বরাহনগর থানায় নিখোঁজ ডায়েরি করেন তাঁর নাতি, বিএসএফের ৯৯ ব্যাটালিয়নের এক অফিসার। এ দিকে বুধবার সকালে বরাহনগর কেলভিন ঘাট সংলগ্ন কুঠিঘাট এলাকা থেকে এক মহিলার পচাগলা দেহ উদ্ধার করে উত্তর বন্দর থানার পুলিশ। দেহটি পচে উঠলেও মহিলার ডান হাতে ওড়িয়া ভাষায় একটি উল্কি ছিল। ছবি তোলার সময়ে মৃতের ঠিকানা খুঁজতে উল্কি যে সাহায্য করবে, তা জানতেন পুলিশ অফিসারেরা। তাই উল্কি-সহ ছবিটি তোলা হয়।
এর পরে ছবিটি হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে দিয়েও দেন উত্তর বন্দর থানার অফিসার ইন-চার্জ। পুলিশ জানিয়েছে, ছবি পেয়েই বিএসএফ-র অফিসারকে খবর দেয় বরাহনগর থানার পুলিশ। বিএসএফ-এর ওই অফিসার থানায় এলে তাঁকে হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপের ওই মহিলার পচাগলা ছবিটি দেখানো হয়। দেহটি শনাক্ত করতে সমস্যা হচ্ছিল। তখনই অফিসারের নজরে আসে মহিলার ডান হাতে ওড়িয়ায় লেখা উল্কিটি। সঙ্গে সঙ্গে বুঝে যান দেহটি তাঁর ঠাকুরমা কামিনী দাসের।
উত্তর বন্দর থানা সূত্রের খবর, গঙ্গা তীরবর্তী বেশিরভাগ এলাকা তাদের অন্তর্গত। বেশিরভাগ সময়েই গঙ্গার অন্য পার থেকে তাদের থানা এলাকায় দেহ ভেসে ওঠে। কোনও কোনওটি পচাগলা অবস্থাতেও থাকে। সেই দেহের ছবি তুলে গঙ্গা লাগোয়া কলকাতা এবং অন্য জেলার থানায় আগে ই-মেল করে পাঠিয়ে দিত কলকাতা পুলিশের উত্তর বন্দর থানা। কিন্তু কাজ সামলে সময় মতো ই-মেল খুলে ছবি দেখা সম্ভব হত না। ফলে কেউ নিখোঁজ কিংবা গঙ্গায় ডুবে যাওয়ার খবর পেতে বা দেহ শনাক্ত করতে অনেকটা সময় লাগত। পুলিশ আধিকারিকদের মতে, এই হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ তৈরি হওয়ায় অনুসন্ধানের কাজটা এখন দ্রুত হচ্ছে।