বাঁশদ্রোণী এলাকার আবাসনের একটি ফ্ল্যাট থেকে সিআইডি উদ্ধার করল বহু টাকা। নিজস্ব চিত্র।
যাঁর নামে ফ্ল্যাট, সেই সৈকত গুপ্ত পশ্চিম মেদিনীপুরের প্রাক্তন পুলিশ সুপার ভারতী ঘোষের স্বামীর ঘনিষ্ঠ বন্ধু বলে সিআইডি-র দাবি। নেতাজিনগরের একটি আবাসনে সেই ফ্ল্যাটে বুধবার তল্লাশি চালিয়ে নগদ দু’কোটি টাকা উদ্ধার করা হয়েছে বলে জানান গোয়েন্দারা।
সিআইডি জানায়, ওই ফ্ল্যাটের চাবি থাকত ভারতীর স্বামী এমএভি রাজুর কাছে। ভারতীর দেহরক্ষী সুজিত মণ্ডল মাঝেমধ্যেই ওই ফ্ল্যাটে যেতেন। এর আগে মাদুরদহের আবাসনের একটি ফ্ল্যাট থেকেও নগদ টাকা ও সোনা বাজেয়াপ্ত করা হয়। সুজিত সেই ফ্ল্যাটেও প্রচুর টাকা আর গয়না রেখেছিলেন বলে সিআইডি-কর্তাদের দাবি। তাঁরা জানান, এ দিনের তল্লাশি দাসপুরের সোনা লুঠ ও প্রতারণার মামলার সূত্রেই।
সিআইডি সূত্রে জানা গিয়েছে, এ দিন সকালে ভারতীর স্বামী রাজুকে ভবানী ভবনে ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। রাজুর কাছ থেকে নেতাজিনগরের ওই আবাসনের তিন নম্বর ফ্ল্যাটের চাবি নিয়ে তাঁর উপস্থিতিতেই সেখানে তল্লাশি চালান গোয়েন্দারা। পুরো তল্লাশি পর্বেরই ভিডিও রেকর্ডিং করা হয়েছে।
চন্দন মাজি নামে দাসপুরের এক ব্যবসায়ীর অভিযোগ, নোটবন্দির সময়ে বেশি টাকা ফেরত দেওয়ার লোভ দেখিয়ে তাঁর কাছ থেকে ৩৭৫ গ্রাম সোনা নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু পরে তাঁকে কোনও টাকা দেওয়া হয়নি। তিনি দাসপুর থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। সেই মামলায় ইতিমধ্যেই এক সোনা ব্যবসায়ী এবং কয়েক জন পুলিশ অফিসারকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ভারতী এবং তাঁর দেহরক্ষীর নামে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে বলে জানান তদন্তকারীরা।
এ দিনের তল্লাশির ব্যাপারে প্রশ্ন করা হলে ভারতী ফোনে বলেন, ‘‘ওই ফ্ল্যাটের মালিককে মঙ্গলবার ভবানী ভবনে নিয়ে গিয়ে ভয় দেখিয়ে চাবি আদায় করেছিল সিআইডি। আমার স্বামীর সঙ্গে ওই ব্যক্তির কোনও সম্পর্ক নেই। রাতে সিআইডি-ই সেখানে টাকা রেখেছিল। জেরার সময়ে আমার স্বামীর পকেটে জোর করে সেই চাবি গুঁজে দেওয়া হয়। তার পরে তল্লাশির নামে নাটক করেছেন তদন্তকারীরা।’’ প্রাক্তন ওই পুলিশ সুপারের প্রশ্ন, রাজু কি এতই বোকা যে, টাকা লুকিয়ে রাখা হয়েছে, এমন একটি ফ্ল্যাটের চাবি পকেটে নিয়ে ভবানী ভবনে হাজিরা দেবে?
ভারতীর অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন সিআইডি-কর্তারা। তবে রাজুর আইনজীবী পিনাকী ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘সকালে আমার মক্কেলের বাড়ি গিয়ে তলবি চিঠি ধরায় সিআইডি। তার পরে কোনও সময় না-দিয়ে কার্যত জোর করেই তাঁকে ভবানী ভবনে নিয়ে যাওয়া হয়।’’
দাসপুর মামলায় ধৃত পুলিশ অফিসার চিত্ত পাল ও শুভঙ্কর দে-কে এ দিন ঘাটাল মহকুমা আদালতে তোলা হয়। বিচারক তাঁদের ১৪ দিন জেল-হাজতে রাখার নির্দেশ দেন।