Mohammad Bazar

বীরভূমে ভিন্‌জাতে প্রেম, সাজা ‘গণধর্ষণ’

মহিলার অভিযোগ, রাত প্রায় আড়াইটে নাগাদ ক্লাবের সদস্য পাঁচ যুবক পাশের জঙ্গলে নিয়ে গিয়ে তাঁকে গণধর্ষণ করে বলে অভিযোগ।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা 

মহম্মদবাজার শেষ আপডেট: ২৪ অগস্ট ২০২০ ০৫:০৬
Share:

সিউড়ি আদালতে অভিযুক্তেরা। রবিবার। নিজস্ব চিত্র

ভিন‌্ জাতের যুবকের সঙ্গে সম্পর্কের শাস্তি হিসেবে স্বামীহারা আদিবাসী যুবতীকে গণধর্ষণ এবং সালিশি সভা বসিয়ে জরিমানা চাওয়ার অভিযোগ উঠল। মঙ্গলবার সন্ধে থেকে বুধবার সকাল পর্যন্ত এত কিছু ঘটে গেলেও অভিযোগ সামনে আসে শনিবার বিকেলে। বীরভূমের মহম্মদবাজারের ওই ঘটনায় গ্রেফতার হয়েছে গ্রামেরই মোড়ল-সহ তিন জন।

Advertisement

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, দুই সন্তানের মা, বছর ত্রিশের ওই যুবতী মহম্মদবাজারের চরিচা পঞ্চায়েত এলাকার বাসিন্দা। বেশ কয়েক বছর আগে তাঁর স্বামী মারা যান। এলাকারই এক যুবকের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক গড়ে ওঠে। তবে ওই যুবক ভিন্‌জাতের হওয়ায় তা ভাল চোখে দেখেননি গ্রামবাসীদের একাংশ।

পুলিশের কাছে লিখিত অভিযোগে নির্যাতিতা জানিয়েছেন, মঙ্গলবার, ১৮ অগস্ট গ্রামে পুজো ছিল। সে দিন সন্ধ্যায় শেওড়াকুড়ি মোড় থেকে তিনি ওই যুবকের সঙ্গে গ্রামে ফিরছিলেন। তখনই গ্রামের বেশ কিছু লোক তাঁদের ক্লাবঘরে নিয়ে গিয়ে মারধর করে। রাত প্রায় আড়াইটে নাগাদ ক্লাবের সদস্য পাঁচ যুবক পাশের জঙ্গলে নিয়ে গিয়ে তাঁকে গণধর্ষণ করে বলে অভিযোগ। পরদিন সকালে দু’জনে মুক্তি পান। দু’দিন আতঙ্কে থাকার পরে আদিবাসী গাঁওতা নেতা রবীন সরেনের উদ্যোগে পুলিশে অভিযোগ করেন নির্যাতিতা। রবীন বলেন, ‘‘খুবই ভয়ে আছেন নির্যাতিতা। এই অন্যায় মেনে নেওয়া যায় না। তাই ওঁর পাশে দাঁড়িয়েছি।’’

Advertisement

ঘটনার তীব্র নিন্দা করেছেন আদিবাসী সংগঠন ভারত জাকাত মাঝি পারগানা মহলের সম্পাদক নিত্যানন্দ হেমব্রমও। নিত্যানন্দের মতে, ‘‘ওখানে আমাদের সংগঠন দুর্বল। আদিবাসীদের অন্য সংগঠনেরও তেমন অস্তিত্ব নেই। ওখানে সমাজের অবক্ষয়, ও শৃঙ্খলাবোধের অভাবের জন্য আমি চিন্তিত।’’ তবে এর পিছনে পাথর খাদান মাফিয়া এবং কাঁচা টাকার ভূমিকা রয়েছে বলে তাঁর দাবি।

লিখিত অভিযোগে সালিশি সভার কথা উল্লেখ না করলেও গ্রাম সূত্রে জানা গিয়েছে, গণধর্ষণের পরে বুধবার সকালে সালিশি বসিয়ে ফয়সালা করার সিদ্ধান্ত নেন গ্রামেরই কিছু বাসিন্দা। সেখানেই নির্যাতিতাকে ১০ হাজার ও তাঁর সঙ্গীকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। আদিবাসী গাঁওতা নেতা সুনীল সরেন বলেন, ‘‘ওই মহিলাকে ক্লাবে আটকে রাখা এবং সালিশি সভা বসানোর কথা জেনেছি। ওঁর সঙ্গে কী ধরনের অত্যাচার হয়েছে, বিশদে খবর নিচ্ছি।’’

২০১৩ সালের ২০ জানুয়ারি লাভপুরের সুবলপুরেও ভিন্জাতে সম্পর্কে রাখার ‘অপরাধে’ আদিবাসী তরুণী ও তাঁর সঙ্গীকে রাতভর গাছে বেঁধে মারধর করা হয়েছিল। পরদিন সালিশি বসিয়ে গ্রামের মাঝি-হাড়াম মেয়েটিকে নিয়ে ‘ফুর্তি’ করার নিদান দেয়। গণধর্ষণের সেই মামলায় মোট ১৩ জন তার জন্য সাজা পায়।

মহম্মদবাজারের ঘটনায় সালিশির কথা মানলেও অভিযুক্তদের পরিবারের দাবি, গণধর্ষণের ঘটনা ঘটেনি। কিন্তু শনিবার সন্ধ্যায় সিউড়ি জেলা হাসপাতালে নির্যাতিতার ডাক্তারি পরীক্ষায় ধর্ষণের প্রমাণ মিলেছে বলে পুলিশ সূত্রের খবর। জেলা পুলিশ সুপার শ্যাম সিংহ বলেন, ‘‘নির্যাতিতা পাঁচ যুবকের বিরুদ্ধে অভিযোগ এনেছেন। জলপা হাঁসদা ও তাম্বর মরান্ডি নামে দু’জন ইতিমধ্যেই ধরা পড়েছে। রবিবার দুপুরে গ্রেফতার করা হয়েছে গ্রামের মোড়লকেও।’’ মামলার এপিপি শুভাশিস চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘পুলিশ ধৃত দু’জনের ১০ দিনের হেফাজত চেয়েছিল। ৭ দিন মঞ্জুর করেছেন বিচারক। এ দিনই নির্যাতিতার গোপন জবানবন্দি নেওয়া হয়েছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন