প্রতীকী ছবি।
মশাবাহিত ডেঙ্গি-ম্যালেরিয়ার প্রকোপ প্রশমনে তারই পথ চেয়ে আছে স্বাস্থ্য ভবন। কিন্তু সে কি সেই সমারোহে আসবে? এটাই বড় প্রশ্ন।
সে মানে শীত। বেশ কয়েক বছর ধরে কলকাতা-সহ রাজ্যে স্বমহিমায় পাওয়া যাচ্ছে না শীতকে। তাপমাত্রা তেমন কমছেই না। পারদ পতনের প্রবণতা তেমন তীব্র নয় বলেই শীত বিশেষ দাপট দেখাতে পারে না। তাই শীত এসে রোগ-ব্যাধিকে ঝেঁটিয়ে বিদায় করতে পারবে কি না, নিশ্চিন্ত হতে পারছেন না পতঙ্গবিদেরা।
দাপট মাপতে গেলে যে-প্রশ্নটা বড় হয়ে ওঠে, তা হল, কাকে বলে শীত? আবহবিদেরা বলছেন, ডিসেম্বর-জানুয়ারিতে তাপমাত্রা ১৪ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নীচে নামলে তবেই সেটা শীত। কিন্তু বিশ্ব জুড়ে জলবায়ু পরিবর্তনের ধাক্কায় এখন কলকাতায় ডিসেম্বর-জানুয়ারি মিলিয়ে মোটামুটি দিন কুড়ি তাপমাত্রা থাকে ১৪ ডিগ্রির নীচে। তা-ও টানা নয়। মাঝেমধ্যে তিন-চার দিনের জন্য ১১-১৩ ডিগ্রির আমেজটা থাকে। বাকি সময়টা সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১৬-১৯ ডিগ্রির মধ্যে ওঠানামা করে। এখন আবার ডিসেম্বর-জানুয়ারিতেও আপেক্ষিক আর্দ্রতা ৬০-৬৫ শতাংশের আশেপাশে ঘোরাফেরা করায় উত্তুরে হাওয়া ঠিকমতো খেলতে পারে না।
কলকাতা পুরসভার পতঙ্গ নিয়ন্ত্রণ বিভাগ (ভেক্টর কন্ট্রোল) সমীক্ষা চালিয়ে দেখেছে, ডিসেম্বর-জানুয়ারিতে যে-ক’দিন তাপমাত্রা ১৬ ডিগ্রির নীচে নামে, তখন মশারা ঘরের ভিতরে অন্ধকার কোনও জায়গায় নিশ্চিন্তে থেকে যায়। বদ্ধ ঘরের মধ্যে তাপমাত্রা বাইরের থেকে অন্তত ৩-৪ ডিগ্রি বেশি থাকে। সর্বনিম্ন তাপমাত্রা একটু বাড়লেই ডিম পাড়ার অনুকূল পরিস্থিতি খুঁজতে মশারা বেরিয়ে আসে বাইরে। ভেজা স্যাঁতসেঁতে জায়গায় এডিস ইজিপ্টাই মশার ডিম এক বছর পর্যন্ত বেঁচে থাকে বলে জানাচ্ছেন ওই পতঙ্গবিদ।
স্কুল অব ট্রপিক্যাল মেডিসিনের এক অবসরপ্রাপ্ত পতঙ্গবিদের অভিজ্ঞতা, শীতকালে মশাদের ডিম পাড়ার সব থেকে ভাল জায়গা ছাদে খোলা জলের ট্যাঙ্ক আর বাড়ির শৌচাগারে চৌবাচ্চায় জমানো জল। শীতকালে জলের ব্যবহার কম হয়। তাই জলের ট্যাঙ্কে বা বাড়ির পাত্রে অনেক দিন থেকে যায় জল। সেই জলে ডিম পাড়ে মশা। ‘‘আগে আমরা ট্রপিক্যালেই মশার স্বভাব পরিবর্তন নিয়ে গবেষণা করতাম। এখন সেই সব গবেষণা বন্ধ হয়ে গিয়েছে,’’ আক্ষেপ ওই পতঙ্গবিদের।
২০০৬ থেকে ২০১১ সালের কলকাতার শীতের আবহাওয়া বিশ্লেষণ করে কলকাতা পুরসভার পতঙ্গবিদেরা দেখেছেন, ডিসেম্বর-জানুয়ারিতে কলকাতার গড় তাপমাত্রা ছিল ১৯.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ডিসেম্বরে ম্যালেরিয়া রোগীর সংখ্যা ছিল ২৩১৭, জানুয়ারিতে ৭৪৫ এবং ফেরুয়ারিতে ৯০০। সমীক্ষা রিপোর্টে মুখ্য সমীক্ষক লিখেছেন, ‘দেখা যাচ্ছে, শীতও কলকাতায় ম্যালেরিয়া সংক্রমণ বন্ধ করতে পারছে না। শীতেও রোগটা ছড়াচ্ছে।’
কলকাতা পুরসভার মুখ্য পতঙ্গবিদ দেবাশিস বিশ্বাসের মন্তব্য, শীতকালে মশারা নিষ্ক্রিয় হয়ে যাবে, জীবাণুর সক্রিয়তা কমবে— এ-সব ভেবে হাত-পা গুটিয়ে বসে থাকলে বিপদ বাড়বে বই কমবে না। ‘‘কলকাতা ও সংলগ্ন এলাকায় এখন ম্যালেরিয়া-ডেঙ্গি হচ্ছে ডিসেম্বর-জানুয়ারিতেও। তাই শীতকালেও নিয়ন্ত্রণ করতে হবে মশা,’’ বলছেন দেবাশিসবাবু।
পুরসভার মুখ্য পতঙ্গবিদ জানাচ্ছেন, বর্ষাকালে বা বর্ষার পরে যেমন পাড়ায় পাড়ায় মশা মারার অভিযান হয়, বাড়ি বাড়ি গিয়ে মশার লার্ভা খোঁজা হয়, মনুষকে সচেতন করা হয়, সেই কাজটা করতে হবে সারা বছর।
ডিসেম্বর-জানুয়ারিতেও।