Online Class

অনলাইনের পাঠে বঙ্গে বঞ্চনা কেন

বঙ্গে প্রাথমিক স্তরে অনলাইনে পঠনপাঠনের চেষ্টা বিশেষ হয়নি। কোনও কোনও স্তরে ব্যক্তিগত উদ্যোগে হয়েছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৯ জুন ২০২০ ০৫:৪৩
Share:

প্রতীকী ছবি।

করোনা-কালে রাজ্যে স্কুলপড়ুয়াদের পঠনপাঠন আদৌ কিছু হচ্ছে কি না, সেই প্রশ্ন জোরদার হয়েছে। শিক্ষাবর্ষের অর্ধেক শেষ। এখনও স্পষ্ট নয় স্কুল কবে খুলবে। তা হলে বাংলার ছাত্রছাত্রীদের পঠনপাঠন কি মাসের পর মাস বন্ধই থাকবে?

Advertisement

কেরলে জুনের প্রথম দিনেই স্কুলে পড়াশোনা ফের চালু হয়ে গিয়েছে। তবে কেউই স্কুলে আসছে না। তারা বাড়িতেই চোখ রাখছে টেলিভিশনে এবং অনলাইন ক্লাসে। সেখানে অন্তত ৪৫ লক্ষ ছাত্রছাত্রী সরকার পরিচালিত স্কুলে পড়ে। তাদের মধ্যে মাত্র লাখ দুয়েক পড়ুয়া টেলিভিশন এবং অনলাইনে পঠনপাঠনের সুযোগ থেকে বঞ্চিত। এই ধরনের পড়ুয়াদের চিহ্নিত করে তাদের পঠনপাঠনের ব্যবস্থা করার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে স্কুলশিক্ষকদের। বলা হয়েছে, কোনও পড়ুয়াই যাতে পড়াশোনা থেকে বঞ্চিত না-হয়, শিক্ষকদেরই তা দেখতে হবে।

বাংলার শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ও বলেছিলেন, যেখানে অনলাইন শিক্ষা বা টেলিভিশনে পঠনপাঠনের সুযোগ নেই, সেখানে শিক্ষকেরাই বাড়ি-বাড়ি গিয়ে স্বাস্থ্যবিধি মেনে ছেলেমেয়েদের পড়াবেন। কিন্তু তা বাস্তবায়িত হয়নি বলেই অভিযোগ। পার্থবাবু অবশ্য এখন বলছেন, ‘‘বাড়ি-বাড়ি গিয়ে পড়ানোটা অনলাইনের বিকল্প নয়। কিছু শিক্ষক বাড়ি গিয়ে পড়িয়েছেন। অনেকে হয়তো পড়াননি। আমরা বলেছিলাম, স্বাস্থ্যবিধি মেনে শিক্ষকেরা বাড়ি গিয়ে পড়াতে পারলে ভাল হয়। এটা পুরোপুরি শিক্ষকদের সদিচ্ছার উপরে ছেড়ে দিয়েছি।’’

Advertisement

বঙ্গের স্কুলশিক্ষা দফতরের ওয়েবসাইট অনুযায়ী রাজ্যে প্রাক্‌-প্রাথমিক থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পর্যন্ত স্কুলের সংখ্যা ৯৩,১০৮। সম্প্রতি শিক্ষা দফতরের প্রকাশিত এডুকেশন ফার্স্ট পুস্তিকা অনুযায়ী মাধ্যমিক স্তরে ২০১৮-১৯ সালে পড়ুয়ার সংখ্যা ২৪,৩৩,০২৯। উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে সংখ্যাটা ১৬,২৪,৭৫৮। প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের সভাপতি মানিক ভট্টাচার্য জানান, প্রাথমিকে পড়ুয়ার সংখ্যা অন্তত ৮০ লক্ষ। তা হলে প্রাথমিক থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পর্যন্ত পড়ুয়ার সংখ্যা অন্তত এক কোটি ২০ লক্ষ ৫৭ হাজার ৭৮৭। এডুকেশন ফার্স্টে দেওয়া হিসেবে দেখা যাচ্ছে, ২০১৮-১৯ সাল পর্যন্ত প্রাথমিকে শিক্ষক-শিক্ষিকার সংখ্যা ২,১৪,৮০০। মাধ্যমিক স্তরে ৫৮,৫৭০। উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে সংখ্যাটা ৩০,৩০৬। স্কুলশিক্ষক সংগঠনগুলির বক্তব্য, তারা সমীক্ষা করে দেখেছে, রাজ্যে মাত্র ১০ থেকে ১৫% পড়ুয়া অনলাইন ক্লাসের সুযোগ পেয়েছে।

বঙ্গে প্রাথমিক স্তরে অনলাইনে পঠনপাঠনের চেষ্টা বিশেষ হয়নি। কোনও কোনও স্তরে ব্যক্তিগত উদ্যোগে হয়েছে। মানিকবাবু বলেন, ‘‘প্রাথমিকে অনলাইনে পঠনপাঠনের বিষয়টি এখনও চিন্তাভাবনার পর্যায়ে আসেনি। প্রাথমিকে পাশ-ফেল নেই। জুলাইয়ের পরে যদি স্কুল খুলে যায়, তা হলে পাঠ্যক্রম শেষ করা যাবে। তা না-হলে আবার ভাবতে হবে।’’

প্রশ্ন উঠ‌ছে, মাধ্যমিক বা উচ্চ মাধ্যমিক স্তরেই বা ক’জন পড়ুয়া অনলাইন ক্লাসের সুয়োগ পেয়েছে?

পশ্চিম মেদিনীপুরের কেশপুর ব্লকের প্রত্যন্ত এলাকার ঘোষডিহা হাইস্কুলের ইতিহাসের শিক্ষক কিঙ্কর অধিকারী জানান, নবম ও দশম শ্রেণির মাত্র পাঁচ শতাংশ পড়ুয়া অনলাইনে ইতিহাস ক্লাস করতে পারে। কারণ, বেশির ভাগ পড়ুয়ার বাড়িতে স্মার্টফোন নেই অথবা নেট সংযোগ নেই। অনেক ক্ষেত্রে নেট সংযোগ থাকলেও তা এতই দুর্বল যে, ক্লাস করার সময় বন্ধ হয়ে যায়।

বীরভূমের কীর্ণাহার শিবচন্দ্র হাইস্কুলের ভারপ্রাপ্ত সহকারী প্রধান শিক্ষক দীপক অধিকারী বলেন, ‘‘গত চার মাসে আমাদের স্কুলে কোনও অনলাইন ক্লাসই হয়নি। অনেকেই প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে আসে। সেই সব গ্রামে নেট-সংযোগ নেই। পড়ুয়াদের পরিবারেও নেই মোবাইল ফোন।’’

শহর কলকাতার চিত্রটাও সর্বত্র ভাল নয়। দমদম ক্যান্টনমেন্টের সুভাষনগর হাইস্কুলের সহকারী শিক্ষক সাইদুল ইসলাম বলেন, ‘‘আমার দ্বাদশ শ্রেণির ক্লাসে ১২০ জন পড়ুয়ার মধ্যে অনলাইন ক্লাস করছে মাত্র ১০ জন। অনেকেই বলছে, ‘ফোন নিয়ে বাবা কাজে চলে যাচ্ছে। কী ভাবে ক্লাস করব?’ আর্থিক ভাবে পিছিয়ে পড়া বহু পড়ুয়ার বাড়িতে ফোন নেই।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement
Advertisement