মোবাইলের অবাধ প্রবেশে রাশ টেনে জেলে ওয়্যারলেস

নজরদারি আয়োজনে ঘাটতি নেই। তবু যে কোন জাদুবলে জেলে বন্দিদের হাতে মোবাইল পৌঁছে যাচ্ছে, তার কূলকিনারা করা যাচ্ছে না। তাই এ বার লৌহকপাটের মধ্যে মোবাইলের ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করে যোগাযোগ রাখার জন্য ওয়্যারলেসের বন্দোবস্ত হচ্ছে। পুলিশের মতো। ঠিক হয়েছে, জেলে সুপারেরা ছাড়া আর কোনও কর্মী-অফিসার মোবাইল ব্যবহার করবেন না। বন্দিরা তো নয়ই।

Advertisement

সোমনাথ চক্রবর্তী

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৫ মে ২০১৫ ০৩:৪৬
Share:

নজরদারি আয়োজনে ঘাটতি নেই। তবু যে কোন জাদুবলে জেলে বন্দিদের হাতে মোবাইল পৌঁছে যাচ্ছে, তার কূলকিনারা করা যাচ্ছে না। তাই এ বার লৌহকপাটের মধ্যে মোবাইলের ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করে যোগাযোগ রাখার জন্য ওয়্যারলেসের বন্দোবস্ত হচ্ছে। পুলিশের মতো। ঠিক হয়েছে, জেলে সুপারেরা ছাড়া আর কোনও কর্মী-অফিসার মোবাইল ব্যবহার করবেন না। বন্দিরা তো নয়ই।

Advertisement

প্রাথমিক ভাবে ঠিক হয়েছে, মোবাইলে লাগাম টেনে যোগাযোগ রাখার জন্য প্রথম পর্যায়ে ওয়্যারলেস চালু হবে আলিপুর, প্রেসিডেন্সি, দমদম এবং আলিপুর মহিলা জেলে। কারা দফতরের এক মুখপাত্র জানান, পরবর্তী পর্যায়ে হুগলি, হাওড়া, বনগাঁ, বসিরহাট, কল্যাণী, ডায়মন্ড হারবার জেলেও এই ব্যবস্থা চালু হবে। ইতিমধ্যেই কারা দফতরের প্রধান কার্যালয় জেসপ বিল্ডিংয়ের উপরে ডিশ অ্যান্টেনা বসানো হয়েছে। সব মিলিয়ে খরচ ধরা হয়েছে ৫৩ লক্ষ টাকা। তিনি জানান, মূলত বন্দিদের মোবাইল ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করতে ইতিমধ্যেই জেলে জ্যামার বসানোর কাজ শুরু হয়েছে। এ বার বসানো হচ্ছে ওয়্যারলেস সেট।

কেন এই পরিকল্পনা? কারা দফতরের এক কর্তা জানান, কয়েক বছর ধরে জেলের মধ্যে বন্দিদের হাতে দেদার মোবাইল ফোন পৌঁছে যাচ্ছে। তা নিয়ে তদন্তও হয়েছে বারবার। জেলে বসেই অনেক দুষ্কৃতী বিভিন্ন এলাকায় তোলাবাজি চালিয়ে যাচ্ছে। কোনও কোনও বন্দি দেশে-বিদেশে শাগরেদদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছে বলেও অভিযোগ। আঙুল উঠছে জেলের এক শ্রেণির কর্মীর দিকে। অভিযোগ, ওই সব কর্মীই মোবাইল ফোন পৌঁছে দিচ্ছেন বন্দিদের হাতে। এই নিয়ে তদন্ত করেও অবশ্য বিশেষ ফল হয়নি। শুধু ফোন পৌঁছে দেওয়া নয়, কর্মীদের মাধ্যমে বাইরের জগতের সঙ্গে বন্দিদের যোগাযোগেরও প্রমাণ মিলছে। এই প্রেক্ষিতে কারা দফতরের এডিজি অধীর শর্মা সম্প্রতি
লিখিত নির্দেশ দিয়ে জানিয়ে দিয়েছেন, শুধু সুপারেরাই জেলের ভিতরে মোবাইল ফোন ব্যবহার করতে পারবেন। বন্দি তো দূরের কথা, কোনও কর্মী-অফিসারও মোবাইল নিয়ে জেল-চত্বরে ঢুকতে পারবেন না।

Advertisement

মোবাইলের বিকল্প ও পরিপূরক হিসেবে ভাবা হয়েছে ওয়্যারলেসের কথা। কারা দফতরের অফিসারদের বক্তব্য, জেলের নিরাপত্তা ও অন্যান্য জরুরি দরকারে প্রতিনিয়ত জেল-কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কারাকর্তাদের যোগাযোগ রেখে চলতে হয়। কিন্তু জেলের ভিতর থেকে অনেক সময় মোবাইল ফোনে কথা বলা যায় না। ওয়্যারলেস সেট থাকলে সেই অসুবিধা হওয়ার কথা নয়। এই ব্যবস্থায় পুলিশের মতো জেলের অফিসারেরাও নিজেদের মধ্যে কথা বলতে পারবেন। কোন জেলে কখন কী হচ্ছে, সঙ্গে সঙ্গে তা জানতে পারবেন মন্ত্রী ও কারাকর্তারা। নিরাপত্তার দিক থেকে এটা জরুরি।

কারা দফতরের সচিব শিবাজী ঘোষ এবং এডিজি শর্মা জানান, প্রথমে কলকাতার তিনটি কেন্দ্রীয় সংশোধনাগার এবং আলিপুর মহিলা জেলে ওয়্যারলেস ব্যবস্থা বসানোর কাজ চলছে। এক মাসের মধ্যে হয়ে যাবে। কারা দফতরের অন্য এক কর্তা জানান, আধুনিকীকরণ প্রকল্পে ৫৩ লক্ষ টাকা দিয়েছে কেন্দ্র। তা দিয়ে ১৭১টি ওয়্যারলেস সেট কেনা হয়েছে। জেলের অফিসার ছাড়াও কারা সেট ব্যবহার করতে পারবেন— নির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়েছে তা-ও। ‘‘এর পরে দ্বিতীয় পর্বের কাজ শুরু হবে। তৃতীয় পর্বে ওয়্যারলেস চালু করা হবে উত্তরবঙ্গে। এর ফলে জেলের যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত হবে,’’ বললেন ওই কর্তা।

প্রশ্ন উঠেছে, এত করেও জেলের অব্যবস্থা বন্ধ করা যাবে তো? বন্দিদের সঙ্গে বাইরের য়োগাযোগ আদৌ বন্ধ হবে কি? হবেই, এমন জবাব পাওয়া যাচ্ছে না কারাকর্তাদের কাছ থেকে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
আরও পড়ুন