TMC

তৃণমূলের জেলযাত্রী বিধায়কেরা কি আবার বিধানসভায় টিকিট পাবেন? সব ধরন নয় সমান, জল্পনা শাসকদলের অন্দরে

কে টিকিট পাবেন আর কে পাবেন-না, তা চূড়ান্ত করবেন দলের সর্বোচ্চ নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু সম্ভাবনার বিভিন্ন ‘সূচক’ নিয়ে তৃণমূলের অন্দরে আলোচনা, জল্পনা জারি রয়েছে।

Advertisement

আনন্দবাজার ডট কম সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৮ ডিসেম্বর ২০২৫ ১১:০০
Share:

তৃণমূলের জেলযাত্রী বিধায়কেরা কি বিধানসভায় টিকিট পাবেন? গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।

গত ২০২১ সালের ভোটে ‘দ্যাখ-দ্যাখ’ করে জিতেছিলেন সকলেই। কিন্তু শেষ পাঁচ বছরের মধ্যে তৃণমূলের চার বিধায়ককে (মন্ত্রী-সহ) দুর্নীতি মামলায় জেলে যেতে হয়েছে। পার্থ চট্টোপাধ্যায়, মানিক ভট্টাচার্য, জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকেরা (বালু) আপাতত জামিনে মুক্ত। কিন্তু মুর্শিদাবাদের বড়ঞার তৃণমূল বিধায়ক জীবনকৃষ্ণ সাহা দ্বিতীয় বার গ্রেফতার হয়ে জেলে রয়েছেন। অন্যদিকে, বিধানসভা ভোট আগতপ্রায়। এই প্রেক্ষাপটে শাসকদলের অন্দরে কৌতূহল তৈরি হয়েছে, জেলযাত্রী বিধায়কেরা কি আবার ২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে টিকিট পাবেন?

Advertisement

কে টিকিট পাবেন আর কে পাবেন-না, তা চূড়ান্ত করবেন দলের সর্বোচ্চ নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু সম্ভাবনার বিভিন্ন ‘সূচক’ নিয়ে তৃণমূলের অন্দরে আলোচনা এবং জল্পনা শুরু হয়ে গিয়েছে। সেই সূত্রেই দলের প্রথম সারির অনেকে একান্ত আলোচনায় বলছেন, চার জেলযাত্রী নেতার ধরন সমান নয়। ফলে সাদা চোখে মনে হতে পারে যে, ‘দাগি’ নেতাদের টিকিট দেওয়া হবে না। কিন্তু জেলে গিয়েছেন বলেই যে টিকিট পাবেন না, তা-ও একেবারে নিশ্চিত করে এখনই বলে দেওয়া যাচ্ছে না।

ওই চার জনের মধ্যে শুধু বালু গ্রেফতার হয়েছিলেন রেশন দুর্নীতি মামলায়। বাকি প্রত্যেকেই শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতিতে জড়িত থাকার অভিযোগে গ্রেফতার হন। পার্থকে দল সাসপেন্ড করেছিল। এখনও সেই শাস্তি বহাল রয়েছে। তিনি জেল থেকে ফেরার পরে নানাবিধ কথাবার্তা বললেও দল তাঁর সম্পর্কে এখনও পর্যন্ত কোনও আগ্রহ দেখায়নি। কারণ, পার্থ শুধু গ্রেফতার হয়েছিলেন তা-ই নয়। তাঁর সঙ্গে বান্ধবী এবং সেই বান্ধবীর বাড়ি থেকে উদ্ধার হওয়া নগদ টাকার পাহাড়ের ছবিও জুড়ে গিয়েছিল। তাতে যে ধরনের অস্বস্তিতে তৃণমূলকে পড়তে হয়েছিল, তা অন্য কারও ক্ষেত্রে হয়নি। সেই সূত্রেই অনেকের বক্তব্য, পার্থ এঁদের মধ্যে বিরল। তাই তাঁকে টিকিট দিলে সেটা আশ্চর্যজনক হবে।

Advertisement

বালুর ক্ষেত্রে আবার বিষয়টি একেবারেই বিপরীত। সল্টলেকে বালুর বাড়িতে যে দিন কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা ইডি হানা দিয়ে দীর্ঘক্ষণ জেরা চালাচ্ছিল, সেই সময়েই মমতা বলেছিলেন, ‘‘বালুর ডায়াবেটিস আছে। ওর যদি কিছু হয়ে যায়, তা হলে ছাড়ব না।’’ তখন থেকেই ঘটনাপ্রবাহ বলছিল যে, সার্বিক ভাবে দল বালুর পাশে রয়েছে। বস্তুত, জেলে যাওয়ার পরেও মন্ত্রিসভায় রেখে দেওয়া হয়েছিল তাঁকে। পরে নিয়মের জন্য সরাতে হয়। জেল থেকে জামিনে মুক্তি পাওয়ার পরে বালু নীরব থাকলেও ক্রমে রাজনীতিতে সক্রিয় হয়েছেন। সপ্তাহ দেড়েক আগে বনগাঁয় মমতার সভামঞ্চ এবং পদযাত্রার তিনি ছিলেন একেবারে সামনের সারিতেই। ফলে জেলযাত্রীদের মধ্যে বালু টিকিট পেলেও পেতে পারেন বলে অভিমত তৃণমূলের অনেকের। তবে টিকিট পেলেও বালু কোন আসনে টিকিট পাবেন, তা নিয়েও জল্পনা রয়েছে। বালুর ঘনিষ্ঠজনেদের দাবি, তিনি আর হাবড়ায় দাঁড়াতে চান না। কারণ, সেটি আর ‘নিরাপদ’ আসন নয়। গত লোকসভা ভোটের নিরিখে বালুর হাবড়া বিধানসভায় বিজেপি প্রায় ২০ হাজার ভোটে এগিয়ে আছে। যদিও ২০১৯ সালের লোকসভাতেও উত্তর ২৪ পরগনার এই আসনে বিজেপি এগিয়ে ছিল। কিন্তু পরে ২০২১ সালের বিধানসভায় সেই হিসাব উল্টে যায়।

পলাশীপাড়ায় মানিককে আবার টিকিট দেওয়া হবে কি না, তা নিয়েও সংশয়ী অনেকেই। তৃণমূলের অনেকের বক্তব্য, দলের সর্বোচ্চ নেতৃত্ব পার্থের সঙ্গে একই বন্ধনীতে মানিককে রাখেন। জেলযাত্রীদের মধ্যে মানিকই একমাত্র যাঁর গোটা পরিবার (স্ত্রী এবং পুত্র) জেলে গিয়েছিল। অনেকেই বলছেন, জামিন পাওয়ার পরে মানিককে সে ভাবে সক্রিয় রাজনীতিতে দেখা যাচ্ছে না। সে ক্ষেত্রে তাঁর কাছে ইতিমধ্যেই কোনও বার্তা পৌঁছেছে কি না, তা নিয়েও অনেকে জল্পনা শুরু করেছেন।

মুর্শিদাবাদের জীবনকৃষ্ণের টিকিট পাওয়ার ব্যাপারে খুব একটা আশা দেখছেন না অনেকে। যদিও জেলে থেকে বা জামিন পেয়ে ফিরে এসে টিকিট পাওয়ার নজিরও তৃণমূলে রয়েছে। রোজভ্যালি মামলায় জেলে যেতে হয়েছিল সাংসদ সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়কে। ফিরে এসে তিনি শুধু টিকিট পেয়েছিলেন তা-ই নয়। এক বছর আগে পর্যন্তও তিনি ছিলেন লোকসভায় তৃণমূলের দলনেতা। আবার সারদা মামলায় গ্রেফতার হয়ে ২০১৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে জেল থেকেই প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন মদন মিত্র। যদিও তখন তিনি হেরে গিয়েছিলেন।

অতএব, জেলে গেলেই যে তৃণমূল টিকিট দেবে না, এমনটাও নিশ্চিত করে বলা যায় না। তবে ওই চার জনের ক্ষেত্রে তাঁদের ‘সূচক’ নিয়েই আপাতত জল্পনা চলছে। তবে ‘সূচক’ যা-ই থাকুক, নাম চূড়ান্ত করবেন সর্বময় নেত্রী মমতাই। সেটা ২৯৪টি আসনের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement