Childbirth

Childbirth: ৩ ঘণ্টা প্লাবন ঠেলে সন্তানের জন্মদান

মঙ্গলবার রাতে আধ ঘণ্টার পথ তিন ঘণ্টায় পেরিয়ে বরদা এলাকার একটি নার্সিংহোমে কন্যাসন্তানের জন্ম দিলেন জাহিরা

Advertisement

নুরুল আবসার

উদয়নারায়ণপুর শেষ আপডেট: ০৫ অগস্ট ২০২১ ০৬:০৪
Share:

উদয়নারায়ণপুরের এক নার্সিংহোমে মা ও মেয়ে। —নিজস্ব চিত্র।

লড়লেন বটে জাহিরা বেগম।

জল থইথই চরাচর। তার উপর রাত। এই সময়ে প্রসব যন্ত্রণা। কোথায়, কী ভাবে যাবেন ভেবে কূল পাচ্ছিলেন না উদয়নারায়ণপুরের ওই যুবতী। স্বামীও প্লাবনে আটকে পড়েছেন। সন্তানকে পৃথিবীর আলো দেখাতেই হবে, শুধু সে কথাই ভেবে গিয়েছেন। নৌকা, মোটরবাইক, ভ্যানে সহ্য করেছেন যন্ত্রণা।

Advertisement

শেষমেশ, মঙ্গলবার রাতে আধ ঘণ্টার পথ তিন ঘণ্টায় পেরিয়ে বরদা এলাকার একটি নার্সিংহোমে কন্যাসন্তানের জন্ম দিলেন তিনি। জাহিরা বলেন, ‘‘নার্সিংহোমে আসার সময়ে মনে হচ্ছিল আর বাঁচব না। সন্তানের মুখের দিকে তাকিয়ে ভাবছি, দুনিয়াটা কত সুন্দর!’’

ব্লক প্রশাসন ও স্থানীয় সূত্রে খবর, বিএ দ্বিতীয় বর্ষে পড়তে পড়তেই বছর পঁচিশের জাহিরার বিয়ে হয় আমতা-২ ব্লকের ঝামটিয়া গ্রামে। অন্তঃসত্ত্বা হওয়ার পর থেকে জাহিরা রয়েছেন উদয়নারায়ণপুরে বিধিচন্দ্রপুর গ্রামে, বাপের বাড়িতে। এই গ্রামটি তলিয়ে গিয়েছে প্লাবনে। জাহিরা বাবা-মায়ের সঙ্গে আশ্রয় নেন বাড়ির ছাদে। মঙ্গলবার সন্ধে ৭টা নাগাদ জাহিরার প্রসব যন্ত্রণা শুরু হয়। বাবা ফোন করেন বিধায়ক সমীর পাঁজাকে।

Advertisement

বিধায়কের নির্দেশে উদয়নারায়ণপুর পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য সুখেন্দু চন্দ্র ও চিরঞ্জিৎ মজুমদার নৌকা নিয়ে পৌঁছে যান জাহিরার বাড়িতে। ছাদ থেকে পাঁজাকোলা করে তাঁকে নামিয়ে এনে নৌকায় তোলা হয়। প্রায় এক ঘণ্টা নৌকা টানার পরে বিধিচন্দ্রপুর হিন্দু প্রাথমিক স্কুলের পাশে পাওয়া যায় পাকা সড়ক। সেটি তখনও ডোবেনি। সেখানে সুখেন্দুবাবুরা ব্যবস্থা করে রেখেছিলেন তিনটি মোটরবাইকের। একটিতে জাহিরাকে তোলা হয়। অন্য দু’টি মোটরবাইকে ওঠেন জাহিরার বাবা-মা। কিছুটা রাস্তা আসার পরে ঘোষপাড়ার কাছে দেখা যায় জলে ঢেউ খেলছে। সেখানেও নৌকার ব্যবস্থা রেখেছিলেন সুখেন্দুবাবুরা। সেই নৌকায় তোলা হয় জাহিরাকে। যন্ত্রণা তখন অনেক বেড়েছে। প্রায় ৪৫ মিনিট পরে বরদার কাছে নৌকা ঠেকে।

সুখেন্দুবাবুরা বরদার একটি নার্সিংহোমেই জাহিরাকে নিয়ে যাচ্ছিলেন। আগে খবর দেওয়ায় নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষ ভ্যান পাঠিয়ে দেন। তাতে তোলা হয় জাহিরাকে। হাঁটু জল পেরিয়ে এগোতে থাকে ভ্যান। মিনিট পনেরো পরে তাঁরা পৌঁছন নার্সিংহোমে। ওই নার্সিংহোমেরও একতলার অনেকটা ডুবে যাওয়ায় জাহিরাকে পাঁজাকোলা করে নিয়ে যাওয়া হয় দোতলায়। তখন বেজে গিয়েছে রাত পৌনে ১১টা। নিস্তেজ হয়ে পড়েছিলেন জাহিরা। চিকিৎসক সুকান্ত সিংহের নেতৃত্বে অন্য চিকিৎসকেরা প্রস্তুত ছিলেন। মিনিট পনেরোর মধ্যে কন্যাসন্তানের জন্ম দেন জাহিরা।

বিধায়ক বলেন, ‘‘বন্যার বিরুদ্ধে লড়াইকে অনেকটাই সার্থক করলেন জাহিরা। নতুন প্রাণের আগমন বুঝিয়ে দিল, এখনও সব শেষ হয়ে যায়নি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন