ক্ষমতা হাতে পেলেও তা প্রয়োগ কী ভাবে করতে হয়, জানতেন না। সকলের সামনে দাঁড়িয়ে কোনও নীতি নির্ধারণ বিষয়ে কথা বলার আত্মবিশ্বাসটাই ছিল না। কুড়ি বছরের বেশি হয়ে গেল, পঞ্চায়েতে মহিলাদের জন্য আসন সংরক্ষণ করার। কিন্তু তার পরেও মহিলা ইস্যুগুলি অবহেলিতই থেকে গিয়েছে।
এখনও অনেকাংশেই মহিলা সদস্যরা নিজেদের অধিকার আদায়ের ব্যাপারে গুটিয়ে থাকেন। পদ তাঁদের, অথচ বেশিরভাগ ক্ষেত্রে পিছন থেকে তাঁদের পরিচালনা করেন পরিবারের কোনও পুরুষ সদস্য।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পশ্চিমবঙ্গে একাধিক গ্রাম পঞ্চায়েতে শুরু হয়েছে এক নতুন প্রকল্প। মহিলা পঞ্চায়েত সদস্যদের রাজনৈতিক ক্ষমতায়নে সাহায্য করতে এক বছর মেয়াদের ওই প্রকল্প শুরু হয়েছে ওবামা সরকারের দেওয়া টাকায়। উদ্যোক্তা কলকাতার মার্কিন কনস্যুলেট জেনারেল। সাড়ে সাত মাস প্রকল্প চলার পর তা সরেজমিনে দেখতে এসেছেন আমেরিকার ‘ইন্টারন্যাশন্যাল রিপাবলিকান ইনস্টিটিউট’ এর গ্লোবাল ইনিশিয়েটিভ অধিকর্তা তথা সিনিয়ার জেন্ডার অ্যাডভাইজার মিশেল বেকারিং।
মিশেল জানিয়েছেন, এ ক’মাসেই মহিলারা যে ভাবে উদ্যোগী হয়ে সদ্যসমাপ্ত বিধানসভা নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন, যে ভাবে গ্রাম সংসদে মহিলা কেন্দ্রিক সমস্যাগুলোর উল্লেখ করে সমাধানের চেষ্টা করছেন তা দেখে তিনি মুগ্ধ। শনিবার দুপুরে কলকাতার আমেরিকান সেন্টারে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথোপকথনে উচ্ছ্বসিত মনে হল তাঁকে। সঙ্গে ছিলেন প্রকল্পের দায়িত্বপ্রাপ্ত স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার প্রধান অনিন্দিতা মজুমদারও।
মিশেল জানাচ্ছিলেন, বাজেট সামলে সংসার চালান বলেই মেয়েরা জন্ম-প্রশাসক। তার উপর নিকাশি, স্বাস্থ্য, লেখাপড়ার মতো বিষয়গুলি নিয়ে সবচেয়ে বেশি অসুবিধায় পড়তে হয় মেয়েদের। ফলে পঞ্চায়েতে দায়িত্ব পেয়ে মেয়েরা যে ভাবে এই সমস্যার সমাধান করতে পারবেন তা অন্য কারও পারার কথা নয়। শুধু প্রয়োজন তাঁদের একটু সচেতনতা, পরামর্শ, নিজের ক্ষমতা চিনতে শেখা। এই প্রকল্পে সেটাই করা হচ্ছে। বীরভূম, দক্ষিণ ২৪ পরগনা, পুরুলিয়া এবং আলিপুরদুয়ারের মোট ১৫টি পঞ্চায়েতকে এর জন্য বেছে নেওয়া হয়েছে। এই পঞ্চায়েতগুলিতে মহিলা সদস্যের সংখ্যা বেশি। অনিন্দিতা জানাচ্ছিলেন, প্রকল্প শুরুর পরে এঁরা অনেকেই জীবনে প্রথমবার সভায় দাঁড়িয়ে নিজেদের অধিকারের কথা বলেছেন। অনেক পঞ্চায়েতে ক্রেশ শুরু হয়েছে। অনেকে আবার যৌন হেনস্তা মোকাবিলায় কমিটি গড়েছেন।