দুষ্টু ছেলের ভেল্কিতে বসন্তের স্বস্তি থিতু হবে কি না সংশয়

সে দুষ্টু ছেলে। তাই বর্ষা থেকে শীত বা শীত থেকে বসন্ত, কোনও ঋতুতেই তাকে সুবোধ বালকের ভূমিকায় দেখা যাচ্ছে না। ঠিক সময়ে বর্ষার স্বাভাবিক আগমন ছত্রখান করে দিয়েছিল সে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ ০৩:৫৭
Share:

বনগাঁয় শিলাবৃষ্টি। নির্মাল্য প্রামাণিকের তোলা ছবি।

তার দুরন্তপনার খেই পাওয়া দুষ্কর!

Advertisement

সে দুষ্টু ছেলে। তাই বর্ষা থেকে শীত বা শীত থেকে বসন্ত, কোনও ঋতুতেই তাকে সুবোধ বালকের ভূমিকায় দেখা যাচ্ছে না। ঠিক সময়ে বর্ষার স্বাভাবিক আগমন ছত্রখান করে দিয়েছিল সে। পুরো মরসুমে শীতকে মাথা প্রায় তুলতেই দেয়নি। আর বসন্তকে দাবিয়ে রেখে গরমকে চোখ রাঙানোর সুযোগ করে দিয়েছিল সময়ের আগেই। আবার অসময়ে অতিবৃষ্টি নামিয়ে হঠাৎ বসন্তকে ঘুরে দাঁড়ানোর পথ করে দিচ্ছে সে।

পদে পদে ভেল্কি দেখাচ্ছে আবহাওয়া! তার গুগলিতে কুপোকাত প্রবীণ আবহবিদেরাও।

Advertisement

এক সপ্তাহ আগেই তরতরিয়ে দিনের পারদ উঠে গিয়েছিল স্বাভাবিকের থেকে ছ’ডিগ্রি উপরে। দু’দিন যেতে না-যেতেই ঝেঁপে বৃষ্টি নেমেছিল। তা ভেঙে দিয়েছে বসন্তে বর্ষণের ১১০ বছরের রেকর্ড। অকালে গরমের দাপটে ফাল্গুনেই বেজায় কুণ্ঠিত হয়ে পড়েছিল বসন্ত। বৃষ্টির হাত ধরে সে যেন ঘুরে দাঁড়ানোর ইঙ্গিত দিচ্ছে। বসন্তের মেজাজ মালুম হচ্ছে কিছুকিঞ্চিৎ। ফাল্গুনের শুরুতে তারই জন্য হাপিত্যেশ করে বসে ছিল বাঙালি! কিন্তু এমন আবহাওয়া কত দিন মিলবে, আবহবিজ্ঞানীরা সেটা নিশ্চিত করে বলতে পারছেন না।

স্বস্তির স্থায়িত্ব নিয়ে ঘোরতর সংশয় তো আছেই। তার উপরে আবহাওয়ার এই ভেল্কিবাজিতে পোয়া বারো পরজীবীদেরও। জনস্বাস্থ্য-বিজ্ঞানীরা বলছেন, তাপমাত্রার এমন হেরফেরে সক্রিয় হয়ে ওঠে নানা ধরনের ভাইরাস-ব্যাক্টেরিয়া। তাদের তৎপরতায় বাড়ে জ্বর, সর্দি, কাশির মতো রোগের প্রকোপ। চিকিৎসকদের পরামর্শ, এই অস্বাভাবিক পরিস্থিতির সঙ্গে যুঝতে হলে সাবধানে থাকতে হবে। গরম লাগলেও চট করে ঠান্ডা জল খাওয়া চলবে না। জোরে ফ্যান বা এসি চালিয়ে না-ঘুমোনোই ভাল।

আবহাওয়া এ বার এমন তুর্কিনাচন নাচাচ্ছে কেন?

আবহবিদদের মতে, এর পিছনে রয়েছে প্রশান্ত মহাসাগরের জলের তাপমাত্রা বৃদ্ধি বা ‘এল নিনো’ পরিস্থিতি। ওই মহাসাগরে জলের তাপমাত্রা স্বাভাবিকের থেকে বাড়লেই তার প্রভাব পড়ে আবহাওয়ায়। কোথাও লাগামছাড়া শীত ও বরফ পড়ে। কোথাও আবার গরমের দাপট দুঃসহ হয়ে ওঠে। অনেক অঞ্চলে আকাশভাঙা বর্ষণ জনজীবন বিপর্যস্ত করে দেয়। আবার বৃষ্টি-ঘাটতিতে ধুঁকতে থাকে বহু এলাকা।

প্রশান্ত মহাসাগরের ভৌগোলিক অবস্থান এমনই যে, সেখানকার আবহাওয়া বিগড়ে গেলে অনেক দেশই তার ধাক্কা এড়াতে পারে না। দিল্লির মৌসম ভবনের বিজ্ঞানীদের মতে, এল নিনো পরিস্থিতি তৈরি হলেই আবহাওয়ার স্বাভাবিক চরিত্র বিগড়ে যায়। মুশক্ল হল, সেই বিগড়ে যাওয়ারও কোনও নির্দিষ্ট ধারাপাত নেই। ফলে এই পরিস্থিতি তৈরি হলে আবহাওয়ার মতিগতি আঁচ করাটাই কঠিন হয়ে পড়ে। ‘‘এ বছরে তো প্রশান্ত মহাসাগরের জলের তাপমাত্রা বৃদ্ধি রেকর্ড গড়ে ফেলেছে। সেই জন্যই এল নিনো-র দাপট আরও বেশি করে মালুম হচ্ছে,’’ বলছেন মৌসম ভবনের এক আবহবিজ্ঞানী।

তা হলে শীতকে নেপথ্যেই রেখে যে-গরম একটানা লাল চোখ দেখিয়ে যাচ্ছিল, তার দাপুটে রথ হঠাৎ হোঁচট খেল কেন? অকালে অতিবৃষ্টির পরে কেনই বা ফিরে এল বসন্ত-মেজাজ?

হুট করে গরমের চোখ বেশি মাত্রায় লাল হয়ে যাওয়ার মধ্যেই এর রহস্য খুঁজছেন আবহবিদেরা। তাঁদের একাংশের ব্যাখ্যা, হঠাৎ তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ায় একাধিক ঘূর্ণাবর্ত তৈরি হয়েছিল। তার প্রভাবে নামল প্রবল বৃষ্টি। সেই বর্ষণই ঠেলে নামিয়ে দিল তাপমাত্রাকে। কিন্তু গরম মাথা নিচু করে থাকার বান্দাই নয়। বসন্তের মতো একটা পরিস্থিতি তৈরি হলেও ফের গুটি গুটি বাড়তে চলেছে তাপমাত্রা। অকালবৃষ্টি ও পারদের উপরে ওঠার মাঝমধ্যিখানে এই সাময়িক স্বস্তি মিলছে বলে মনে করছেন আবহবিজ্ঞানীদের অনেকে।

‘সাময়িক স্বস্তি’র মেয়াদ কত দিন?

কেন্দ্রীয় আবহাওয়া দফতরের ডেপুটি ডিরেক্টর জেনারেল গোকুলচন্দ্র দেবনাথ রবিবার জানান, তাপমাত্রা এখনই যে ফের লাফিয়ে বেড়ে যাবে, তেমন সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না। কোথাও কোথাও হাল্কা বৃষ্টিও হতে পারে। ফলে দিন কয়েক আবহাওয়া এমনই স্বস্তিদায়ক থাকবে বলে আশ্বাস দিচ্ছেন তিনি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন