Sagardighi By Election

দুর্নীতি-কাণ্ডের ছায়া কি পড়বে, নজর উপনির্বাচনে

দুর্নীতির অভিযোগে রাজ্যের শাসক দলের বেশ কয়েক জন নেতা জেলে। নানা অভিযোগে বিদ্ধ তৃণমূলের কাছে তুরুপের তাস তাদের প্রার্থী দেবাশিস বন্দ্যোপাধ্যায়।

Advertisement

বিমান হাজরা

সাগরদিঘি শেষ আপডেট: ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ০৬:২৩
Share:

নজরে সাগরদিঘির বিধানসভা উপনির্বাচন। প্রতীকী ছবি।

পৌনে দু’বছর আগে রাজ্যে বিধানসভা ভোটের পরে যত উপনির্বাচন হয়েছে, তাতে জয়ী হয়েছে শাসক তৃণমূল কংগ্রেসই। কিন্তু শিক্ষায় নিয়োগ-দুর্নীতির বিস্তর অভিযোগ এবং আবাস যোজনার মতো প্রকল্পে অনিয়ম ঘিরে ক্ষোভ সামনে আসার পরে ফলাফলের সেই ধারায় কি কোনও পরিবর্তন আসতে পারে? এই প্রশ্নের উত্তর পেতেই এ বার সব নজর সাগরদিঘির বিধানসভা উপনির্বাচনের দিকে।

Advertisement

তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়, প্রদেশ কংগ্রেসের সভাপতি অধীর চৌধুরী, রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী, সকলেই নির্বাচনী প্রচারকে তুঙ্গে নিয়ে গিয়েছেন। তাঁদের দাবি, সাগরদিঘির উপনির্বাচন থেকেই মিলবে আসন্ন পঞ্চায়েত ও লোকসভা নির্বাচনে কার পাল্লা ভারী, সেই ইঙ্গিত। এই উপনির্বাচন তৃণমূলের কাছে যেমন পর পর তিন বার জেতা আসন দখলে রাখতে মর্যাদার প্রশ্ন, ঠিক তেমনই বিরোধী কংগ্রেস, সিপিএম ও বিজেপির কাছে ঘুরে দাঁড়ানোর লড়াই।

দুর্নীতির অভিযোগে রাজ্যের শাসক দলের বেশ কয়েক জন নেতা জেলে। নানা অভিযোগে বিদ্ধ তৃণমূলের কাছে তুরুপের তাস তাদের প্রার্থী দেবাশিস বন্দ্যোপাধ্যায়। বিজেপির প্রার্থী দিলীপ সাহা ও কংগ্রেসের বাইরন বিশ্বাস, দু’জনেই কোটিপতি এবং সাগরদিঘিতে ‘বহিরাগত’। সেখানে তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আত্মীয় দেবাশিস এই কেন্দ্রেরই বাসিন্দা। থাকেন মাটির বাড়িতে। তাঁর হয়ে প্রচারে মালদহ, বীরভূম থেকেও তৃণমূল নেতারা এসে দু’সপ্তাহ ধরে সাগরদিঘিতে রয়েছেন।

Advertisement

তিন বার জেতা আসন ধরে রাখা তৃণমূলের কাছে মর্যাদার লড়াই। যাঁর মৃত্যুতে এই উপনির্বাচন, সেই সুব্রত সাহার স্মরণ-সভা উপলক্ষে সাগরদিঘি ঘুরে গিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা। প্রচারে এসে অভিষেক বিরোধী দলনেতা শুভেন্দুর সঙ্গে কংগ্রেসের প্রার্থী বাইরনের (তখন তিনি তৃণমূলে) পুরনো ছবি দেখিয়ে বিজেপি ও কংগ্রেসের ‘আঁতাঁতে’র অভিযোগ তুলেছেন। তাঁর বক্তব্য, এই ‘অশুভ আঁতাঁত’ ভেঙে বেরোনোটাই উপনির্বাচনের প্রধান লক্ষ্য। সাগরদিঘিতে অবশ্য আসন সমঝোতা হয়েছে বাম ও কংগ্রেসের। গত বিধানসভা নির্বাচনে বাম-কংগ্রেস জোট করেও তৃতীয় স্থানে নেমে গিয়েছিল। মেরুকরণের সেই নির্বাচনে ২৪% ভোট পেয়ে দ্বিতীয় স্থানে উঠে এসেছিল বিজেপি। এ বার শাসক তৃণমূল এবং বিরোধী বাম-কংগ্রেসের নজর ৬৪% সংখ্যালঘু অধ্যুষিত এলাকার দিকে। আর বিজেপিও সংখ্যালঘু ভোট ভাগের অঙ্কে তাদের জন্য আশার সম্ভাবনা দেখছে। ভোটের ঠিক মুখে কংগ্রেস প্রার্থী বাইরনের বিরুদ্ধে যৌন হেনস্থার অভিযোগ সামনে রেখে তৃণমূলের আসরে নামা নতুন মাত্রা যোগ করেছে।

তৃণমূল যেমন বাইরন এবং কংগ্রেসকে কোণঠাসা করতে মরিয়া, উল্টো দিকে বসে নেই বিরোধীরাও। অধীর নিজের জেলায় দলের প্রার্থীর হয়ে প্রচারে থাকবেন, এটাই স্বাভাবিক। গত দু’সপ্তাহে সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম থেকে শুরু করে যুব নেত্রী মীনাক্ষী মুখোপাধ্যায় কংগ্রেসের প্রার্থীর হয়ে প্রচারে নেমেছেন। স্থানীয় কংগ্রেস নেতার গ্রেফতার হলে তাঁর বাড়িতেও গিয়েছেন সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক। যে মুর্শিদাবাদে বাম ও কংগ্রেসের সম্পর্কে বরাবরের কাঁটা ছিল, সেই জেলারই সাগরদিঘিতে বিধানসভার পরে দু’দল প্রথম একসঙ্গে লড়ছে। এবং বাম সমর্থিত কংগ্রেস প্রার্থীর হয়ে সমঝোতা ‘মসৃণ’ রাখতে ত্রুটি রাখছেন না দু’দলের নেতৃত্বই। শেষ সপ্তাহের চার দিন মাটি কামড়ে পড়ে থেকেছেন শুভেন্দুও। তিনি সংখ্যালঘু এলাকাতেও দাপিয়ে বেড়িয়েছেন।

এখানে ২০১১ সালে তৃণমূল প্রার্থী সুব্রতের প্রাপ্ত ভোট ছিল ৫৪ হাজার ৭০৮। সে বার কংগ্রেসের সঙ্গে রাজ্যে তৃণমূলের জোট হলেও সাগরদিঘিতে নির্দল প্রার্থী দাঁড় করান অধীর। পরে ২০১৬ সালে তৃণমূলের বিক্ষুব্ধ প্রার্থী থাকায় চতুর্মুখী প্রতিদ্বন্দ্বিতায় শাসক দলের ভোট কমে দাঁড়ায় ৪৪ হাজার ৮১৭-তে। কিন্তু ২০২১ সালে তা বেড়ে হয় ৯৫ হাজার ১৮৯। সংখ্যালঘু মাফুজা খাতুনকে প্রার্থী করে বিজেপি ভোট পায় ৪৪ হাজার। সুব্রতবাবু ৫০.৯৫% ভোট পেয়ে জয়ী হন।

কিন্তু এই উপনির্বাচনের চাবিকাঠি সম্ভবত পরিযায়ী শ্রমিকদের হাতেই। গত ২০২১ সালে ভোট পড়েছিল ৭৮%। কিন্তু এই মুহূর্তে অন্তত ৩০ হাজার পরিযায়ী শ্রমিক ভিন্ রাজ্যে। ভোট দিতে এক দিনের জন্য কেন্দ্রে আসতে নারাজ এঁদের অনেকেই। তাই প্রদত্ত ভোট কমবে। আর তাতেই উদ্বেগ বেড়েছে সব দলেরই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন